শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বন্ধুদের ভীষণ অনুভব করছি
আলআমিন হোসাইন ॥

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল নিউইয়র্কের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার উচ্চঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে কঠোর অধ্যবসায় আর নানা চড়াই-উতরাই পার করে তিনি এগিয়ে চলছেন।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পালের জীবন-সংগ্রাম মূলত শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে। তারপর কত বাধা-বিপত্তি আর ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁর ভাষায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁদের পরিবারের পুনর্জন্ম হয়। কেননা যুদ্ধকালীন অনেকে দেশত্যাগ করলেও তাঁর পরিবার উচ্চঙ্গার পৈত্রিক নিবাসেই ছিলো। এতে বহু হামলার শিকার হতে হয়েছিলো। ফলে পুরো পরিবার ছিলো একপ্রকার মৃত্যুর দুয়ারে। সেই কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যেও তিনি স্বপ্ন দেখতে ভুলেননি।

বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে অরুন চন্দ্র পাল ১৯৮০ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। প্রতিদিন ৬টা ১০ মিনিটের ট্রেনে চড়ে কষ্টকে আলিঙ্গন করে বাড়ি থেকে কলেজে আসতেন। কলেজের শিক্ষকদের সান্নিধ্যে মুহূর্তেই সেই কষ্ট ভুলেও যেতেন। পরে অবশ্য তিনি চাঁদপুর রামকৃষ্ণ মিশনে থাকার বন্দোবস্ত করেন। সেখানে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পালের সংগ্রামময় জীবনের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। যে কথাগুলো হয়তো তিনি বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজারো শ্রোতাকে শোনাতেন। কিন্তু পেশাগত কারণে বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি বন্ধুদের ভীষণ অনুভব করছেন। অনুভব করছেন এই মহামিলনমেলা। তাঁর কথাগুলো আজ হয়তো অনেক শিক্ষার্থীর মনে সাহস ও শক্তির সঞ্চার করবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : আমার জন্ম হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের উচ্চঙ্গা গ্রামে। প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত আমি গ্রামে থেকেই লেখাপড়া করি। আমার বয়স যখন সাত বছর তখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালে আমার ভারতে যাওয়া হয়নি। আমরা কিছুদিন গ্রামে ছিলাম। গ্রাম থেকে দশ মাইল দক্ষিণে আমার মামার বাড়ি। যুদ্ধকালীন মামার বাড়িতেই ছিলাম। যদি তখনকার কথা বিবেচনা করি, তবে এটা আমাদের পরিবারের দ্বিতীয় জন্ম। কারণ যুদ্ধকালীন অনেক রাত কাটিয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারে। অনেক রাত কাটিয়েছি নৌকায়-নৌকায়। এক রাতে বাবা আমাদের উচ্চঙ্গা গ্রামের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, এমন সময় মনা-মালিক্কা নামের দুই কুখ্যাত রাজাকারসহ পুরো দল বাবাকে ধরতে আসে। বাবা, আমার ঠাকুরমা এবং আমার বড় বোন বাড়িতে ছিলেন। রাজাকারের দল বাড়ি-ঘর ঘিরে ফেলে। এমন সময় বাবা আমাদের ধানের গোলার ভেতরে ঢুকেছিলেন। রাজাকারের দল ঘরে ঢুকে বাবাকে খুঁজতে লাগলো। ধানের গোলায় ছিলো আলাদা একটি দরজা। ওরা যখন দরজাটা খুলতে গেলো এমন সময় বাইরে থেকে একজন ডেকে বললো, তোরা চলে আয় মুক্তিযোদ্ধা আসবে। ডাক দেয়ার সাথে সাথে রাজাকারের দল বাইরে চলে আসে। এসে আমাদের বাগান ভিটাবাড়ির সব জায়গায় বাবাকে খুঁজতে লাগলো, কিন্তু পেলো না। এমন সময় পাশের গ্রামের বাবার এক মুসলমান বন্ধু জানতে পেরে বাবাকে উদ্ধার করার জন্যে আমাদের বাড়িতে আসেন। তিনি বাবাকে ডাকতে লাগলেন। এমন সময় রাজাকারের দল মুসলমান লোকটাকে (আমরা সাফিয়ার বাপ বলে ডাকতাম) দেখে ধরতে আসলো, লোকটি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলো কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে লোকটাকে ধরে মারাধর করে। ঠিক সে সময় আমার ঠাকুরমার সহযোগিতায় বাবা ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। বাবা দৌড়ে গিয়ে পাশের বাড়িতে ঢুকলো। ওরা ওখানেও বাবাকে খুঁজতে শুরু করলো। বাবা নিরূপায় হয়ে আবার বের হয়ে দৌড় দিয়ে পাশের মাঠে পানিতে ঝাঁপ দিলো। আর রাজাকারের দল বাবাকে ব্রাশ-ফায়ার করতে লাগলো। বাবা ধানক্ষেতের মধ্যে থাকায় তেমন কিছু হয়নি। ওখান থেকে বাবা সাঁতরে অলিপুর গ্রামে আমাদের পূর্বপরিচিত এক চাচার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানে ওদের পুকুরে স্নান করতে গেলে পুকুরপাড়ে রাখা বাবার টাকা চুরি হয়ে যায়। এমতাবস্থায় বাবার কাছে কোনো টাকাণ্ডপয়সা ছিলো না। ওখান থেকে কীভাবে আসবেন, এমন চিন্তা বাবাকে ভর করে। অলিপুরে বাবার পরিচিত আরেক ভাইকে বললেন, ভাই আমাকে একটা নৌকা ঠিক করে দাও, আমি সেন্দ্রা যাবো, ওখানে আমার শ্বশুর বাড়ি। আমি ভাড়ার টাকা ওখানে গিয়ে দেবো। বাবা রাত প্রায় একটার দিকে সেন্দ্রা পৌঁছলেন। এদিকে আমাদের বাড়ির সকল কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেলো, এমনকি আমাদের একটি টিনের চালা ঘর ছিলো তাণ্ডও খুলে নিয়ে গেলো। এভাবে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে যুদ্ধকালীন ন’মাস। তাই আমি মনে করি, যুদ্ধের পর আমাদের এটা দ্বিতীয় জন্ম।

ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা, পড়ালেখা, বাবার সাথে মাঠে কাজ করা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। লেখাপড়া করার প্রতি বেশি আগ্রহ থাকায় গ্রামের সকলের কাছে আমি ছিলাম খুবই আদরের।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৮০ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : সে সময়ে কলেজের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো ছিলো। কলেজে যদিও রাজনীতির চর্চা ছিলো, কিন্তু পড়ালেখার কোনো ব্যাঘাত ঘটতো না। চাঁদপুর কলেজ (পরে সরকারি হয়) পরিপূর্ণ থাকতো পূর্বাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে। পূর্বাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী না আসা পর্যন্ত কলেজের ক্লাসগুলোর পরিপূর্ণ হতো না। সম্ভবত সকাল নটায় কোর্ট স্টেশনে ট্রেন আসার সাথে সাথে কলেজ অন্যরকম রূপ ধারণ করতো। আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে একজন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন গণিত বিভাগের রঞ্জিত স্যার। যদিও আমরা বেশিদিন স্যারকে পাইনি। রসায়ন বিজ্ঞানের নলিনী স্যার, পদার্থবিজ্ঞানের ইউনুস স্যারের পাঠদানের প্রক্রিয়া ছিলো ভিন্নরকমের। রঞ্জিত স্যার আসতেন বই বুকের ওপর বাম হাতে ধরে রেখে, আরেক হাতে বোর্ডে অংক করতেন আর একটু একটু হাসতেন। আমি গ্রাম থেকে শহরের কলেজে আসায় প্রথম প্রথম শহরের তেমন কোনো সহপাঠী না থাকলেও পরে পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহারিক ক্লাসে অনেকের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে এ.টি.এম. মোস্তফা কামাল, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, মুকুল, জাকিরসহ অনেক বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে কাজী শাহাদাতের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। যদিও শাহাদাতের সাথে স্কুল জীবন থেকেই পরিচয় ছিলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য কোনো সুখের এবং দুঃখের স্মৃতির কথা জানতে চাই, যা আজও আপনার মনে পড়ে।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : কলেজ জীবনের প্রথম দিনের স্মৃতি আজও মনে পড়ে। বাড়ি থেকে প্রায় দুই মাইল পথ হেঁটে বলাখাল রেল স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে চড়ে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে আসি। তখন শত শত ছাত্র-ছাত্রী দেখতে পাই। আমাদের ক্লাস ছিলো গ্যালারিতে। আমি ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসার জন্যে বই-খাতা রেখে একটু বাইরে যাই, কিছুক্ষণ পরে এসে দেখি আমার বই-খাতা সামনের বেঞ্চে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে আমার বই-খাতা শেষের বেঞ্চে পাই। কারণ তখন শহরের কিছু ছাত্র-ছাত্রী আমার বই-খাতাগুলো পেছনের বেঞ্চে রেখে আমার বেঞ্চে বসে পড়ে।

কলেজে পড়াবস্থায় আমি কিছুদিন গ্রাম থেকে আসা-যাওয়া করি। পরে চাঁদপুর রামকৃষ্ণ মিশনে থাকার ব্যবস্থা করে নিই। গ্রাম থেকে সকাল সাতটায় চাঁদপুর পৌঁছা তখনকার সময় খুবই কষ্টকর ছিলো। আমি আর কাজী শাহাদাত একই সাথে বলাখাল রেলস্টেশন থেকে সকাল ৬টা ১০ মিনিটের ট্রেন ধরে চাঁদপুর চলে আসতাম এবং সাতটায় এবিএম ওয়ালিউল্লাহ স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়তাম। শাহাদাতের বাড়ি ছিলো স্টেশনের থেকে কিছুটা দূরে। আমার বাড়ি ছিলো প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে। আমি বাড়ি থেকে রওনা হতাম ভোর পাঁচটায়। শাহাদাত তার বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমরা দুজনে একসাথে স্টেশনের দিকে রওনা হতাম। একদিন প্রচুর কুয়াশার কারণে শাহাদাতের বাড়ির সামনে আসতে আমার দশমিনিট দেরি হয়ে যায়। আমরা বেশ কিছু দূর যাওয়ার পর ট্রেন চলে আসলো। আমরা ট্রেন ধরতে চেষ্টা করলাম, ততোক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিলো। হঠাৎ করে ট্রেন আমাদের সামনে এসে থেমে গেলো এবং কেউ একজন ডাকতে থাকলো ‘উঠো উঠো’। তাৎক্ষণিক ড্রাইভার আমাদের ডাকছেন, আর বলছেন, ‘আজকে দেরি করে ফেলেছো, তোমাদের জন্যে গাড়িটা থামালাম’। প্রতিদিন যাতায়াতের সুবাদে তারা জানতেন আমরা সকালে পড়তে যাই। সেজন্যে ট্রেন থামিয়ে দিলেন। আমার কলেজ জীবনের সবচেয়ে বড় স্মৃতি ছিলো এটিই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজে পড়াবস্থায় নিজেকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতেন?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : আসলে তখন স্বপ্ন নিয়ে ততোটা চিন্তা করতাম না। গ্রামের ছেলে ছিলাম, সব কিছু জানতাম না। বাবা বলতেন, ‘তোকে মানুষ হতে হবে, নিজের পরিচিতি তৈরি করতে হবে’। সেটা নিয়েই সবসময় ভাবতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ক্লাস এবং আড্ডাবাজির স্মৃতি সম্পর্কে কিছু বলুন।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : ক্লাসগুলো ছিলো প্রাণবন্ত। স্যাররা ক্লাসে আসলে কোনো সময় নষ্ট করতেন না। প্রত্যেকটি ক্লাসই আমার কাছে ভালো লাগতো।

কলেজে পড়াবস্থায় তেমন কোনো আড্ডাবাজি করার সময় আমার ছিলো না। আমি তা পছন্দও করতাম না। এর ভেতরে আরেকটা কারণও ছিলো, তা হলো পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহারিক সময় আমার গ্রুপের ৫ জন থাকতো। ওদের কাজগুলো আমাকে দিয়ে করাতো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমানে কলেজে এলে কোন্ স্মৃতি বেশি মনে পড়ে?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : মনে পড়ে কলেজের রঞ্জিত স্যার, মান্নান স্যার, বদিউল আলম স্যার ও ইংরেজি স্যারের দেয়া উপদেশগুলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি, কিন্তু আমার থাকা হচ্ছে না। কারণ আমি আমেরিকার নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। ছুটি না থাকায় আমি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারলাম না। আমি আমার অনেক পুরাতন বন্ধুদের ভীষণ মিস করছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দৃষ্টিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ কেনো সেরা?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কাছে তার নিজের কলেজ সবসময়ই সেরা থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই। বর্তমান অবকাঠামোর প্রেক্ষিতে কলেজের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। বিশেষ করে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষক পরিতোষ রায় স্যার এই কলেজেরই ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি (পাস) পরীক্ষায় মেধানুসারে প্রথম স্থান লাভ করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : আমি বাংলাদেশে কলেজে শিক্ষকতা করেছি ১৯ বছর। তারপর নিউইয়র্কে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর শিক্ষকতা করছি। আমি মনে করি, শিক্ষাব্যবস্থার দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আমার ক্লাসে পাই। কিন্তু ওরা বহির্বিশ্বের তুলনায় রিসার্সের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে থাকে। আমার প্রত্যাশা, চাঁদপুর সরকারি কলেজসহ প্রত্যেকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত রিসার্সের ব্যবস্থা থাকবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন কী?

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াবস্থায় আমি আমার মেধাশক্তিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। যার সুবাদে পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অর্জন করি এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কে গণিতে আবার মাস্টার্স করি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : নতুনদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : উদ্দেশ্যবিহীন লেখাপড়া মূল্যহীন। একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান থাকতে হবে যেখানে থেকে নিজের পরিচিতি তৈরি হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের ভেতর ভালো মানুষ হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উল্লেখিত প্রশ্নের বাইরে আপনার কোনো কথা থাকলে বলুন।

প্রফেসর ড. অরুন চন্দ্র পাল : চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে এটুকুই বলবো, শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এবং তাদের শ্রেণিকক্ষে রিসার্স করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য কমাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়