প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৮
হাজীগঞ্জ আবারো রণক্ষেত্র।। আহত ৫০
হাজীগঞ্জ বাজার আবারো রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে যৌথবাহিনী লাঠি চার্জ করেছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকেলে বিএনপির একাংশ ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহতরা সবাই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিলেও একজনকে কুমিল্লায় রেফার করা হয়েছে। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
|আরো খবর
জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজীগঞ্জ বাজারে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মিছিল বের করে উপজেলা ও পৌর ছাত্রদল। দুপুর থেকেই হাজীগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত মিছিলে তারা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইঞ্জি. মমিনুল হকের শ্লোগান দেয়। অপরদিকে বেলা আড়াইটার দিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল বের করে বিএনপির একাংশ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের সমর্থনে এই বিজয় মিছিলের আয়োজন করে তার সমর্থিতরা। এ সময় দুই পক্ষের এই মিছিলকে কেন্দ্র করে বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় নেতা-কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ইটপাটকেল ও কাচের বোতল ছুড়ে মারে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও পথচারীসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। প্রায় দুঘন্টাব্যাপী থেমে থেমে ও দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ চৌরাস্তার পশ্চিম দিকে এবং হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারস্থ হাজীগঞ্জ সেতুর পূর্ব দিকে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।ব্যবসায়ীসহ বাজারে আসা লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন খান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে ইঞ্জি. মমিনুল হকের লোকজন আমাদের বিজয় মিছিলে হামলা করে। এতে আমাদের ১৫/২০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মিজানুর রহমান নামের একজনকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আকতার হোসেন দুলাল বলেন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোনো গ্রুপ নেই। গত ৫ আগস্টের পূর্বে যারা মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করেছে, এখনো তারাই মিছিল-মিটিং করছে। সুতরাং এখানে সবাই এক, দলে কোনো বিভক্তি নেই। যারা বিশৃঙ্খলা করে, তারা বিএনপির কেউ নয়। এদিকে হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ (মঙ্গলবার) হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল করে ছাত্রদল। এই মিছিলটি গতকাল (সোমবার) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওই দিন (সোমবার) আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম (বিজয় র্যালি) থাকার কারণে ছাত্রদল মিছিলটি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আজকে যখন তারা (ছাত্রদল) মিছিল করে, তখন কিছু দুষ্কৃতকারী, যারা চাঁদাবাজি ও স্ট্যান্ড দখল করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে, তারাই হাজীগঞ্জ বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করে। তিনি জানান, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোনো গ্রুপ নেই। গত ১৭ বছর শত নির্যাতন, মামলা হামলা সহ্য করে ইঞ্জি. মমিনুল হকের নেতৃত্বে রাজপথে নেতা-কর্মীরা ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব ইমাম হোসেন বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা রাজপথে মিছিল-মিটিং করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু আজকে যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজীগঞ্জে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো, তারা এতোদিন কোথায় ছিলো? দলীয় ব্যানারে যারা শান্ত হাজীগঞ্জকে অশান্ত করেছে এবং তারা যে ভাষায় কথা বলেছে, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।দলীয় ব্যানারে এবং দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যে ইঞ্জি. মমিনুল হকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এখানে আমরা কেউ ছিলাম না এবং বিষয়টি আমরা জানিও না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদল বিজয় মিছিল করে। সেই মিছিলে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে হামলা করে আপনারা আমাদের ১৫/২০ জন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসান বলেন, হাসপাতালে ৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য একজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে।