বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
  •   নির্মাণের এক বছর না যেতেই ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের বেহাল দশা
  •   শেষ হলো পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা
  •   ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  •   মোবাইল ব্যবহারে নিষেধ করায় শিশু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ২১:২৭

ডিভোর্সের কথা গোপন রেখে সাবেক স্বামী থেকে টাকা আদায়

ব্যাংকারের সাথে দুই সন্তানের জননীর নতুন সংসার

নূরুল ইসলাম ফরহাদ
ব্যাংকারের সাথে দুই সন্তানের জননীর নতুন সংসার

স্বামী বিদেশ তাই ডিভোর্স! কথাটি এক কথায় প্রকাশ করা যায় না। বর্তমান সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। আর এর অধিকাংশই প্রবাসীর স্ত্রী। প্রবাসীর স্ত্রী সালমার বিরুদ্ধে এক অভিনব পদ্ধতিতে ডিভোর্স দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসীর মা মাহমুদা বেগম প্রতিকার চেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ করে আমাদের দেশের বিবাহিত অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের অপরাধের হার জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই দশক ধরে এ অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে আসছে। এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারছে না। হাতের তুড়ি মারার মতো করে এক নিমেষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক। কচুপাতার মতো ঠুনকো হয়ে পড়ছে সম্পর্কগুলো। অন্ধকার থেকে গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে সংসার নামক সুন্দর কাঠামোটি। বর্তমানের ঘটনাগুলো এতোই বেপরোয়া যে, দুই তিন সন্তান রেখেও অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যায় মা। ‘মা’ নাকি মায়ার সাগর। অথচ একজন মা কতটুকু পাষাণ হলে সন্তানকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠিলে দিতে পারে। জগত সংসারে মায়া বলতে আর কিছুই নেই।

বাংলাদেশের আয়ের অধিকাংশ আসে নাকি প্রবাসী র‌্যামিটেন্সে। প্রবাসীরা মা-বাবা, সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন এবং দেশের মায়া ত্যাগ করে দূর প্রবাসে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্ত্রী-সন্তানদের উজ্জ্বল ভষ্যিতের কথা চিন্তা করে নিজের সমস্ত সুখ-আহলাদ বিসর্জন দিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রবাস জীবনে। তাদের জন্যে কি একটুও মায়া হয় না? ভালোবাসার হয়তো হাত ফেরি হয়ে গেছে; করুণাটুকুও কি তারা পেতে পারে না? এই অসহায় প্রবাসীদের জন্যে কি রাষ্ট্রের কিছুই করার নেই? তাদের এই নীরব কান্নার শেষ কোথায়? অন্যের স্বপ্ন পূরণে যে নিজের সুখ বিসর্জন দেয় তাদের জন্যে করুণা নয়, রাষ্ট্রীয় সালাম প্রয়োজন।

উপরের কথাগুলো অশ্রুসিক্ত নয়নে, বার বার ভারী হয়ে আসা গলায় বলছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী সোহেল আহম্মদ। পারিবারিকভাবেই ২০১১ সালের ২ মার্চ তার বিয়ে হয় ফরিদগঞ্জ সদরের রাঢ়ী বাড়ির রুহুল আমিনের মেয়ে সালমার সাথে। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিয়ের দুই বছরের মাথায় পাড়ি জমান সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়। কারণ কম টাকায় চলবে না স্ত্রীর। সংসারের সুখের জন্যে নাকি অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বিধিবাম, স্ত্রীর স্বপ্নের মঞ্জিলের পথে হাঁটতে গিয়ে নিজের পথটিই হারিয়ে বসলেন সোহেল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যার জন্যে এতো ত্যাগ আর পরিশ্রম সেই প্রিয় মানুষটিকেই ধরে রাখতে পারলেন না। প্রবাসে পাড়ি দেয়ার পর পরই স্ত্রী সালমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামী সোহেল প্রায় সময়ই স্ত্রীকে ওয়েটিং অথবা ব্যস্ত পান। শুরু হয়ে যায় অশান্তি। এর মাঝে সোহেল একবার দেশে আসেন। আবার চলেও যান। কিন্তু অশান্তি যায় না। বিয়ের কয়েক বছর পর ধানুয়ার শাহাবুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীর সাথে সালমার প্রেম শুরু হয়। আস্তে আস্তে বিষয়টি অনেকেই জেনে যায়। ২০২০ সালের দিকে সালমার বাবা এবং ভাই ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে শাহাবুদ্দিনকে ধরে এনে মুচলকা নিয়ে ছেড়ে দেন। ২০১৬ সালে সোহেল ফরিদগঞ্জ মার্কেন্টাইল ব্যাংকে স্ত্রী সালমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্যে। সেখানে ব্যাংকের তৎকালীন এক স্টাফের সাথে সালমার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। এক সময় তাদের লীলা ধরে ফেলেন স্বামী সোহেল। অশান্তির মাত্র বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অনেক বুঝিয়েও সালমাকে ফিরানো যায়নি সে পথ থেকে। মাঝে একবার পবিত্র কোরআন শপথ করে বলেছিলেন, আর কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াবেন না। কিন্তু কুকুরের লেজ যে সোজা হবার কথা না! সংসার জীবনে তাদের দুটি সন্তানও আসে। আব্দুল্লার বয়স ১১ আর সুমাইয়ার বয়স ১০ বছর। সোহেলের চিন্তা ছিলো, সন্তান হলে হয়তো সালমা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টোটি।

সোহেল আরো অভিযোগ করে বলেন, সে (সালমা) বাচ্চাদের ফরিদগঞ্জে পড়াবে বলে তাদের বাড়ির পাশেই বাসা ভাড়া নেয়। এখানে স্বাধীনভাবেই সে তার কাজ চালিয়ে যায়। ক’দিন আগে আমার মা তাকে আনতে গেলে সে বলে, আমার সংসার করবে না। ক’দিনের মাথায় নাকি আমি ডিভোর্সের কাগজ পেয়ে যাবো। ঠিকই ক’দিনের মাথায় কাগজ পাই। কিন্তু সেখানে তারিখ ছিলো প্রায় ছয়মাস আগের। আমার প্রশ্ন হলো, কেন এতো লুকোচুরি? সে ডিভোর্সের কথা গোপন রেখে আমার সাথে কথা বলে গেছে। আমি তার একাউন্টে টাকাও পাঠাতাম নিয়মিত। সে প্রায়ই বলতো আমি নাকি শুধু শুধু সন্দেহ করতাম। ঐ ব্যাংকারের সাথে তার কোনো ধরণের সম্পর্ক নেই। তাহলে বিগত তিন মাস আগে সে কীভাবে ঐ ব্যাংকারকেই বিয়ে করে?

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালমা বলেন, প্রথম কথা হলো তারা আমার কাছে একটি তথ্য গোপন করেছেন। আমার সাবেক স্বামীর পূর্বে একটা বিয়ে হয়েছে। সে ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। যদিও তারা আমার ভগ্নিপতি বিল্লালকে বলেছিল, কিন্তু সে আমাকে বলেনি। আমাকে বিয়ে করার পরও সে আগের স্ত্রীর সাথে লুকিয়ে যোগাযোগ করতো। এটা নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো। ‘ডিভোর্সের বিষয়টি গোপন করলেন কেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাবেক স্বামী নিষেধ করেছে তাই। ‘ডিভোর্সের কথা গোপন করে তার পাঠানো টাকা কেন রিসিভ করেছেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রূপসা বাজারে পল্লী মঙ্গল সমিতি থেকে এক লাখ সত্তর হাজার টাকা তোলা হয়েছে, সে টাকা দিয়েছে। ‘স্বামী থাকার পরও শাহাবুদ্দিন নামের ছেলেটি আপনার জীবনে আসলো কীভাবে’ এ প্রশ্নের জবাবে সালমা বলেন, সেটা আমার জীবনে একটা অ্যাকসিডেন্ট। ‘আপনি সোহেলকে বলেছিলেন আবিরের সাথে আপনার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এখন তাকে কীভাবে বিয়ে করলেন’-এর জবাবে তিনি বলেন, আমার বর্তমান সংসার নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না।

সালমার দাবি ৮ম শ্রেণী পড়া অবস্থায় তাকে তার পরিবার বিয়ে দেয়। যা তার পরিবার তার প্রতি জুলুম করেছে। গুরুতর অভিযোগ হলো, বিয়ের এগার বছর হলেও মাত্র ২২ মাস স্বামীকে কাছে পেয়েছেন।

আমাদের সমাজের মেয়েরা চিন্তায় দ্রুত বড় হলেও মানসিকতায় বড় হতে হলে তার বয়স ১৮/২০ বছর লাগেই। অন্যথায় এরা সংসার করতে পারে না। দু’জন এক সাথে থাকা আর সংসার করা এক জিনিস নয়। সংসার বিষয়টি ভিন্ন। যা ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা মেয়ের বুঝার কথা নয়। বিষয়টি অভিভাবকদের বুঝা উচিত। সংসার না টিকার অন্যতম প্রধান কারণ তরুণ বয়সে সঙ্গীকে কাছে না পাওয়া। যৌবনের উন্মাদনা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা যুবক-যুবতীদের থাকবেই। প্রবাসীদের বছরের পর বছর বাইরে পড়ে থাকা তাদের স্ত্রীদের বিপথগামী করতে সহযোগিতা করছে। বিষয়গুলো নিয়ে রাষ্ট্র এবং সামাজিকভাবে ভাবার সময় এসেছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়