প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
কঠোর লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিন : ১২৩টি মামলায় ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা অর্থদণ্ড
নির্দেশনা না মানলে জরিমানা, প্রয়োজনে গ্রেফতার : চাঁদপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লেঃ কর্নেল খায়ের
সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের ৬ষ্ঠ দিন মঙ্গলবার অতিবাহিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের অভিযানসহ পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। শহরের উপজেলা সমূহের বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে তাদের।
|আরো খবর
লকডাউনের ষষ্ঠ দিনেও শহরের সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। গত পাঁচ দিনের তুলনায় মঙ্গলবার সড়কে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি দেখা গেছে। তবে মানুষের যাতায়াত ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং বিভিন্ন সড়কে পুলিশের চেকপোস্টে কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত একদিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন।
আইসোলেশন ওয়ার্ডের ডিউটিরত নার্সরা জানান, রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় আমরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। দম নিতে পারছি না। ৫৬ জন রোগীর চিকিৎসা চলছে। আগের দিন পজিটিভ ২৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ১৮ জন রোগী ছিলো।
এদিকে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম চন্দ্র বণিক জানান, ৬ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ কার্যকর করতে লকডাউনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে সর্বমোট ১২৩টি মামলায় ১২৩ জনকে অর্থদণ্ড দিয়ে ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরানণ্ডমাহমুদণ্ডডালিম কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল কোর্টে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন, সড়ক পরিবহন আইনলঙ্ঘন এবং সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করায় ০৮ মামলায় ৪১০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। মোবাইল কোর্টটি পরিচালিত হয়েছে শহরের মহামায়া, বাবুরহাট, ওয়ারলেস মোড়, কালীবাড়ি, পালবাজার, পুরাণবাজার ব্রিজ ও মোলহেড এলাকায়।
অপরদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় টহল দিয়েছেন।
একই সাথে চাঁদপুর জেলা পুলিশ জেলার প্রবেশদ্বার, চেকপোস্টসহ প্রতিটি মোড়ে পাহারা জোরদার রেখেছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা শহরসহ উপজেলা সদরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও এলাকায় বসানো চেকপোস্টে তৎপরতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে জেলা পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ ও পুলিশ সদস্যরা।
লকডাউন চলাকালে চাঁদপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কুমিল্লা সেনানিবাসের লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়ের গণমাধ্যমকে বলেন, আপনারা জানেন করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার লকডাউনের সময়সীমা আরো বাড়িয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার প্রজ্ঞাপন আকারে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে আমরা বেসামরিক প্রশাসনের সাথে থেকে সেই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্যে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে ঘরে রাখা এবং সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের যা যা করা দরকার তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহরে যেসব দোকানপাট নির্দেশনা অমান্য করে খোলা রাখছে, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যারা নির্দেশনা অমান্য করে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা হবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, পুলিশ এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ ৬ দিন ধরে লকডাউনে মাঠে আছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে মানুষের আনাগোনা এবং গাড়ি বেশি। কী জন্যে তারা বের হয়েছে তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করছি। যারা অপ্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদেরকে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড দিচ্ছি। তিনি বলেন, এছাড়াও জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কোভিডণ্ড১৯ণ্ডএর বিস্তার রোধকল্পে গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সোমবার পুনরায় আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ পূর্বক নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।