প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
-গত দুদিন যে নক করো না?
-মোবাইল ধরতে দেয় না মা, ভাইয়া।
-ও আচ্ছা
-হুম। আচ্ছা শোনো, আমি কল দেয়া ছাড়া তুমিও ভুলেও কল দিও না।
-আচ্ছা।
হঠাৎ লাইন কেটে যায়। ইদানীং সাব্বির আর নাহিদার যোগাযোগ কমে আসে। ওদের দুই বছরের সম্পর্ক। এক সপ্তাহ পর পর দুই এক মিনিট কথা হয়। সাব্বির বুঝতে পারে সম্পর্কের দুরত্ব বাড়ছে। হতাশা বাড়ে।
অনেকদিন পর কল আসে নাহিদার। এর মধ্যেই অবাক করা তথ্য জানতে পারে সাব্বির। এক পর্যায়ে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সাব্বির বলে,
-সত্যই কি তোমাকে মোবাইল ধরতে দেয় না?
-তুমি আমাকে সন্দেহ করছো?
-না। তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি। একটা সত্য জানতে চাই, নিলয়ের কাছে শুনলাম। তোমার সাথে দুদির পর পরই আমার বন্ধুদের সাথে তোমার কথা হয়। অথচ আমার সাথে তোমার কথা হয় না। গত পনেরো দিন পরে তুমি নক করলে!
কালকেও শুনলাম, তুমি নকিবের সাথে আধ ঘণ্টা কথা বলেছ। অথচ তুমি চাইলেই ওর সাথে কথা বলার ফাঁকে আমাকে ত্রিশ সেকেন্ডের জন্যে হলেও কল দিতে পারতে। একটা হলেও এসএমএস করতে পারতে। আমি মরলেও তো তুমি খবর পেতে না। আচ্ছা, কি কথা বললে?
-আমি কার সাথে কত মিনিট কথা বলবো, কি কথা বলবো, সেটা তোমাকে কৈফিয়ত দিতে পারবো না। তাছাড়া আমার ইচ্ছা হয়নি, তাই তোমাকে কল দিইনি।
-জানো, যখন কারো কাছে শুনি, তুমি ওর সাথে কথা বলেছ অইদিন। সেদিন অথচ আমার সাথে বলো নাই। তখন খ্বু কষ্ট হয়। এই কষ্ট সহ্য করতে পারি না।
বন্ধুরা আমায় নিয়ে ব্যঙ্গ করে, হাসি-তামাশা করে। বলে দুই বছর প্রেম করিস, এখনো ঘুরতে যাইতে পারস না। তোদের একসাথে একটা ছবিও নাই। এটা কোনো প্রেমই না। তোকে নিয়ে টাইমপাস করে। তখন কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। আমার জায়গায় থাকলে তুমি বুঝতে।
-বিশ্বাস করো। আমাকে মোবাইল ধরতে দেয় না। কোচিংয়ের বন্ধুদের সাথে পড়ার ব্যাপারেই কথা হয়। আর কিছুই না।
আচ্ছা, বায়, আম্মু আসতেছে। বলে লাইন কেটে দেয় নাহিদা।
এভাবে চলতে থাকে সম্পর্ক। একদিন হুট করেই সাব্বির কাছে নকিব এসে বলে, এই দেখ তোর বান্ধবীসহ ঘুরতে গেলাম। এক সাথে ছবি তুললাম। অথচ তুই প্রেম করিস, একটা ছবিও নাই তোর কাছে! এটা শুনে এবং ওদের সাথে পাশাপাশি ছবি দেখে রাগ উঠে যায় সাব্বিরের। সহ্য করতে না পেরে তখনই কল করে।
জানতে যায় কোনো খবর আছে কি না। ইঙ্গিতও দেয়। কিন্তু নাহিদা বুঝতে না পারার ভান করে। এক পর্যায়ে বলেই পেলে ওদের সাথে তুমি ছবি তুললে কেনো। বলে ওরা খুব জোর করছিলো তাই। এটা শুনে আরো রেগে যায় সাব্বির। বলে জোর করলেই তুলতে হবে। কই আমিও তো কতবার জোর করছিলাম, তুমি তো আমার সাথে ছবি তুললে না!
এক পর্যায়ে দুজনের ঝগড়া হতে থাকে ফোনেই। আচমকা ভাইয়া আসছে বলে ফোন রেখে দেয়। তারপর আর যোগাযোগ হয় না দুজনের। সাব্বিরকে ব্লক মারে। লকডাউনে এক বছর স্কুল বন্ধ। তাই দেখাও হয় না। সাব্বির অনেক কষ্টে ওর বান্ধবীকে ম্যানেজ করে। বাসায় পাঠায়। জানতে পারে ওর সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। ও নাকি ধরা খেয়েছে। সাব্বিরের কলের জন্যেই ধরা খেয়েছে। অভিযোগ আনে। তার সাথে কথা না বলতে নিষেধ করেছে ওর পরিবার ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও অনেকগুলো তথ্যই নাহিদার অজুহাত ছিলো। সাব্বির যদি সত্যই ভালোবাসে ওকে যেনো আর বিরক্ত না করে। মুক্তি দেয় ওকে। সব বুঝতে পারে সাব্বির।
সাব্বির অনেক কষ্ট পায়। একসময় মেনে নেয় নিষ্ঠুর বাস্তবতা। তবে ভেতরে ভেতরে অপেক্ষা করে, ভাবে সব ঠিক হয়ে যাবে। লকডাইন শেষ হলে আবার একসাথে ক্লাস করবে। ধীরে ধীরে সব ঠিক করে ফেলবে। কেননা সে তো সত্যি ভালোবাসে।
আর রাগ দেখাবে না। সন্দেহ করবে না। নাহিদা যেভাবে চায় সেভাবেই চলবে। আর মরে গেলেও ভুল করবে না। কিন্তু আর কোনোদিনেই নাহিদা নক করে না।
একদিন গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুক চালাচ্ছিলো সাব্বির। হঠাৎ দেখে ওর গালফ্রেন্ডের নামে একটা আইডি। ও ভালো করে প্রোফাইল দেখে চিনতে পারে। প্রোফাইলে ওর ছোট বোনের ছবি দেয়া। সব বিস্তারিত তথ্যই ঠিক আছে। শুধু জন্মদিনের তারিখ আর মাসটা উল্টা করে রাখছে। যেনো কেউ বুঝতে না পারে সঠিক জন্মদিন কোনটি। কিন্তু সাব্বির সব বুঝতে পারে।
সাথে সাথে রিকোয়েস্ট দেয়। মেসেজ করে। কিন্তু উত্তর দেয় না নাহিদা! এমনকি রিকোয়েস্টও একচেপ্ট করে না! সব নিশ্চিত হয়েও আরো শিউর হতে নাহিদার বন্ধুদের নক করে। তারাও বলে এটা নাহিদার আইডি। হাল ছাড়ে না সাব্বির। ওর প্রত্যেকটা আইডি থেকেই রিকোয়েস্ট দেয়, মেসেজ দেয়। তবুও কোনো সাড়া পায় না। কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে সে। সে অসুস্থ হয়ে যায়। হাসপাতালের বেডে হঠাৎ মনে পড়ে ফেক আইডির কথা। সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলে ভিন্ন পরিচয় নতুন আইডি। রিকোয়েস্ট দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই একচেপ্ট করে! অবাক হয় সাব্বির। কৌশল করে কয়েকদিন পরেই ফেক আইডি দিয়েই নক দেয়। উত্তর দেয় নাহিদা! ভিন্ন পরিচয়ে টুকটাক কথা বলে সাব্বির। অন্যরকম প্রশান্তি পায়। আরেকটা ফেক আইডি খোলে সাব্বির। ওর ভিন্ন স্কুলের পরিচিত বান্ধবী সাজে।
কৌশলে কথা বলতে বলতে একদিন নাহিদার কাছে জানতে চায় সাব্বির। বলে সাব্বিরের খবর কি?
-জানি না।
-সম্পর্ক ভাঙলো হলো কবে?
-সম্পর্কই তো হয়নি। ভাঙা হলো মানে?
-ওর সাথে না তোর প্রেম ছিলো।
-হা হা হা। আমার প্রেম ছিলো। অথচ আমি জানি না। তুই জানস?
-তুই জানবি না। এটাই স্বাভাবিক। লোকেরা জানবে।
কিন্তু...
-কিন্তু কি?
-তোদের এক সাথে নদীর পাড়ে একা বহুবার দেখছিলাম।
-হা হা হা। একসাথে ওখানে দেখছত বলে প্রেম হয়ে গেল! ছেলেটা আমার জাস্ট বন্ধুই ছিলো। তাও এখন আর নাই।
-কেনো রে?
-এতো কেন উত্তর দিতে পারবো না।
এতোক্ষণ কথা বলার পর সাব্বির এই শেষ কথাটাই সহ্য করতে পারলো না।
তার একদিকে কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে অন্যদিকে হাসি পাচ্ছে! সে নাকি বন্ধু ছিলো!
সাব্বিরের ইচ্ছা করছিলো এখনই বলে দেয় সবকিছু। গালি দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে আমিই সাব্বির। তুই একটা মিথ্যাবাদি। কিন্তু বললে তো সব শেষ। ফেসবুক আইডি থেকেও ব্লক খেতে হবে। তারচেয়ে বরং ফেক আইডি দিয়ে কথা বলা ভালো। আর তথ্য পাওয়া যাবে।
এক সময় পরিকল্পনা সফল হয়। রবিনের বান্ধবির প্রাইভেট পড়াকে কেন্দ্র করে রবিনের সাথে পরিচয় হয় নাহিদার। খুব ভালো সম্পর্কে আগায়। অজানা সব তথ্য জানতে পারে ফেক আইডি দিয়েই। দুঃখের মাঝেও সে সুখ পায় বিবর্ণ সুখ। আরো জানতে আরশাদ নামের প্রেমের কাহিনি। আর কত ছেলের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
একদিন হঠাৎ রবিন একটা ছেলের ছবি পাঠায় সাব্বিরের অরজিনাল আইডিতে। জানতে চায় ছেলেটাকে চিনস?
-না, কেনো রে?
-দেখলাম নাহিদার সাথে এড আছে। মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড। তাই ভাবলাম তুই চিনতে পারস। তোদের সাথে পড়ছে হয়তো।
আচ্ছা, তোর সাথে তো নাহিদা চৌধুরী পড়ছে। চিনস ওকে?
না চেনার ভান করে সাব্বির। রবিন আরো পরিচয় দিতে থাকে। সাব্বির মনে মনে হাসে। মায়ের কাছে মাসির গল্পের মতো।
এক সময় বলে, ওহ চিনছি। তারপর খুঁটিনাটি ওর সাথে কীভাবে পরিচয় সব রহস্যময়ী তথ্য জানতে পারে সাব্বির।
যেই ছেলেটার ছবি পাঠিয়েছে তাকেও সাব্বির চিনে। নাহিদার আরেকটা ফ্রেন্ড। সব মিলেই সাব্বির আবিষ্কার করে নতুন এক নাহিদাকে। নাহিদার আসল রুপকে! অথচ আজ সে দুঃখ পায় না। সুখ পায়। অন্যরকম সুখ। কিন্তু ফেক আইডি দিয়ে আর মেসেজ করে না। শুধু অপেক্ষা করতে থাকে সরাসরি একদিন দেখা করবে। শুধু একটা প্রশ্ন করবে নাহিদাকে। আচ্ছা, সেটা কি প্রশ্ন হতে পারে?
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল