প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
গত ক’দিন আগে বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কিছু সময় পূর্বে স্থানীয় একটি পক্ষের বাধার কারণে সেদিনের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে নিয়ে একাধিক বাজে অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লম্বা স্ট্যাটাস দেয় স্থানীয় যুবক মোঃ রাকিব দেওয়ান (২৪) নামের একজন। স্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন জঘন্য আর মানহানিকর পোস্ট দেখে নড়েচড়ে বসেন প্রধান শিক্ষিকার স্বামী। স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের কারণে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষিকা জোৎস্না আক্তারের স্বামী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটু। এ ঘটনায় স্ট্যাটাসকারীকে গত ৬ নভেম্বর সোমবার আটক করে থানা পুলিশ। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ের। অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ২/৩কে আসামী করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর শনিবার থানায় অভিযোগটি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, গত দুই বছর পূর্বে নবম শ্রেণির জনৈক ছাত্রীকে ইভটিজিং সংক্রান্ত বিষয়ে মোঃ রাকিব দেওয়ানকে বিচারের সম্মুখীন করেন প্রধান শিক্ষিকা জোৎস্না আক্তার। যার কারণে এই প্রধান শিক্ষিকার সাথে তার মনোমালিন্য রয়ে যায়। গত ৪ নভেম্বর শনিবার বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা বানচালের লক্ষ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাকিব ও অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা ওই বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান করে প্রধান শিক্ষিকার সাথে খারাপ আচরণ করাসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ এবং তাকে আক্রমণের চেষ্টা করে। এতে ওই শিক্ষক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। আর বিদ্যালয় দাপ্তরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এতে রাকিব ক্ষান্ত না হয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জোৎস্না আক্তারের নামে অশালীন কথা প্রচার করে। এতে রাকিবসহ অজ্ঞানামাদের বিরুদ্ধে স্ত্রীর পক্ষে হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মোঃ জাকির হোসেন লিটু।
অভিযোগ দায়ের ও রাকিব হোসেনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নসর নিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। আমিও চাই একজন যোগ্য লোক এ পদে আসুক। কিন্তু ওইদিন সকালে বেশ কিছু লোক বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন এবং হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। আমি ওই শিক্ষকদের ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ের সামনে গেলে তারা আমার সাথেও খারাপ আচরণ করেন।
জোৎস্না আক্তার আরো বলেন, ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় ও ৯০ ভাগ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি উপজেলার মফস্বল বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমি ২০১০ সালে এখানে যোগদানের পর এই সরকারের সময়ে ৪র্থ তলা ভিতবিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন, পুরানো ভবনের একটিতে তিনতলা, অন্যটিতে দোতলা ও ঘাটলা নির্মাণ, মাঠ ভরাট, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, লাইব্রেরী, বঙ্গবন্ধু কর্নার, বিজ্ঞানাগার ও পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন, টয়লেট নির্মাণসহ আরো অনেক কাজ করা হয়েছে। যা আগে কেউ করেনি। পড়ালেখা ও ফলাফলের দিক থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে ধারাবাহিক সাফল্য এবং জিপিএ-৫সহ বিদ্যালয়ের শতভাগ পাসও রয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য এতো কিছু করার পরেও একেবারে গুটি কয়েক লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর শনিবার ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ওই পরীক্ষায় আবেদনকারীদের মধ্যে ৩ জন উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক । বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের মধ্যে ২ জনের পক্ষে ভিন্নভাবে পক্ষ নেন স্থানীয় দুটি পক্ষ। যে কারণে হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে ম্যানেজিং কমিটির ক’জন সদস্য যেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হন এজন্যে তাদেরকে বাধাগ্রস্ত এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের সাথে অসদাচরণসহ হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ডিজির প্রতিনিধি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ আনেন একপক্ষ।
ওই সময়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার তাদেরকে সন্ত্রাসী বলেছেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রভাবিত করতে তিনি একজন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া তার সময়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হারিয়েছে। তাই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতসহ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এমন হট্টগোলের পরে বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে ডিজির প্রতিনিধি মোঃ সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন।
ঐ দিন পরীক্ষা নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সদস্য মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তার এবং হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নসর নিপু, ইউপি সদস্য হাবিব মোল্লাসহ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয় লাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।