বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাজীগঞ্জে তাল গাছ থেকে পড়ে আহত যুবকের মৃত্যু
  •   অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন চৌধুরী মারা গেছেন
  •   ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা
  •   মতলব উত্তরে ইকবাল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
  •   মতলবে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১:০২

দেবর-ভাবীর পরকীয়ায় বলি হলো দেবর

মাহবুব আলম লাভলু
দেবর-ভাবীর পরকীয়ায় বলি হলো দেবর
নিহত ইকবাল হোসেন।

মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নে দেবর-ভাবীর পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে একই এলাকার বখাটেদের মারধর আর অপবাদ সইতে না পেরে দেবর ইকবাল হোসেন (২৩) আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তার পরিবারের দাবি এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহত ইকবাল হোসেনের বাবা খোরশেদ খলিফা বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার কালীরবাজার এলাকার রায়েরকান্দি খলিফা পাড়ার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ইকবাল কালীরবাজারের ইব্রাহিম খানের জাহাজের ডকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

জানা যায়, দেবর ইকবাল হোসেনের সাথে তার ভাবী ময়না বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়টি আশপাশের এবং তার গ্রামের কিছু লোক জেনে ফেলে এবং পরবর্তীতে ময়না বেগমের মোবাইলটি কৌশলে তারা চুরি করে নিয়ে যায়। মোবাইলের রেকর্ডিংয়ে পরকীয়া সংক্রান্ত কিছু কথাবার্তার তথ্য পাওয়া যায়। গত ৭ নভেম্বর রাতে এই রেকর্ডের কথাগুলোকে কেন্দ্র করে ইকবাল হোসেনের কাছে একই এলাকার মোঃ নাসিরের ছেলে মিল্লাত হোসেন (৩৫), মরণ সর্দারের ছেলে মোঃ সুজনসহ ৪/৫ জন বখাটে মিলে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। টাকা না দিলে রেকর্ডিংয়ের কথাবার্তা ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে ইকবাল হোসেনকে ডেকে কালিরবাজার লঞ্চঘাটে এনে মারধর করে তারা ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তাতেও তারা ক্ষান্ত হয় নি। তারা ইকবাল হোসেনের ভাবী ময়না বেগমের কাছেও টাকার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। তিনি টাকা দিতে না পারায় ইকবাল হোসেনের মোবাইলটি নিয়ে যায় সুজন ও মিল্লাত। পরে মোবাইলের জন্যে ইকবাল হোসেন তাদের কাছে গেলে আবারো সে মারধরের শিকার হয়। এমন অত্যাচার এবং অপবাদ সইতে না পেরে লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে না জানিয়ে বিষাক্ত ট্যাবলেট (কীটনাশক) খেয়ে আত্মহত্যা করেন ইকবাল।

এ বিষয়ে নিহত ইকবাল হোসেনের ভাবী ময়না বেগম পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয় স্বীকার করে বলেন, আমি আমার দেবরের সাথে মোবাইলে কথা বলতাম। সেই কথার রেকর্ডিং ও দুটো ছবি ছিল আমার মোবাইলে। কিছুদিন আগে আমার মোবাইলটি ঘর থেকে চুরি করে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে তারা ওই মোবাইলের রেকর্ডিং ও ছবি দেখিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে এবং আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা চেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সুজন ও মিল্লাতসহ আরো কয়েকজন ইকবালকে ধরে নিয়ে মারধর করে ও তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন আমার দেবর।

ইকবাল হোসেনের বোন রুপালি বেগম জানান, আমার ভাবী ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে যদি অবৈধ সম্পর্ক থাকতো, তাহলে তারা আমাদেরকে জানাতো। অথবা এলাকার সামাজিক লোকজনকে জানাতো। মিল্লাত, সুজন ও তার সহযোগী আরো ৪-৫ জন মিলে আমার ভাইকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করে। ব্যথা সহ্য করতে না পারলে আমার ভাই ডাক চিৎকার দিলে তারা আমার ভাইকে জোর করে কিছু একটা খাইয়ে দেয়। পরবর্তীতে ডাক চিৎকার শুনে আমরা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসলে ইকবাল বলে, আমার শরীর ভালো লাগছে না আমাকে একটু পানি দাও। আমরা তাকে পানি দিলে পানি খেয়ে অচেতন হয়ে যায় আমার ছোট ভাই ইকবাল। তখন তড়িঘড়ি করে তাকে অটোতে করে দাউদকান্দি নিয়ে যাওয়ার পথে আমার ভাই মৃত্যুবরণ করেন। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ইকবাল হোসেনের মা জাহানারা বেগম জানান, আমার কলিজার ধন তারা নিয়ে মেরে ফেলেছে। এখন আমারে কে দেখবে? আমাকে কে ওষুধ কিনে দেবে? আমার তো আর কেউ রইলো না। আমি আইনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক জানান, ঘটনার পর আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসলে ঘটনার সত্যতা জানা যাবে। এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ কাজ করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়