প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ১৯:৪৪
অসময়ে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন, আতঙ্কিত হাজারো পরিবার

চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মৈশাদীস্থ ৫ নং ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া নদীর মৈশাদী গ্রামের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অসময়ে এ ভাঙ্গনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে তিনটি বাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি হাইস্কুল খেলার মাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাজারো বসতবাড়ি।
|আরো খবর
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনের ফলে কয়েকটি কবরস্থান, শতাধিক বসতবাড়ি, শতাধিক একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর বন্যা শুরুর আগেই ডাকাতিয়া নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় জোয়ার আসলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এ অঞ্চলটি--ধারণা করছে নদী পাড়ের মানুষ। এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষগুলো।
নদীভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিস্তীর্ণ জনপদ সহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।২৬ জুন ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা জানান, শাহতলী ও মৈশাদীর সীমান্তবর্তী মৈশাদী জমাদার বাড়ির নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনের কারণে রাস্তা, কবরস্থান, বিদ্যুতের পিলার এবং শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।দক্ষিণ মৈশাদী গ্রামের দক্ষিণ পাশের এলাকায় ভাঙ্গনের তীব্রতা এতোই বেশি যে, রাতদিন সমান তালে বাড়িঘর ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত কয়েক বছরে অন্তত তিন কিলোমিটারের বেশি জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে, কিন্তু কোনো সরকারই স্থায়ীভাবে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়নি।
মৈশাদী জমাদার বাড়ির বাসিন্দা মনির হোসেন মনা বলেন, গত তিন বছর পূর্বে নদীটি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিলো। গত বছর হঠাৎ বন্যায় আমাদের গাছের বাগান সহ বাড়িঘর নদীভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে আমরা কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছিলাম। এখন ভাঙ্গন বাদে যেটুকু জমি আছে সেটুকুর আশায় বুক বেঁধে আছি ।
বেপারী বাড়ির বাসিন্দা কৃষক বাচ্চু বেপারী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই ডাকাতিয়া নদী প্রতিবছরই একবার করে ভাঙ্গে । নদী ভাঙ্গনের ফলে চারবার বাড়ি সরাতে হয়েছে। শেষ বয়সে এসে বাড়ি সরানোর সামর্থ্য নেই। সরকারিভাবে যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে কয়েকদিন পরে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। কিছুদিন পর পর মিডিয়ায় আমাদের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরার কারণে সরকারি কিছু লোক এসে দেখি মাপজোখ দেয়, পরে আবার চলে যায়। আমাদের আর নদী ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখি না। একই গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী জাহানারা বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ছেলে সন্তান পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে প্রতি রাতে আমাদের নির্ঘুম কাটাতে হয়। নদী ভাঙ্গনের ফলে আমাদের বসতভিটা যেন আর হারাতে না হয় জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি তার।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে নির্বাচনের প্রাক্কালে ডা. দীপু মনি আমাদের এই ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করার সময় ওয়াদা করেছিলেন, দ্রুতই ভাঙ্গন এলাকা প্রতিরোধে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন, পরে কাজের কাজ আর কিছুই হয়নি। তিনি আরও জানান, বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, মসজিদ, কবরস্থান , পাকা রাস্তা সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত জিও ব্যাগ বা ব্লক ফেলে আমাদের গ্রামটাকে যেন রক্ষা করুন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, মৈশাদী এলাকায় নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
ডাকাতিয়া নদীর চলমান ভাঙ্গন বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, মৈশাদী, নানীপুরসহ ডাকাতিয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙ্গন প্রবণতা রয়েছে। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্যে ডিটেল ফিজিবিলিটি স্টাডি করে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি পাস হলেই ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ