শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শাহরাস্তিতে নিজের জায়গায় দেয়া প্রতিপক্ষের দেয়াল সরাতে গিয়ে বিপাকে কামরুজ্জামান মনা
শাহরাস্তি ব্যুরো ॥

শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুরা গ্রামে নিজ বসতঘরের পাশে প্রতিপক্ষের দেয়া দেয়াল সরাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন কামরুজ্জামান মজুমদার মনা নামের এক পল্লী চিকিৎসক। বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে ভাংচুর ও হামলার সাজানো ঘটনায় তাকে ৮ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৮ দিন কারাভোগের পর জামিনে এসে ওই মামলার ঘানি টানছেন, উপরন্তু তার বাড়ির মাঝখানে প্রতিপক্ষের দেয়া দেয়াল রয়ে গেছে বলে অভিযোগ মনার।

জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত পল্লী চিকিৎসক ডাঃ খলিলুর রহমানের পুত্র কামরুজ্জামান মজুমদার মনার সাথে একই বাড়ির আবুল হাশেমের পুত্র কাউসারদের জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব রয়েছে। যার জের ধরে ১০/১১ বছর পূর্বে কামরুজ্জামানের ঘরের দক্ষিণ পাশে একটি দেয়াল নির্মাণ করে তার পাশে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে। যা শুধুমাত্র জায়গা দখল রাখার উদ্দেশ্যে করায় বর্তমানে পরিত্যক্ত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ঘটনার দিন দুপুরে কামরুজ্জামান মিস্ত্রি নিয়ে ওই জায়গার দেয়াল সরানোর চেষ্টা করলে কাউসার গং মিস্ত্রিদের বাধা দিলে তারা চলে যায়। এরপর কামরুজ্জামানের ঘরে হামলা চালিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর চালায়। এতে উভয় পক্ষ জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সবাইকে জায়গার কাগজ নিয়ে থানায় যেতে বলে। মোঃ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রকাশ মনা (৩৩) থানায় গেলে কাউসারদের ঘরে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে তাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় কাউসারের দাদার বসতঘরে হামলা ও ভাংচুরের কথা বললেও সেটি একটি পরিত্যক্ত ঘর, যা শুধুমাত্র জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কামরুজ্জামান মনা জানান, আমি পৈত্রিক সূত্রে এ জায়গার মালিক। যা বিগত সময়ে পুকুর ছিলো। ২০০৭-০৮ সালে আমি এ জায়গাটি ভরাট করে ফলমূলের বাগান সৃজন করি। এরপর এই জায়গায় উপর আমার প্রতিপক্ষ কাউসারের বাবা হাশেম জেঠা ও মোতালেব গংয়ের কুনজর পড়ে। সে সময় থেকেই তারা আমার এ জায়গার উপর দখলদারিত্বের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমি এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্যে ইউনিয়ন কাউন্সিল, থানা ও আদালতের আশ্রয় নিলে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সহায়তায় আমাকে মেরে গুরুতর আহত করে। আমি হাসপাতালে ১৭ দিন ভর্তি থাকাকালীন তারা আমার জায়গা দখল করে সেখানে টিনশেড আধাপাকা ঘর ও আমার বাড়ির ভেতর পূর্ব-পশ্চিমে দেয়াল নির্মাণ করে। প্রতিপক্ষের হাতে উক্ত জায়গার কোনো কাগজপত্র না থাকলেও তারা ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে তার বাড়ির ভেতর এ দেয়াল দিয়ে রাখে। গত ৮ সেপ্টেম্বর আমি কাজের লোক দিয়ে ওই দেয়াল সরানোর প্রস্তুতি নেই। তাদের কাজে লাগিয়ে আমি দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্যে হাজীগঞ্জ যাই। ইতোমধ্যে আমার স্ত্রী মুঠোফোনে জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন দেয়াল সরাতে বাধা দেয় এবং আমার বাড়িতে হামলা করে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করে ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। আমি জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেই এবং আমি আসার আগেই বাড়িতে পুলিশ আসে। তারা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে। আমি তাদের সাথে কাগজপত্র নিয়ে থানায় গেলে তারা আমাকে ৪টার সময় বসবে বলে সেখানে বসিয়ে রাখে। ৪টার কিছুক্ষণ পর বসবে বলে ঘুরিয়ে রাত ১০টার দিকে আমাকে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মামলা নিয়ে গ্রেফতার করে। প্রতিপক্ষ তারা মূল বাড়িতে বসবাস করলেও মামলায় এই জায়গায় বসবাস করে বলে উল্লেখ করে। আমি এ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আঃ হক জানান, ঘটনাস্থলে কামরুজ্জামানের বাড়ি। কাউসাররা যে বাড়িতে বসবাস করে সেটি ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ হোসেন মিয়া জানান, আমি এ জায়গা নিয়ে কয়েকবার সালিস করেছি। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলে দরবারের পর বাড়ির মাঝখানে হাশেম ও মোতালেব গং দেয়ালটি নির্মাণ করেন। মূলত জায়গাটি কামরুজ্জামানদের পৈত্রিক। তার বাবা মূল বাড়ি থেকে এখানে আসেন। তিনি এখানে বাড়ি তৈরি করেন এবং সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনা নিয়ে একটি পক্ষ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলেও কামরুজ্জামান বিএনপি ও কাউসার জামায়াত সমর্থক। তারা কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়।

এ বিষয়ে হাশেম মিয়ার বাড়িতে গেলে পুত্র কাউসার জানান, তারা ঘটনাস্থলে নয় মূল বাড়িতেই বসবাস করেন। তিনি বলেন, তর্কিত জায়গা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। কামরুজ্জামান তাদের বাড়ির লোক। ২০১৪ সালে সে ওই জায়গায় নিষেধাজ্ঞার মামলা করে। এরপর বাঁটোয়ারা মামলা করে। ইতিপূর্বে সাবেক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বন্টন করে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রথমে সেগুলো মেনে নিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। মামলা চলাকালে সে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে।

এদিকে দেয়াল নির্মাণের ঘটনার পূর্বে কামরুজ্জামানের ওপর হামলার ঘটনায় তার দায়েরকৃত মামলায় সম্প্রতি কাউসারের বড় ভাই আঃ কাদেকে ৪ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়