শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে আমরা সবাই সারথি
আলআমিন হোসাইন ॥

মেঘনাপাড়ের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর সরকারি কলেজ। বর্তমানে এ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর অসিত বরণ দাশ। ১৯৪৬ সালের ১ জুন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উক্ত কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাবু পরেশ চন্দ্র গাঙ্গুলী এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি সরকারিকরণ হয়। ২০২১ সালে ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কলেজটি ৭৫ বছর পূর্ণ করে। আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৭৫ বছরপূর্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আর এ আয়োজনের আহ্বায়ক প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।

৭৫ বছরের দীর্ঘ পথচলায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন যেমন হয়েছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। বর্তমানে এ কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ৯শ’ ১০ জন। ১৭টি বিভাগে অনার্স ও ১৬টি বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। পাঠদানের জন্যে রয়েছেন ৮৭ জন শিক্ষক।

‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি : প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুখোমুখি’ শীর্ষক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রফেসর অসিত বরণ দাশের কথা তুলে ধরা হলো। তিনি ১৯৮২ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি উক্ত কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : আমার জন্ম কচুয়া উপজেলার রহিমানগরের নাওড়া গ্রামে। ১৯৬৬ সালের ১ অক্টোবর আমার জন্ম। পরে আমরা সপরিবারে চাঁদপুর শহরে চলে আসি। সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে আমরা সপরিবারে ভারতে আশ্রয় নিই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুনরায় চাঁদপুরে ফিরে আসি। ১৯৭২ সালে হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পরে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : ১৯৮২ সালে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। এ প্রসঙ্গে স্মৃতিময় একটি ঘটনা রয়েছে। সে সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজ পুরো জেলায় একমাত্র সরকারি কলেজ হওয়ায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো প্রচুর। তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. ডব্লিউ. মোঃ তোয়াহা মিয়া স্যার ঘোষণা দিলেন, অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। আমি যেহেতু হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অ্যাগ্রিকালচার বিভাগ থেকে পাস করি, তাই এ ঘোষণায় আমিসহ অন্যরা হতাশায় পড়ে যাই। কেননা আমাদের স্বপ্ন ছিলো চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়া। যদিও সে সময় অ্যাগ্রিকালচারকে সায়েন্সে রূপান্তরের একটি বিষয় ছিলো, কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্যার প্রথমে রাজি হননি। পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, যারা প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সুযোগ দেয়া হবে। হয়তো সে সময় যদি চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে না পারতাম তাহলে হয়তো আমি বর্তমানে অধ্যক্ষ হতে পারতাম না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : সে সময় এরশাদ সরকার ক্ষমতায় ছিলো। রাজনৈতিক একটি অস্থিরতা ছিলো। ক্যাম্পাস উত্তাল থাকতো মিছিল-মিটিংয়ে। এর মধ্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজের পড়াশোনার মান এতোটুকুও কমেনি। নিয়মিত ক্লাস হতো। কলেজে ভবন বেশি ছিলো না। ফলে শ্রেণিকক্ষের অভাব ছিলো। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তাজুল ইসলাম স্যার, ফিজিক্সের ইউনুছ স্যার, গণিতের প্রফুল্ল স্যার, মান্নান স্যার, প্রাণিবিদ্যার বদিউর রহমান চৌধুরী স্যারের মতো মেধাবী একঝাঁক শিক্ষক ছিলেন।

আমাদের সময় প্র্যাকটিকাল ছাড়া কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো না। যারা নানা কারণে ক্লাস করতে পারতো না, তাদেরও অন্তত প্র্যাকটিকাল করতে হয়েছে। প্র্যাকটিকালের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি দৃশ্যপট লক্ষ্যণীয়, সেটি হলো কেউ হয়তো যে কোনো লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেছে, কিন্তু প্র্যাকটিকালে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আসলে এটি হওয়া উচিত নয়। প্র্যাকটিকাল না করে প্র্যাকটিকাল নম্বর পাওয়াটা একেবারে বেমানান সংস্কৃতি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উন্নত মানের ল্যাব আমাদের সময়ও ছিলো, এখনো আছে। আমার ধারণা, খুব কম কলেজেই এতো সমৃদ্ধ ল্যাব রয়েছে। আরেকটি বিষয়, চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের দক্ষতানুযায়ী পরিপূর্ণ বিকাশসাধনে শিক্ষকরা অত্যন্ত তৎপর। এ কলেজে পড়তে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : শিক্ষাজীবনে বহু গুণী, মেধাবী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন শিক্ষকের সান্নিধ্য আমি লাভ করেছি। ফলে আমার প্রিয় শিক্ষক অনেক। তার মধ্যে ইংরেজি বিভাগের এবিএম ওয়ালিউল্লাহ স্যার, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তাজুল ইসলাম স্যার, ফিজিক্সের ইউনুছ স্যার, গণিতের প্রফুল্ল স্যার, মান্নান স্যার, প্রাণিবিদ্যার বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার অন্যতম। স্যারদের শাসন ছিলো মধুর। এতে ভয় যেমন ছিলো, আবার স্যারদের প্রতি আকর্ষণও কাজ করতো। মোটকথা, স্যারদের শাসন ছিলো অভিভাবকের ন্যায় পরম মমতায় আগলে রাখার মতো। কখনো স্যারদের পর মনে হয়নি, মনে হতো একান্ত আপনজন, যাঁরা আমাদের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

সহপাঠীদের মধ্যে সবার সাথেই বর্তমানে যোগাযোগ আছে। আমাদের ১৯৮২-৮৩ ব্যাচের সহপাঠীদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে। অনেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে অনেকে ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে চাঁদপুর সরকারি কলেজে যোগদান করেন কবে?

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করি। যে বিষয়টাকে অনেকেই ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ কিংবা ‘রাজনীতি বিজ্ঞান’ বলে। ১৯৯০ সালে মাস্টার্স পাস করি। ১৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করি। আমার প্রথম পোস্টিং হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজে। এতে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। তবে একটু অস্বস্তি ছিলো, সেটা হলো শ্রদ্ধেয় যে স্যারদের কাছ থেকে আমি শিক্ষাগ্রহণ করেছি, আজ সেই শিক্ষকদের সাথে সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। সে সময় অধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর কাজী আমীন আহমদ। নিয়োগ পাওয়ার পর আমি অধ্যক্ষ স্যারের রুমে গেলে দেখি আমার ছাত্রজীবনের শিক্ষক তাজুল ইসলাম স্যার, মান্নান স্যার ও বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার উপস্থিত। ফলে স্যারদের সামনে বসতে আমার অস্বস্তি হয়। তখন স্যাররা আমাকে অভয় দিলে বললেন, ‘তুমি নির্দ্বিধায় বসতে পারো। তুমি এখন আমাদের সহকর্মী’। সম্মানিত শিক্ষকদের সহকর্মী হিসেবে পেয়ে যেমন শ্রদ্ধাবোধ কাজ করেছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিকতাবোধ কাজ করেছে। ফলে প্রাণের প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পেরেছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি এ কলেজে উপাধ্যক্ষ এবং বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন, আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : এ এক অন্যরকম অনুভূতি। উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কিন্তু দুর্দান্তভাবে কাজ করা যায়। কেননা মাথার উপর ছাতার মতো অধ্যক্ষ স্যার থাকেন। কেননা একজন অধ্যক্ষের সহযোগী হিসেবে উপাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেন। সেক্ষেত্রে আমি পেয়েছিলাম প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন স্যারকে। তিনি ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই। স্যার আমার ভীষণ পছন্দ ও পরম শ্রদ্ধার একজন মানুষ। উপাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় যে কোনো কাজে স্যারের পূর্ণ সহযোগিতা পেতাম। স্যারের দিকনির্দেশনায় সহজেই যে কোনো কাজ সম্পন্ন করতাম। কিন্তু যখন অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পেলাম, তখন চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। এতে যেমন আনন্দ, তেমনি বিষাদও ছিলো। কেননা প্রিয় অধ্যক্ষ স্যারের ছায়া থেকে বঞ্চিত হলাম। কেননা একজন অধ্যক্ষের দায়িত্ব অনেক। প্রচুর চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করতে হয়। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ একযোগে কাজ করলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত এগিয়ে যায়। আমি বলতে পারি, বর্তমান উপাধ্যক্ষও সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা একসাথে কাজ করি। অন্যান্য সহকর্মীর সাথে সমন্বয় করেই আমরা কলেজের সামগ্রিক উন্নয়ন ও পড়াশোনার মান নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ছাত্রাবস্থায় এ কলেজের সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কেমন ছিলো? বর্তমানে কেমন হচ্ছে?

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : আমার ছাত্রাবস্থায় এ কলেজের কাঠামোগত এতো বিস্তার ছিলো না। সে সময় শুধুমাত্র একটি ভবন ছিলো। কমনরুম ছিলো। খেলাধুলার পরিবেশ ছিলো। আন্তঃক্রীড়া অর্থাৎ টেবিল টেনিস, ক্যারাম, দাবা, হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলা হতো। বাস্কেটবল খেলায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য রয়েছে। কেননা এ কলেজের বাস্কেটবল গ্রাউন্ড স্বনামধন্য অনেক খেলোয়াড় জন্ম দিয়েছে। বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো। আমি আগেই বলেছি, সে সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিস্তার এতো ছিলো না। শিক্ষার্থী সংখ্যাও কম ছিলো। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক খুবই ভালো ছিলো। খেলাধুলা ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় কলেজটি সবসময় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতো। ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু আবদুল মালেক ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী এ কলেজের শিক্ষার্থী। খেলাধুলার বিষয়ে তৎকালীন ক্রীড়া শিক্ষক স্বপন কুমার সাহা ছিলেন অত্যন্ত তৎপর। তিনি এখনো আছেন।

বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রজন্ম খেলাধুলার প্রতি খুব বেশি আগ্রহী নয়। এটি আমাদের জাতীয় সমস্যায় রূপান্তর হয়েছে। এ প্রজন্ম খেলাধুলা দেখতে ভালোবাসে, ক্রিকেট ভালোবাসে, ফুটবল ভালোবাসে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মাঠে গিয়ে খেলছে না। মোটকথা, খেলাধুলা নিয়ে তারা মননে অনুশীলন করছে, কিন্তু নিজে খেলছে না। ফলে ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের যতটুকু সাফল্য অর্জনের কথা ছিলো, তা কিন্তু হয়নি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর বর্তমান অবকাঠামোগত উন্নয়নের পার্থক্য সম্পর্কে কিছু বলুন।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগের বিষয়। অতীত আর বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজের পার্থক্য তো অবশ্যই থাকবে। চল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যকার পার্থক্য তো বিশাল। বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। আমাদের চাঁদপুর সরকারি কলেজের বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টারও কমতি ছিলো না। আগে এ কলেজে এতো ভবনের বিন্যাস ছিলো না। বর্তমানে মূল ভবনের পাশাপাশি ভবন ২, ৩, রাজু ভবন ও বর্তমান প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। গোডাউন হয়েছে। আগে ছাত্রীনিবাস ছিলো না, এখন দুটি ছাত্রীনিবাস আছে। মসজিদসহ দুটি ছাত্রাবাস আছে। আগে কলেজ মসজিদ ছিলো টিনশেড, বর্তমানে পাঁচতলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে। পুরাতন বাস্কেট গ্রাউন্ড ভেঙ্গে সেখানে সম্পূর্ণ নূতনভাবে করা হয়েছে। ‘বিসিসি কম্পিউটার ল্যাব’ নামে ৩৩টি কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য একটি বাস রয়েছে। স্মারক স্তম্ভ ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলার প্রথম শহিদ মিনার স্থাপন করা হয় এই কলেজে। সে শহিদ মিনারটি সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ন রেখে নতুন শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। আগে কলেজের ভেতরে রাস্তা ছিলো না, বর্তমানে চতুর্দিকে দৃষ্টিনন্দন রাস্তা করা হয়েছে। কলেজের পুকুরের গাইডওয়াল করা হচ্ছে। গাছপালা একেবারে ছিলো না বললেই চলে, বর্তমানে সারি সারি গাছ রোপণ করা হয়েছে। তৎকালে চাঁদপুর কলেজ মাঠ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত অবস্থায় ছিলো। কলেজের চতুর্দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনি অর্থাৎ দেয়াল ছিলো না। আগে চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রধান ফটক দুর্বল ছিলো। আমরা সে সময় পশ্চিম দিকের ফটক ব্যবহার করতাম, এটিই ছিলো মূল ফটক। পূর্বদিকের ফটক খুব বেশি ব্যবহৃত হতো না। বর্তমানে পূর্বদিকের ফটকটি ভেঙ্গে দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। কলেজের অন্যান্য সম্পদণ্ডস্থাপনাও আগে বেদখল ছিলো। আমাদের শেরে-ই-বাংলা হোস্টেল, প্রফেসরপাড়াস্থ ছাত্রীনিবাস ছিলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। কিন্তু বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ২০০৯ সালে চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হয়ে আমাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে দেন। এজন্যে আমরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সমমানে আমাদের কলেজকে উন্নীত করেন। ফলে ক্রমান্বয়ে কলেজটি উন্নত হতে থাকে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির ডিও-লেটারে কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ গতিশীলতা লাভ করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এ কলেজে ছাত্রজীবন এবং শিক্ষকতা জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মৃতির কথা জানতে চাই।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : ছাত্রজীবনে বহু স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে। চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করা ছিলো আমার জন্যে বিশাল স্বপ্নের বিষয়। কেননা এ কলেজে পড়ার স্বপ্ন আমি মনের গহীনে লালন করতাম। ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারিনি। সে সময় মস্কো ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর স্কলারশীপ দিতো। চাঁদপুরের অনেকেই সে স্কলারশীপে সুযোগ পেয়েছে। আমিও স্বপ্ন দেখতাম, স্কলারশীপ নিয়ে মস্কো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার। সেজন্যে আমি প্রচুর পড়ালেখা করেছি। কিন্তু যতোটুকু ফলাফল অর্জন করলে সেখানে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় তা আমি অর্জন করতে পারিনি। সেজন্যে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে একবছর বিরতি দিয়ে ১৯৮৫ সালে পুনরায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। তাতেও আমি ব্যর্থ হই।

শিক্ষকতা জীবনের মধুর স্মৃতি অনেক। মনে আছে, চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানকালে প্রথমে কিছুদিন অস্বস্তিতে ছিলাম। কেননা শ্রদ্ধেয় যেই স্যারদের কাছ থেকে আমি শিক্ষাগ্রহণ করেছি, সেই শিক্ষকদের সাথে সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চাট্টিখানি কথা নয়। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে যায়। আমি যেহেতু এ কলেজেরই শিক্ষার্থী, সেজন্যে আমার সব শিক্ষক ও অন্য কর্মচারীদের যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতাম। এখনো আমার সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর সরকারি কলেজের বর্তমান অবস্থানকে সার্বিকভাবে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : ফলাফলসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজ খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও সহপাঠক্রমিকে এ কলেজ চমৎকারভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি চাঁদপুর সরকারি কলেজকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কলেজে রূপান্তর করতে চাই, তাহলে এ অবস্থানকে ধরে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আর এটিই এখন আমাদের স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এ স্বপ্নপূরণ খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। এজন্যে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে কাজ তথা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন। আমি মনে করি, চাঁদপুর সরকারি কলেজ হবে সবার জন্যে উন্মুক্ত। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে। যে যেই বিষয়ে ভালো সে সেই বিষয়ে এখানে পড়াশোনা করবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আপনি। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : আগেই বলেছি, আমি এ কলেজের শিক্ষার্থী। পরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, উপাধ্যক্ষ এবং বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। চাকুরিজীবনে শেষপ্রান্তে এসে এতো বড় একটি আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি মনে করি, এখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থী যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাঁরা সকলেই দেশবরেণ্য। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার মহোদয়, নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিছুর রহমান ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ বহু বরেণ্য মানুষ এ কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ৭৫ বছরপূর্তির এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু গুণী মানুষের সাথে আমাদের আন্তঃসংযোগ ঘটবে, এটি হবে আমাদের জন্যে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি বহুল প্রতীক্ষিত সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন আয়োজনের প্রস্তুতি সবকিছু একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান যুগ ডিজিটাল। ই-কমার্সের যুগ। এখন কমিউনিকেশন ডেভলপমেন্টের যুগ। সে জায়গায় বসে যে কোনো কাজকে বাস্তবায়ন করা খুব বেশি কঠিন নয়। শুধুমাত্র চিন্তা-চেতনায় নান্দনিকতা ও সমন্বয় থাকতে হবে। এ দুটির মাধ্যমে যে কোনো জটিল কাজকেও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে আমরা অর্থনৈতিক বিষয়ে কাজ করছি। আমরা খুবই আশাবাদী, পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে পারবো। তাছাড়া বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্যে যেসব কমিটি করা হয়েছে, সেখানে যোগ্যতাসম্পন্নদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে কাজটি আরো সহজ হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আশাজাগানিয়া সাড়া আমরা লক্ষ্য করেছি। সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি। মোটকথা, রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এক প্রকার প্রতিযোগিতা হয়েছে। সবারই বিশ্বাস, এক মাহেন্দ্রক্ষণের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে আমরা সবাই সারথি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়