বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কড়াইল বৌ-বাজার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট
  •   বাকৃবিতে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ
  •   সেনাবাহিনীর ভুয়া ক্যাপ্টেনসহ আটক ২
  •   মতলবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাদ দিয়ে তৃণমূলের অংশগ্রহণে কমিটি গঠনের দাবিতে বিএনপির গণমিছিল।
  •   এসোসিয়েশন অব মডেল ইনস্টিটিউশন্স চাঁদপুর-এর বৃত্তি পরীক্ষা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১২

হুমকির মুখে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও স্থানীয় ইরিগেশন

হাজীগঞ্জে সংস্কারের অভাবে মিঠানীয়া খাল বিলুপ্ত হচ্ছে

হাজীগঞ্জে সংস্কারের অভাবে মিঠানীয়া খাল বিলুপ্ত হচ্ছে
হাজীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মিঠানীয়া খালের নাব্যতা হারানোর একাংশ।
কামরুজ্জামান টুটুল

ডাকাতিয়া নদী থেকে যে ক’টি খালের উৎপত্তি হয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে তার মধ্যে অন্যতম মিঠানীয়া খাল। সংস্কার, দখল ও দূষণের কারণে তা আজ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় পর্যায়ের ইরিগেশনসহ হাজীগঞ্জ পৌরসভার যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে, সেই প্লান্টের মূল পানি ডাকাতিয়া নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে আসে এই মিঠানীয়া খাল ধরে। এমনকি স্থানীয়রা উন্মুক্ত জলাশয়ের মিঠা পানির মাছের বড় একটা অংশ পেয়ে থাকতো এই খাল থেকে, যা আজ স্মৃতি।

সরজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার খাটরা পেপসি ঘাটের পাশ ধরে ডাকাতিয়া নদী থেকে মিঠানীয়া খালের উৎপত্তি। সেখান থেকে শুরু হয়ে পৌর মকিমাবাদ ধেররা বিলওয়াই ধরে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের নিচ দিয়ে হাজীগঞ্জের উত্তরে চলে গেছে খালটি। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ অত্র অঞ্চলের ইরিগেশনের পানি সরবরাহ, মিঠা পানির মাছের চাহিদার একটা অংশ এসে থাকতো এ খালের পানিপ্রবাহ থেকে।

স্থানীয়রা জানান, মিঠানীয়া খালটির নাব্যতা না থাকার কারণে মকিমাবাদ, খাটরা-বিলওয়াই, কাজিরগাঁও, দোয়ালিয়া ও মাতৈনসহ বেশ কিছু স্কীমের আওতাধীন মাঠের অধিকাংশ স্থানে ফসলের জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে। খালটি খনন করা হলে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদসহ হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রায় ১১টি স্কীমের কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবেন এবং বাড়বে ফসলের উৎপাদন।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানীয়া ব্রিজের নিচে এবং খালের দুই পাশে (উত্তর ও দক্ষিণ) পাশে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষজনের ফেলা আবর্জনা এবং খালে কচুরিপানা ও নেপিয়ার ঘাসের কারণে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া খালের ওপর দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া বালির ড্রেজার পাইপের লিকেজ দিয়ে দিনের পর দিন বালু পড়ার কারণে খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গেছে। মিঠানীয়া সেতু নির্মাণের সময় খালের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ এবং সেতু চালুর পর বিকল্প সড়কটি মাটি সরিয়ে না নেওয়ার কারণে সেচের পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতীতে খালটির সবচে' বড় ভূমিকা ছিল ফসল উৎপাদনে। খালের পানি ব্যবহার করে পৌরসভাধীন ৩নং, ৪নং ও ৫নং ওয়ার্ডের খাটরা বিলওয়াই ও মকিমাবাদ গ্রাম, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া, মাতৈন, দোয়ালিয়া, মৈশাইদ, খাকবাড়িয়া, বাড্ডা, বাউড়া, শাহপুর, সুবিদপুর, মাড়ামুড়া ও কালচোঁ গ্রামের একাংশ প্রায় কয়েক হাজার কৃষক ইরিগেশন প্রকল্প চালানোসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের সুবিধা ভোগ করতেন। কিন্তু দিনে দিনে খালটি দূষণ ও দখলের কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি প্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সবই আজ বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, নাব্যতা হারানো খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কাছে বহুবার বলা হলেও আশাহত হয়ে ফিরতে হয়েছে উপকারভোগীদেরকে।

খালের পানি ব্যবহার করে ইরিগেশন প্রকল্প চালু রাখা স্ক্রীম ম্যানেজারদের উদ্যোগে এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মিঠানীয়া ব্রিজের দুই পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করে সেচের পানি প্রবাহে ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু এ বছর আবারও খালের মুখটি ভরাট হয়ে গেছে।

খাটরা-বিলওয়াই মাঠের স্কীম ম্যানেজার মো. আবুল হাসেম বলেন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ কতজনের কাছে কৃষকরা গিয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। সামনে হবে কিনা তা-ও জানি না।

কৃষক হোসেন মিজি, আব্দুল মালেক, এমদাদুল হক, মো. ইমান হোসেন ও মো. নজরুল ইসলামসহ ক’জন জানান, এই অঞ্চলের জমিগুলো এক ফসলি জমি। এ ফসল দিয়ে তাদের পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ ও গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। অথচ মিঠানীয়া খাল ও স্কীমগুলোর আওতাধীন ড্রেনের সংস্কার না করার কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী সেচের পানি পাওযা যাচ্ছে না ।

দোয়ালিয়া উজ্জ্বল মাঠ স্কীমের ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, মিঠানীয়া খালটি দ্রুত খননসহ স্কীমের ড্রেন পাকাকরণ প্রয়োজন। তা না হলে কয়েক শতাধিক একর জমি অনাবাদী হবে। পাশাপাশি বর্ষাকালে এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিবে।

হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী মো. মাহবুব রশিদ জানান, খাল ধরে পাইপের মাধ্যমে ডাকাতিয়া নদী থেকে আমরা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানি এনে থাকি। খালটি সংস্কার হলে নদীর সতেজ পানিতে স্থানীয় সবাই উপকৃত হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, খালটি খননের বিষয়ে বিএডিসির ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা হয়েছে। স্থায়ী কিছু করা যায় কিনা এ বিষয়ে আমি ইউএনও মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

উপজেলা বিএডিসির কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদ জানান, খালের পানি প্রবাহে স্থায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে এবং আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল জানান, খালটি খননসহ টেকসই ব্যবস্থাগ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়