রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধ চেতনার রাজনৈতিক শক্তি-জাসদ
অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার

বিশেষ একটি রাজনৈতিক ও সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি দেশের চাহিদা, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, নেতৃত্ব প্রভৃতি গড়ে উঠে। সেইরূপ একটি প্রেক্ষাপটেই বামপন্থী ঐতিহ্যের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্তরে স্তরে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগান এবং সুমহান জাতীয় মুক্তির আন্দোলন ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যুবসমাজ মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে দেশ গঠনের সংগ্রাম বেগবান করতে যেমনিভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গর্ভে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ, ঠিক তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতে স্বাধীন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত করতে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে একটি রাজনৈতিক শক্তি, যার নাম জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

জাসদ-এর যখন জন্ম, তখন সবেমাত্র মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। সশস্ত্র লড়াইয়ে জয়লাভ করে যে দলটি (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আসীন হলো, তার সীমাবদ্ধতার কারণেই প্রকৃত মুক্তির পথ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ, আর আওয়ামী রাজনীতির ধারা থেকে জাসদ। শেষোক্ত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ এবং নিউক্লিয়াস। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে আমাদের পূর্ববাংলার ভূখ-ের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখবো, সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত, জাতীয়তাবাদী ও সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী এ ধারাটি কিভাবে বাঙালির রাজনৈতিক মূলধারা হিসেবে বিকশিত হয়ে উঠলো এবং এ ধারাটির মুখপাত্র ও প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামনে চলে এলেন। জাসদ সুপ্ত ছিলো এর মধ্যেই।

সমাজের বিবর্তন-চাহিদার সাথে সাথে রাজনৈতিক একটি শক্তি-দলের বিকাশের এরূপ চমকপ্রদ উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সমাজের একদম ভেতর থেকে সমাজের রাজনৈতিক চাহিদা মেটাতে জাসদের জন্ম হয়েছিলো। জাসদের জন্মের সাথে কোনো একক ব্যক্তির কীর্তি বা কথিত ষড়যন্ত্রের কোনো সম্পর্ক বিন্দুমাত্র নেই এবং তা প্রমাণ করা যাবে না। জাসদ হচ্ছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য থেকে উত্থিত বিকশিত প্রগতিশীল-সমাজতান্ত্রিক একটি শক্তি, যাকে আমরা অচিরায়ত সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের পর্যায়ভুক্ত করতে পারি। এছাড়াও বাংলাদেশের সমাজ বিশ্লেষণ, উৎপাদন সম্পর্ক, বিপ্লবের স্তর নির্ধারণ, রাষ্ট্রের শক্তিকেন্দ্র, রণনীতি-রণকৌশল নির্ধারণ-বর্ণনার দিক থেকে জাসদ ছিলো বৈপ্লবিকভাবে সঠিক-আধুনিক এবং গ্রহণযোগ্য, যা অন্যদের বুঝতে সময় লেগেছিলো। জাসদের দলিল ‘সমন্বয় কমিটির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ এক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ।

আওয়ামী রাজনীতির অভ্যন্তরে যারা নিউক্লিয়াস গড়ে তুললেন, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখলেন, যারা স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করলেন, যারা বাংলাদেশের পতাকার নকশা করলেন, যারা সেই পতাকা উড়িয়ে দিলেন, যারা স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করলেন, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন তারাই কিন্তু জাসদ গঠন করলেন। জাসদের যে আদর্শ ও সাহসের কথা বলা হয়, স্পর্ধিত তারুণ্যের যে অবয়বতা তো বায়বীয় বা কাল্পনিক নয়তা হলো যুদ্ধ-সংগ্রামের অর্জন। জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল সাহসী সেসব ব্যক্তিই একটি ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে যুব সমাজের চাওয়া-পাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠন করেছিলেন জাসদ। অর্থাৎ জাসদের জন্ম হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা পূরণের জন্যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে। কর্নেল তাহেরও তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্যে এই জাসদকেই খুঁজে পেয়েছিলেন। এবং মেজর জিয়াউদ্দিনসহ অনেক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মতো আমি (স্কুলপড়–য়া ছাত্র)ও খুঁজে পেয়েছিলাম।

আওয়ামী লীগের সাফল্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে মুসলিম লীগ। জাসদ বা অন্য প্রগতিশীলরা সফল হলে আওয়ামী লীগ হয়তো রাজনৈতিকভাবে মুসলিম লীগের ন্যায় হতে পারতো। কিন্তু মাঝখানে আবার সামরিক শাসক ও ধর্মান্ধ জঙ্গী অপশক্তির উত্থানের প্রেক্ষাপটে জাসদসহ প্রগতিশীল শক্তিগুলোর মিত্র হয় আওয়ামী লীগ। রাজনীতি এমনই। ১৯৭৫ সালের পর, বিশেষ করে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যা, বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব, অসংখ্য ক্যু, সামরিক শাসন, উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির উত্থান, রাজাকারদের পুনর্বাসন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়তে হলো বাংলাদেশকে। মুক্তিযুদ্ধের পর আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দিলো। সমাজতন্ত্রের লড়াইয়ের বদলে অগ্রাধিকার দিতে হলো গণতন্ত্র অর্জনের লড়াইকে। লুটপাটের অর্থনীতির আগ্রাসন থামাতে বুর্জোয়া অর্থনীতির ন্যূনতম শৃঙ্খলার কথা বলতে হলো। সামরিক শাসন তাড়াতে তাড়াতে অনেক দিন কাটলো। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরে এখনও কিন্তু আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্তরেই আছি বলা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, কর্নেল তাহের হত্যার বিচারসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উচ্চকিত রাখতে চাইছি।

পাকিস্তান আমলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও নিউক্লিয়াসের মধ্যে সুপ্ত ছিলো জাসদ, বাংলাদেশ আমলে অনিবার্য প্রয়োজনে তা উদ্ভাসিত হয়, বঙ্গবন্ধুর সরকারের একমাত্র কার্যকর প্রতিপক্ষ তথা বিরোধীদল হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলো। যে জাসদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিল, যে জাসদ জিয়া-এরশাদ সরকারের অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রাম করেছে, যে জাসদ ছিলো ৯০’এর গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে অগ্রগামী-আপোষহীন সংগঠন, সেই জাসদই সময়ের প্রয়োজনে এখনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে মহাজোটে সরকারের অংশীদার হিসেবে।

’৯০-এর সামরিক শাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা তৈরি হয়। তাই সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক বদলের যেসব কর্তব্য সম্পাদন করা যায়নি তা সম্পন্ন করা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে যেসব বিকৃতি দ্বারা কলুষিত করা হয়েছে তাকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা, স্বাধীনতার পরে যে জাতীয় ঐক্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায়নি তা গড়ে তোলার জন্যে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ১৪ দলীয় ঐক্যজোট গড়ে উঠে ও পরবর্তীতে তা নির্বাচনী সমাঝোতার মহাজোটে পরিণত হয়। মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্যে ১৪ দল ২১-দফা কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল খালেদা-নিজামী সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনীতিতে অশনি সংকেত উপলব্ধি করে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হবার ডাক দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্র-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার যে কর্মসূচি ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন, ১৪ দলের মাধ্যমে সে ধরনের রাজনৈতিক কর্তব্য পালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব বলে জাসদ মূল্যায়ন করে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন-নির্বাচন-সরকার গঠনের জন্যে এবং জঙ্গিবাদ-যুদ্ধাপরাধ-তেঁতুলতত্ত্ব মোকাবেলার রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে ১৪ দলকে অঙ্গীকারাবদ্ধ করার বিষয়ে জাসদ প্রধান উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে। তার ফসল হিসেবে আজ ১৪ দল তথা মহাজোটের সরকার পরপর তিন-টার্ম দেশ পরিচালনা করছে।

নানাবিধ বিভ্রান্তি, ১৪ দলের অভ্যন্তরীণ সংহতির অভাব সত্ত্বেও জাসদ নীতির প্রশ্নে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাসদের ৪৯ বছরপূর্তিতে এবং ‘বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর (’৭১-’২১), জাসদের পঞ্চাশ বছর (’৭২-’২২)-এ এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়, নীতির প্রশ্নে জাসদ সবসময় অটল ছিলো এবং এখন অনেক অভিজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রশ্নে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি দৃঢ় করতে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাসদ অবিচল ছিলো। বিপ্লবী অভ্যুত্থান সংগঠিত করতে এবং ষড়যন্ত্রকারী প্রতিবিপ্লবীদের মোকাবিলা করতে জাসদের নেতা-কর্মীরা নির্দ্বিধায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

মস্কোতে যে সংগঠনের জন্ম হয়, চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যানকে যারা নিজেদের চেয়ারম্যান বলেন বা যারা জনবিচ্ছিন্ন বিপ্লবীপনার চর্চা করেন, তাদের বিলুপ্তি বা সমাজে তাদের পক্ষে অকার্যকর থাকা সহজ। কিন্তু জাসদের বিলুপ্তি বা সমাজে অকার্যকর থাকা অসম্ভব। বাঙালির জাতীয়তাবাদী জাগরণের সাথে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে, গণতন্ত্রের সংগ্রামে, স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় অর্থাৎ বাংলাদেশ ও বাঙালিসত্তার বিকাশের সাথে, জাসদের অস্তিত্ব এমনভাবে নির্ধারিত-সম্পর্কিত হয়ে আছে যে, তাকে যথারীতি অবিচ্ছেদ্য বলা যায়। জাসদ হচ্ছে এমন একটি দেশজ প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি যার জন্ম, বেড়ে উঠা ভবিষ্যৎ-সবটাই এ সমাজের অন্তস্থিত, এর মধ্যেই প্রোথিত। এ কারণে নির্যাতন, তথাকথিত ভাঙন, নেতাদের দলত্যাগ প্রভৃতি সত্ত্বেও এর মূল চেতনাবাহী ধারাটি এখনও জাসদ নাম দিয়েই ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

একসময় জাসদ আগুন ছিলো, অনেক বেশি দৃশ্যমান, ভূমিকায় অনেক প্রত্যক্ষ। এখন সেই আগুন স্ফুলিঙ্গ হয়েছে, তবুও জ্বলছে। স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুন হয়, এই জাসদকেই আবার আগুন হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে। জাসদ মানে কিন্তু শুধু একটা দল নয়, এটা একটি প্রজন্মের নাম, একটা অগ্রসর ভাবনার নাম। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সক্রিয় এবং সুপ্ত একটা বৈপ্লবিক শক্তির নাম জাসদ।

সমাজতন্ত্রের লড়াইটা বাকি আছে এখনও। স্বপ্নের কাক্সিক্ষত সোনার বাংলাদেশটা গড়া যায়নি আজও। বাংলার কৃষক-শ্রমিকের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও সুদূর পরাহত। এখনও কাউকে আমরা দেখছি না একমাত্র বিকল্প শক্তি হিসেবে, যারা সক্ষমভাবে এ আন্দোলনটার নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তবে জাসদ বা প্রগতিশীল শক্তির আগামী রাজনৈতিক সাফল্য কিন্তু এত সহজ নয়। তাই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে হবে-বর্তমানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-যারা তা করতে পারবেন তারাই হবেন আসলে চ্যাম্পিয়ন। সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের জাসদের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি কোনোভাবেই। বরং সারা পৃথিবী জুড়ে অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, আধিপত্যের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের যে ঢেউ ও দোলাচল আমরা লক্ষ্য করছি, যা থেকে বাংলাদেশও বাইরে নয় সেই প্রেক্ষাপটে জাসদের বিপ্লব ও সংগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরতে হবে। আগামী নেতৃত্বের সম্ভাবনার জায়গাটা জাসদীয় ঘরনা থেকেও সৃষ্টি হতে পারে (যেমনি হয়েছিল ’৭২-এর অক্টোবরে), এমনকি কোন নতুন আয়োজনেও থাকতে পারে জাসদীয় ঘরনার সরব উপস্থিতি। এভাবেই জাসদের বহমানতা, জাসদের অতীত-বর্তমানের ভূমিকাই একে এরকম আগামীর দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার : সভাপতি, চাঁদপুর জেলা জাসদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা; চাঁদপুর জেলা শিক্ষক নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়