প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২২:০৭
ভোটারদের মাঝে নেই নির্বাচনী আমেজ
মৈশাদী ইউপি নির্বাচনে চাচা ভাতিজাসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন
সারাদেশে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এই ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সদর উপজেলা ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নেও এই দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মৈশাদী ইউনিয়নে সাধারণ ভোটারদের মাঝে নির্বাচনের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না থাকলেও প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারপ্রান্তে । চায়ের ষ্টলে নির্বাচনের তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও কয়েক জনের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে চাচা ভাতিজার মধ্যেই লড়াই হবে।
|আরো খবর
ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গুটি কয়েজন বাদে প্রায় সকল প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ বলেও নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছেন। মৈশাদী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং সকলেরই মনোনয়পত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের পছন্দমতো প্রতীকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলীয় প্রতীকে কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন তাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মৈশাদী ইউনিয়নে ইতোমধ্যে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন ও যাদের নাম বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে তারা হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী মানিক, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর সালেহ মোহাম্মদ অলি পাটোয়ারী, ইসলামী আন্দোলন হাতপাখায় নির্বাচন করছেন মোঃ আজহারুল ইসলাম।
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরজমিনে কথা হয় বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মানিকের সাথে। বিগত নির্বাচনে তিনি বিএনপি'র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনের পক্ষে না, বর্তমান ইউপি নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এই ইউনিয়নে যেহেতু আমি এখনো চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছি, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা আমার প্রতি রয়েছে, সে দিক থেকে দল থেকে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও, জনগনের আশা-আকাঙ্খার কারণে আমি মনোনয়নপত্র উত্তোলন করি ও জমা দেই এবং ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন আমার মনোনয়ন পত্রটি বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে গেছেন, ইউনিয়ন পরিষদকে ডিজিটালইজেশন করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করেছেন, ই-লাইব্রেরী ও স্টুডেন্ট কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছেন, সনাক ও টিআইবির মাধ্যমে উন্মুক্ত বাজেট ঘোষনা ও বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্য তিনি ২০১৬ জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবেও পুরস্কৃত হয়েছেন বলে তিনি জানান। করোনাকালীন সময়েও তিনি জনগনের পাশে ছিলেন বলে জানান, সরকারের ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও করেছেন অনেক সহযোগিতা, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে। এছাড়াও তিনি করোনাকালীন সময় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যে সততা স্টোর নামেও তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে বলে তিনি জানান। গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে, তার ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের ৯০ ভাগ কার্যাদি সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান। দল থেকে নির্বাচন সরে দাড়ানোর এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে, নির্বাচন বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও তার মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী। নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ভাতিজা মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান এটা আমার চতুর্থ নির্বাচন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ইউনিয়নে আমরা ৪ জন প্রার্থী। একজনও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী না। বিগত প্রায় প্রতি নির্বাচনে হানাহানি হয়েছে। এবার আমি বিজয়ী না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমি নির্বাচিত হলে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত ইউনিয়ন গড়বো। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ৮০ ভাগ উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে হয়েছে। ২০ ভাগ উন্নয়ন মুলক কাজ বাকী আছে। আমার লক্ষ্য হবে গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির আওতায় এনে তাদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এছাড়াও এ ইউনিয়নে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান ও উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করার মাধ্যমে ইউনিয়নকে আধুনিকায়ন করা। কেননা আমি মনে করি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষিত সমাজ ও আধুনিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা সম্ভব।
এদিকে বিএনপির আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ মনোনয়ন পত্র উত্তোলন ও জমা দিয়েছেন এবং তার মনোনয়ন পত্রটি নির্বাচন কমিশনার বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ছাড়া নির্বাচনের মাঠে তার তেমন কোনো নির্বাচনী কার্যাবলী নেই বলে ভোটাররা জানান। এই এ বিষয়ে তার সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে চাঁদপুর কন্ঠের প্রতিনিধিকে এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন আজহারুল ইসলাম। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নে এই প্রার্থীর তেমন কোন প্রচারন বা গনসংযোগ নেই বললেই চলে। অনেক ভোটারদের কাছে তিনি পরিচিতও নন। সাংগঠনিক ভাবেও এই দল থেকে ইউনিয়নে তেমন সক্রিয় নয় বলেও জানা যায়। এই প্রার্থীর সাথে মুঠোফোনে আলাকালে তিনি জানান, সাধারন মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, মানুষদের ইসলামের পথে চলার ও ইসলামী শাষন কায়েমের জন্য তিনি এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে প্রশাসন ও সকল প্রার্থীর কাছে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ আগামী ১১ নভেম্বর একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জোর দাবি জানান। ভোটারা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এজন্যও সকল প্রার্থী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।