প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
মোঃ গোফরান হোসাইন চাঁদপুর আক্কাস আলী রেলওয়ে একাডেমির প্রধান শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি একজন সমাজসেবী ও সংগঠক। ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব কর্তৃক পুরস্কৃত হন।
মোঃ গোফরান হোসাইন ১৯৮৬-১৯৮৭ সেশনে চাঁদপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে এ কলেজ থেকে ডিগ্রি ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন করা হবে। উদযাপনকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি আপ্লুত। সম্প্রতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বের মুখোমুখি হয়ে তিনি সে অনুভূতি প্রকাশ করেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?
মোঃ গোফরান হোসাইন : ১৯৮৬-১৯৮৭ সেশনে আমি একাদশ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হই। যেদিন শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজে প্রথম পা রাখলাম সেদিনই অনুভব করলাম আমার সোনালি কৈশোরের ইতি হলো আজ। স্বপ্নিল স্কুলজীবনের ইতি টেনে কলেজের গণ্ডি-এ যেনো হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া। এ কলেজ থেকে ডিগ্রি ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?
মোঃ গোফরান হোসাইন : অতীত এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ কলেজের ব্যবধান বিশাল। এখনকার মতো সুবিন্যস্ত বিশাল বিশাল অট্টালিকা ছিলো না। তবে পরিবেশ ছিলো মনোরম। যা এখনো আছে। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে তুমুল আড্ডা হতো। স্থান ছিলো ক্যাফেটেরিয়া, সিঁড়ি কিংবা মাঠ। সোনালি সময় পার করেছি। সুন্দর সময় খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়!
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
মোঃ গোফরান হোসাইন : শিক্ষাজীবনে আমি অনেক আদর্শবান মহান শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দোয়ায় আজকে আমি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পেরেছি। প্রিয় শিক্ষকদের অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছি। ফলে জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে যে কোনো চ্যালেঞ্জ খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। শিক্ষকবৃন্দ আমাদের নিকট ছিলেন পিতৃতুল্য। পরম আদর-স্নেহে আমাদের আগলে রাখতেন। স্যারদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।
আমাদের সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এ. ডব্লিউ. এম. তোয়াহা মিয়া স্যার। মুহাম্মদ খলিলুর রহমান স্যার, এবিএম ওয়ালিউল্লাহ স্যার, প্রফুল্ল স্যার, মান্নান স্যার, ইউনুছ স্যার, তাজুল ইসলাম স্যার, আজগর স্যার, বদিউর রহমান স্যার আমার ভীষণ প্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে শ্রদ্ধেয় মরহুম তাজুল ইসলাম স্যার ছিলেন অনন্য। এই স্যারসহ চাঁদপুর সরকারি কলেজের যে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের রুহের মাগফেরাত/আত্মার শান্তি কামনা করছি। যারা বেঁচে আছেন তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
আমার সহপাঠীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নূর হোসেন পাটওয়ারী (বর্তমানে হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান), বিএনপি নেতা অ্যাডঃ জহির উদ্দিন বাবর, গিয়াসউদ্দিন কবির, ডাঃ মোঃ ইউসুফ আলী, শাহনেওয়াজ টেলু প্রমুখ। সহপাঠীদের সাথে খুবই আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। একে অপরের সাথে সমন্বয় করে পড়াশোনা করতাম। পরিবারের বাইরে বন্ধুরাই ছিলো আরেক পরিবার। তারা ছিলো সুখণ্ডদুঃখের সাথী।
এছাড়া ক্লাসের অন্য সহপাঠীদের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক ছিলো। আমরা বড় ভাইদের শ্রদ্ধা করতাম, বিনিময়ে আদর-স্নেহ পেতাম। ছোট ভাইদের নিজের ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম, সুখে-দুঃখে এগিয়ে যেতাম। পড়াশোনায় সহযোগিতা করতাম, বিনিময়ে তাদেরও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেতাম। কলেজের কর্মচারীদের সাথেও আমাদের সুসম্পর্ক ছিলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
মোঃ গোফরান হোসাইন : প্রাণের বিদ্যাপীঠের ৭৫ বছরপূর্তিতে শামিল হতে আমার সন্তানসহ দ্রুত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছি। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্ধুদের খুঁজে পাবো, যা ভাবতেই মন ভালো হয়ে যায়। মনে জমে থাকা কত না বলা কথা বলা হবে তার ইয়ত্তা নেই। ৭৫ বছরপূর্তিকে আমার জীবনের সেরা উপহার হিসেবে মনে করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?
মোঃ গোফরান হোসাইন : কলেজটি নিয়ে খুবই আশাবাদী। আমার প্রত্যাশা, কলেজটি হবে বাংলাদেশের সেরা কলেজগুলোর একটি। বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি চাঁদপুরের কৃতী সন্তান। কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলে আমি মনে করি। এই ঘোষণাটি ৭৫ বছরের এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে আসুক।
কলেজের পাশ দিয়ে যখনই যাই মনটা ভালো যায়। কলেজের বিশাল অবকাঠামো, মনোরম পরিবেশ যে কারো মন ভালো করে দিতে বাধ্য। এজন্যে ধন্যবাদ জানাই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশকে। তিনি নিরলসভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সব শিক্ষকের সমন্বয়ে কলেজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে যা দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উল্লেখিত প্রশ্নের বাইরে আপনার কোনো কথা থাকলে বলুন।
মোঃ গোফরান হোসাইন : বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে নিজেকে এ কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলে মানুষের কাছ থেকে অন্যরকম আদর-আপ্যায়ন পাই, যা খুবই ভালো লাগে। আমিও ব্যক্তিগত জীবনে চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুরূপ ভালোবাসি। তাদেরকে আমার একান্ত আপনজন হিসেবে মনে করি। একটি স্মৃতি মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় সেখানকার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছি, যা শুধুমাত্র চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণেই হয়েছে।