প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৭
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব খাটিয়ে বহু অপকর্মের অভিযোগ
চাঁদা না পেয়ে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে দুই পুলিশসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা
চাঁদা না পেয়ে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে দুই পুলিশসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী ঢাকা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী জামিল হোসাইন বাদী হয়ে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- সি.আর. ৭৯৪/২৪।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী এবং বিবাদী সকলেরই স্থায়ী ঠিকানা ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে, তবে তাদের কর্মক্ষেত্র ঢাকায়। বিবাদী ৭জনের মধ্যে ৫জন মুক্তিযোদ্ধা বাদশা পাঠান পরিবারের সদস্য এবং পতিত সরকারের সমর্থক ও সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল এবং মোহাম্মদ আলী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আছেন। পেশাগত আনুকূল্য আর আওয়ামী লীগের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিগত সরকারের সময়ে এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মামলা, হামলাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তারা। ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী (দোকান নং-১০৯) জামিল হোসেনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। জামিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক হওয়ায় এ সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বিবাদীরা। গত ২৭ জুলাই নিউ মার্কেটের দোকান থেকে জামিল হোসেনকে অপহরণের চেষ্টা চালান তারা এবং পুনরায় চাঁদা দাবি করেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। ভীতসন্ত্রস্ত জামিল তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৩ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নং-১৪১। জিডির বিষয়টি জানাজানি হলে ২২ অক্টোবর বাদীর মোহাম্মদপুরস্থ বাসার নিচে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিবাদীরা। বাদী বিষয়টি স্বীকার করলে পুনরায় তাকে অপহরণ চেষ্টা চালিয়ে বিবাদীরা ব্যর্থ হয়। ২৭ অক্টোবর ভুক্তভোগী জামিল হোসেন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৩৬৪/৩৮৫/৫০৬(ওও)/১০৯ ধারায় অপরাধের বিষয় উল্লেখ করা হয়। আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অভিযুক্ত ৭ আসামীর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, মোহাম্মদ আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন ও নাহিদুল ইসলাম একই পরিবারের সদস্য। অপর আসামীরা হলেন একই গ্রামের মোঃ আলম ও মোঃ মহসিন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জামিল হোসেন বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় সমর্থক ছিলাম। ২৭ জুলাই প্রথমে তারা দোকানে এসে আমাকে বেদম মারধর করে এবং দোকান থেকে অপহরণের চেষ্টা করে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণ পর তাদের সাথে পুলিশের পোশাকধারী কয়েকজন লোক যুক্ত হয়। তারাসহ মারধর করে আমাকে দোকান থেকে নিয়ে যায়। আন্দোলনের সমর্থক হওয়ায় নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। একটা উল্লেখযোগ্য টাকা দেয়ার পর সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যাই। সরকার পতনের পর এ ঘটনায় আমি জিডি করি। জিডির বিষয়টি জানতে পেরে তারা পুনরায় আমাকে অপহরণ চেষ্টা চালায়। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি তথা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া ও আমাকে হয়রানির ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। মামলার সাক্ষী ইব্রাহীম মিয়াজীও অপহরণ চেষ্টার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক ছিলেন। বিগত সময়ে বাল্য বিয়ে না পড়ানোয় ইমামকে মারধর, মসজিদ কমিটি নিয়ে আলেমদের পেটানো, জমি দখল, সরকারি প্রকল্প আত্মসাৎ, মামলা বাণিজ্য, সালিস বাণিজ্যসহ এলাকার মানুষজন তাদের দ্বারা ব্যাপক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরই জের ধরে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোস্তাফিজুর রহমান দুলালদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, বিষয়টি ডাহা মিথ্যা। তাদের সাথে আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ চলে আসছে। তবে তিনি ৫ আগস্ট তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি স্বীকার করেন। দুলালের ভাই জাহাঙ্গীর হোসেনও মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।