প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১১
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন আইনে মামলা, আসামী ৪ পুলিশ সদস্য

ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী ও ডাকাতি মামলার আসামী মো. খোকন (৩৯)। ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ (শনিবার) ফরিদগঞ্জ থানায় এই মামলা দায়ের করেন তিনি।
এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় গত ২৮ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন।
মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একটি ডাকাতি মামলা (জি আর নং-৩১৫/২৫)-এ গত ১৬ ডিসেম্বর তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের প্রেক্ষিতে এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখিত খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের সময় আসামী পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
আসামির গ্রেফতারের সময় গ্রেফতারের স্মারকপত্রে আসামী সুস্থ ও পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। একই সঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একইসাথে আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর ওই হাসপাতাল থেকে আসামীকে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, আসামির উভয় পায়ের উরুর ওপর একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে। যদিও চিকিৎসা সনদে উল্লেখ করা হয়, আসামির বর্ণনামতে এই জখম প্রায় ৪ দিন আগের।
এদিকে আদালতের মামলা দায়েরের নির্দেশের পর গত ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে ১৫ দিনের তদন্তের সময় প্রার্থনা করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সময় বিবেচনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়েরের পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন।
আদালতের আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ফলে আইনানুযায়ি এ ধরনের অপরাধে মামলা দায়ের ব্যতীত তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে।
মামলার বাদী মো. খোকন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি সরদার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে। বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় ৪ মামলার আসামী খোকন। সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর ডাকাতির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ৭ জনকে আসামী করে মামলা করেন উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মিজি বাড়ির রহিম বাদশার স্ত্রী পেয়ারা বেগম। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন আসামী খোকন।
এই বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান বলেন, আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।








