প্রকাশ : ০৯ মে ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে সেচ স্কিমের ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জনের মতো মানুষ জখমপ্রাপ্ত হয়। আহতদের কেউ কেউ ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল আসলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জের ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব মনতলা ও ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুয়াটোবা নামে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে ঘটেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৫ মে বৃহস্পতিবার ডোমরা পাটোয়ারী বাড়ির মৃত ফজলুল হক পাটোয়ারীর ছেলে সেচ স্কিমের ম্যানেজার শফিকুর রহমানের ধান কেটে নেয় গুয়াটোবা তালুকদার বাড়ির সালেহ আহমেদ। এতে স্কিমের ম্যানেজার শফিক জমিতে ধান না পেয়ে গুয়াটোবা দোকানের কাছে এসে জমির মালিক সালেহ আহমেদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। পরে কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে উঠে। রাতে স্কিম ম্যানেজারের খোঁজে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলে দোকানে অবস্থানরত পার্শ্ববর্তী মনতলা এলাকার ক’জন মিলে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তাদের কথা না শুনে ধাক্কা দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ছোট ভাই হান্নান তালুকদারের নেতৃত্বে প্রায় ১৫/২০ জন যুবক স্কিম ম্যানেজারের বাড়িতে গিয়ে বসতঘরে হামলা ও লুটতারাজ চালায়।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে পরের দিন শুক্রবার রাতে ক্ষতিগ্রস্তের বাড়ির বাসিন্দা মন্টু পাটোয়ারির বসত ঘরে গ্রাম্য সালিস বসে। সেই বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্ত স্কিম ম্যানেজার পার্শ¦বর্তী মনতলা জমদ্দার বাড়ির কিছু লোককে সালিস হিসেবে নিলে প্রতিপক্ষ লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ক’জন আহত হয়।
আহতরা হলেন : আঃ রহিমের ছেলে কবির হোসেন (২৪), বিল্লাল জমদ্দারের ছেলে মোঃ শিপন (২৬), হারুন জমদ্দারের শিশু কন্যা হাবিবা (৮), দুলাল হোসেনের ছেলে ভুট্টো (২২), বিল্লাল হোসেন সর্দারের ছেলে কামাল হোসেন (৩৪), আঃ রহিমের ছেলে মামুন (২৫), মৃত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৫) ও হারুনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম (২৮)।
গুয়াটোবা তালুকদার বাড়ির আহতরা হলেন : মোঃ মোস্তফা (৭৫), মাকসুদ তালুকদার ১৮), হারুন তালুকদার (৫০) ও শাহাজান তালুকদার (৫৫)।
গুয়াটোবার লোকদের অক্রমণে মনতলা জমদ্দার বাড়ির হারুন, জাহাঙ্গীর, আলমগীর, আমিনের ঘর ভাংচুর হয়।
মনতলা জমদ্দার বাড়ির বাসিন্দা স্থানীয় দোকানদার ফারুক হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে তালুকদার বাড়ির অর্ধশত লোকের উপস্থিতিতে একাধিক মোটরসাইকেল যোগে প্রায় ২০/৩০ জন হেমলেট পরা সন্ত্রাসী ইট পাটকেল মারতে থাকে। আমি শুধু দোকানের ঝাপ ফেলে চলে যাই। পরে দেখি সব রণক্ষেত্র হয়ে গেছে।
মূল ঘটনা নিয়ে সেচ স্কিম ম্যানেজার শফিকুর রহমান বলেন, তালুকদার বাড়ির খলিফার ছেলে হান্নানের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লোক গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার বসত ঘরে হামলা চালায়। তারা মোবাইল ফোন, স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় এবং আমার মেয়েদের ওপর হামলা চালায়। আমি মাঠে যেতে পারছি না। আমাকে ধানের খলায় যেতে দিচ্ছে না। এতে আমার প্রায় ৩শ’ মণ ধান নষ্টের পথে। আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রশাসনকে অবহিত করি। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষের লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। দুই ইউনিয়নের মধ্যে পক্ষ বিপক্ষ পড়ায় বিষয়টি থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে অ ামিও সমাধান চাই।