সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০১

কৃষকের প্রয়োজন পানি, পাউবোর চলছে সংস্কার!

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা পাচ্ছে না চাষীরা।। উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

মাহবুব আলম লাভলু॥
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা পাচ্ছে না চাষীরা।।  উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
মেঘনা- ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বীজতলা ও প্রস্তুত বোরো চাষের জমি।

মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে চলতি মৌসুমের বোরো আবাদের উপযোগী সময়ে (সঠিক সময়ে) সেচ সুবিধা পাচ্ছে না চাষীরা। বিগত বছরগুলোতে ১ জানুয়ারি পানি সেচের উদ্বোধন করা হলেও এবার এখন পর্যন্ত সেচ সুবিধা পায়নি বোরো চাষীরা। সেচের পানি না পাওয়ায় কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। ধানের চারার বয়স হওয়ার কারণে উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

অধিক কৃষি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৭৯-৮০ অর্থ বছরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে এর কাজ শেষ হয়। সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার মাধ্যমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনই ছিলো মূল লক্ষ্য। কিন্তু পানি সেচ ও পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে না হওয়ায় এখনও প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯শ' ৮৪ হেক্টর। আর উৎপাদন ৪৩ হাজার ১শ' ৪৬ মে. টন। বীজতলা করার উপযুক্ত সময় ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হবে। ৪০ দিনের চেয়ে চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই উৎপাদন কমতে থাকবে। কৃষকরা এখন পর্যন্ত সেচ সুবিধা না পাওয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। তাই উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। কয়েকটি জায়গায় সেচ ক্যানেলে বাঁধ দিয়ে চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজ।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি চালুর শুরু থেকেই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর মধ্যে সেচ সুবিধা নিয়ে চলতে থাকে দ্বন্দ্ব। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো মৌসুমের নির্ধারিত সময়ে পানি সেচ সুবিধা চায়। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বোরো চাষের নির্ধারিত সময়ে পানি সেচ সুবিধা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করায়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এমন--কৃষকের প্রয়োজন পানি, আর পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের উন্নয়ন কাজের সংস্কার চলছে। এটা পাউবোর এক রকম কৃষকের সাথে দুশমনি বলা যায়। নির্ধারিত সময়ে পানি সেচ না দেয়ায় বীজতলার বয়স বাড়তে থাকে এবং ক্রমে কমতে থাকে ধানের উৎপাদন।

এদিকে মেঘনা- ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের চলতি উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সচেতন মহলে। একনেকে পাস হওয়া টাকায় কী কাজ হচ্ছে এ নিয়ে নানামুখি কথা চলছে।

হানিরপাড়ের কৃষক লাল মিয়া জানান, এখনও পানি না পাওয়ায় আমরা চারা লাগাতে পারি নাই। কবে যে পানি পামু জানি না। চারার বয়স বেশি হইয়া লাল হইয়া যায়গা। দেরিতে লাগাইলে পরে তাড়াতাড়ি ধানের ছড়া আইয়া পড়বে। আমরা বেশি ধান পামু না। আমাগো খরচ আইবো না।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অনেক জায়গায় সরিষার আবাদ হয়েছে। এ কারণে পানি দিতে একটু দেরি হচ্ছে। পাউবো কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ক্যানেলে পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করবো।

বেলতলি এলাকার ব্যবসায়ী ও কৃষক মনসুর আহমেদ জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে আজকে কৃষকরা সঠিক সময়ে ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। পানি দেয়ার সময় হলেই তারা সংস্কার কাজ শুরু করে অনিয়ম করার স্বার্থে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে সেচ ক্যানেলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। এদিকে ধানে চারার তলার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। আমার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা দ্রুত প্রকল্পের পানি সেচের উদ্বোধন করবে। উদ্বোধনের পর যাতে পানি কৃষক পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম সাহেদ জানান, ২০ জানুয়ারি পানি সেচের উদ্বোধন করা হবে। কৃষকের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা হবে। নতুন এসেছি, কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়