বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৭

ময়লাখোলার ধোঁয়ায় বাসস্ট্যান্ড এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ

আবু সাঈদ কাউসার
ময়লাখোলার ধোঁয়ায় বাসস্ট্যান্ড এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ

চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যন্ড সংলগ্ন স্বর্ণখোলা এলাকায় অবস্থিত ময়লাখোলার ময়লার গন্ধ ও ময়লা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় জীবন অতিষ্ঠ এলাকাবাসীর। এর ফলে স্থানীয় পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের প্রভাব পড়ছে।

জানা যায়, প্রতিদিন চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা এনে চাঁদপুর পৌরসভার নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্বর্ণখোলা এলাকায় ফেলা হচ্ছে। বিগত ২৫-৩০ বছর ধরে এ কাজ চলছে। ময়লা ফেলার পর পৌরসভার নির্ধারিত লোক এসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আর এ আগুনের ধোঁয়া আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্বর্ণখোলা এলাকার পাশাপাশি নিকটবর্তী বিষ্ণুদী রোড, মাদ্রাসা রোড, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার, মাঝিবাড়ি রোডসহ পুরো এলাকা ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বিশেষ করে শীতের সময়টা তা বিশেষভাবে উপলব্ধি করা যায়।

এ বিষয়ে কথা হয় নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের এক সরকারি কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, গত দেড়-দু বছর ধরে এই কোয়ার্টারে অবস্থান করছি। সন্ধ্যার পরেই এলাকার ঘরে থাকতে পারি না। কোয়ার্টারের পিছনের দিক থেকে আসা ময়লার গন্ধ ও ধোঁয়ায় বাসার প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছেলেমেয়েরা ঠিকমত পড়তে বসতে পারে না।

কথা হয় বিষ্ণুদী এলাকার বাসিন্দা বাবুর সাথে। তিনি বলেন, আমরা চাঁদপুর শহরের জিরো পয়েন্টে বসবাস করে যেন নরকে বসবাস করছি। স্বর্ণখোলার ময়লার গন্ধ ও আগুনে পোড়ার ধোঁয়ায় জীবন অতিষ্ঠ। আমাদের এলাকার এমন কোনো ঘরবাড়ির মানুষ নেই, যে না এই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছে। বাপ-দাদার করা বাড়ি বলে থেকে যাচ্ছি, নতুবা কবেই বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যেতাম।

কথা হয় স্বর্ণ খোলার অটো গাড়ির গ্যারেজ আসলাম বেপারীর সাথে। তিনি বলেন, এই এলাকায় বসবাস করছি প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে। সন্ধ্যার পরপরই এলাকাটি যেন নরকে পরিণত হয়। একদিকে যেমন ময়লার গন্ধ, অন্যদিকে এই ময়লা পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে এই এলাকার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।

কথা হয় চাঁদপুর-কুমিল্লা বাস সার্ভিসের সন্ধ্যার দিকে শাহরাস্তি থেকে আসা এক প্যাসেঞ্জারের সাথে। তিনি বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে এই শহরে আসা-যাওয়া করি। সন্ধ্যার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই শহরের এই অংশটিকে নরক মনে হয়। বিশেষ করে শীতের সময়টা, কুয়াশার পাশাপাশি ময়লাখোলার ধোঁয়ায় ও গন্ধে গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়।

কথা হয় চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, আজ হতে ২৫-৩০ বছর আগে চাঁদপুর শহরের বাসা-বাড়ির ময়লাগুলো ফেলার জন্যে স্বর্ণখোলার ওই স্থানটি নির্ধারণ করা হয়। তখন ওই এলাকায় মানুষ ছিল না বললেই চলে। এখন এই স্বর্ণখোলা এলাকার আশেপাশে বসবাস করছে শত-সহস্র মানুষ। কিন্তু ২৫-৩০ বছর পরও শহরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ময়লা ফেলা ও ময়লা পোড়ানোর স্থানটি পরিবর্তন করা হয়নি। যা মেনে নেওয়া যায় না।

এ নিয়ে কথা হয় চাঁদপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, ময়লার গন্ধ, পোড়ানো এবং ধোঁয়া স্থানীয় পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এই কার্যক্রমগুলো সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে এবং তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।ময়লা পোড়ানোর ফলে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়, যা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা প্রভাবিত হয় আশপাশের মানুষ এবং পরিবেশও।

তিনি বলেন, ময়লা ও ধোঁয়ার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্থানীয় সরকার ও অফিসিয়াল কর্তৃপক্ষের উচিত এই ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনসাধারণকে সচেতন করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়