প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জের বিভিন্ন মাঠে বোরো কৃষি জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ব্লাস্ট রোগের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। যে সকল জমির পাতায় ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে সেই জমির রোগ এখনই ছত্রাকনাশক দিয়ে ব্লাস্টমুক্ত করতে হবে। তা না হলে শীষে ব্লাস্ট আক্রান্ত হলে জমির ধান চিটা হয়ে যাবে। ভোরে কুয়াশা, দিনে রোদ আর রাতে ঠাণ্ডা পড়ার কারণে কৃষি জমিগুলো ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আর পুরাতন ধানের বীজ বপনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরজমিনের দেখা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কৃষি জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। সবুজ বিস্তীর্ণ কৃষি জমির মাঠের দিকে তাকালে ব্লাস্টে আক্রান্ত জমি অনায়াসে চোখে পড়ে। ব্লাস্টে আক্রান্ত কৃষি জমিতে খোলা চোখে তাকালে অনায়াসে বোঝা যায় ধান গাছের পাতা জ্বলে শুকিয়ে রয়েছে কিংবা শুকানোর ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে ধান গাছ। তবে আক্রান্ত বেশির ভাগ জমিতে ব্লাস্ট রোগ এখনো পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ধানের শীষ ছেড়ে ব্লাস্ট ধানের শীষে চলে আসলে সেই ধান চিটা হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার ৫শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ ও ৩৯ হাজার মেট্রিক টন জমিতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ধান ও চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে সম্প্রতি ধান চাষের জন্যে আবহাওয়া বৈরী হয়ে পড়ায় ধানে ব্লাস্ট চলে আসছে। রাতে শীত, ভোরে কুয়াশা আর দিনে খরতাপের রোদের কারণে ব্লাস্ট বেশি ছড়িয়ে পড়ছে বোরো ধানের জমিতে। তবে ব্লাস্ট থেকে রক্ষার জন্যে পুরাতন জাতের ব্রি-ধান ২৮/২৯ জাতের ধান আবাদ থেকে সরে আসতে হবে। এই জাতীয় ধানে ব্লাস্টসহ অন্য রোগের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। তবে ব্রি-২৮/২৯ ধান চাষ না করে নতুন জাতের ব্রি-৮৯/৯২ চাষের জন্যে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছ।
বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর কৃষি মাঠের স্কীম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উক্ত স্কীমে বেশ কিছু জমিতে ব্লাস্ট চলে এসেছে। তবে এখনো ধানের পাতার মধ্যে ব্লাস্ট সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই ব্লাস্ট যদি ধানের শীষে চলে আসে তাহলে কৃষক পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে।
একই মাঠের কৃষক স্থানীয় ইফসুফ মিজি, হুমায়ন সর্দার ও সেলিম সর্দার জানান, ব্লাস্ট আক্রান্ত জমিতে নিয়ম মেনে ছত্রাকনাশক ছিটানোর জন্যে অফিসার এসে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঔষধে কোনো উপকার হচ্ছে না।
বাকিলা ইউনিয়ন কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহপরাণ জানান, আমরা কৃষকদের বলেছি, পুরাতন জাতের ধানগুলো চাষ না করে নতুন জাতের ধান চাষ করতে। নতুন জাতের ধানে রোগবালাই কম হয়। পুরাতন জাতের ধানে রোগ বিশেষ করে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়। যারা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন জাতের ধান চাষ করছে তারা লাভবান হচ্ছে। যারা আমাদের কথা না শুনে পুরাতন জাতের ধান চাষ করছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, উপজেলার বিভিন্ন মাঠের কিছু জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এজন্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাতা ব্লাস্ট নির্মূল করা যায়, কিন্তু শীষ ব্লাস্ট প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ব্লাস্ট প্রতিরোধ করতে হলে জমি তৈরির আগে জমিতে পটাশ দিতে হবে। তবে ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পেতে হলে ব্রি-২৮/২৯ ধান চাষ না করে ব্রি-৮৮/৮৯/৯২/৯৬ জাতের ধান চাষ করতে হবে। পুরাতন বীজের পাশাপাশি আবহাওয়ার কারণে ধানে ব্লাস্ট রোগ এসেছে। এছাড়া যে সকল জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে, তাতে ট্রুপার শেষ বিকেলে আরো জিংক নিয়ম মেনে স্প্রে করতে হবে।