সিলেটে দুই স্বামীর টানাটানি করা নারীকে ফিরে পেতে শাহরাস্তিতে মানববন্ধন

পরকীয়া প্রেমিকের সাথে উধাও হওয়া ৪ সন্তানের জননী আইরিন সুলতানাকে ফিরে পেতে ৩০ জানুয়ারি সোমবার বেলা সাড়ে ৩টায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাদিয়ায় মানববন্ধন করেছে স্বামী ও সন্তানেরা। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি বিকেলে সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকার আয়েশা মেডিকেয়ারের সামনে ওই নারীকে ২ ব্যক্তি স্ত্রী দাবি করায় সৃষ্ট ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় ‘এক নারীর স্বামী দাবি করে দুজনের হাতাহাতি, পরে তিনজনই থানায়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে।

শাহরাস্তি পৌরসভার বাদিয়া গ্রামের ডাকবাংলো বাড়ির সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে ওই নারীর প্রথম স্বামী মোঃ খোকন মিয়া (৪৫), বড় ছেলে সাঈদুল ইসলাম মামুন (১৮), ছোট ছেলে রোমান (৪) ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ওই নারীর প্রথম স্বামী মোঃ খোকন মিয়া জানান, ২০০৪ সালে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বনকুট গ্রামের শাহজাহানের কন্যা আইরিন সুলতানার সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১১ সালে তিনি পরিবারের সুখের কথা ভেবে মালদ্বীপ চলে যান। ৯ বছর প্রবাস জীবনে তিনি ১৬ লাখ টাকা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে দেশে পাঠান। এছাড়া ৩ ভরি স্বর্ণ, জমি বিক্রয় করা সাড়ে ৫ লাখ টাকা, এনজিও থেকে নেয়া ১ লাখ টাকা, ডিপোজিটের ৭৫ হাজার টাকা স্ত্রীর কাছে গচ্ছিত ছিলো। ২০২০ সালে প্রবাস থেকে ছুটিতে এসে তিনি স্ত্রীকে পিত্রালয় থেকে বাড়িতে আনতে যান। ওই সময় তিনি স্বামীর সাথে না এসে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে কুমিল্লার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৪নং আমলী আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে ৪ সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে স্ত্রী ও সন্তানদের সন্ধান চেয়ে তিনি কুমিল্লার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি দরখাস্ত করেন। এরপর আইরিন সুলতানা তাদের ২ মেয়ে সুমাইয়া (১৬) ও সাদিয়াকে (৮) দেবীদ্বারে আটকে রেখে খোকনের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে। ২ ছেলে মামুন (১৮) এবং রোমানকে (৪) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে খোকন মিয়ার বাড়িতে পাঠিয়ে নিজে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। ইত্যবসরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় খোকন প্রবাসের চাকরি হারিয়ে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাভার্ড ভ্যান চালানোর চাকরি নেন। গত ১৮ জানুয়ারি বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে সিলেটের লামাবাজার আয়েশা মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় আইরিন সুলতানাকে কবির নামক এক যুবকের সাথে পেয়ে যান খোকন মিয়া। এ সময় আইরিন ওই যুবককে তার স্বামী পরিচয় দেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাক্বিত-া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তাদের ২ জনকে আটকে রেখে খোকনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। খোকন মিয়া তার ৪ সন্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে আত্মসাৎকৃত অর্থসহ তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

তাদের বড় ছেলে সাঈদুল ইসলাম মামুন (১৮) জানান, আমি যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার পিতা প্রবাসে যান। মা আমাদের জোর করে মামার বাড়ি নিয়ে যান। আমি বিভিন্ন সময় তাকে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে দেখেছি। আমি নিষেধ করেছি এবং আমার নানাকে জানিয়েছি। তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। ওই বাড়িতে আমার ২ বোনকে আটকে রেখেছে। আমি চাই না আমার বোনেরা মায়ের মতো খারাপ হোক। আমার বাবাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছে, তিনি আমাদের কাছে থাকতে পারেন না। আমার ছোট ভাইটাকে রেখে তিনি অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে গেছেন, আমি এটার বিচার চাই।

এলাকার যুবক মোঃ ইমাম হোসেন কাশগরি বলেন, আইরিন সুলতানার দায়ের করা মামলায় খোকনকে নিষ্কৃতি দেয়ার জন্যে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এলাকার প্রবীণ মোঃ ফজর আলী জানান, আইরিন খোকনের প্রবাস থেকে পাঠানো অর্থ ও জমি বিক্রি করা টাকা নিয়ে পিত্রালয়ে চলে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

স্থানীয় বাদিয়া এম. হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ নূরউদ্দিন মিরণ জানান, আইরিন সুলতানা খোকনের অর্থ আত্মসাৎ করে কুমিল্লা গিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। এ নিয়ে অনেক দেন-দরবার হয়েছে, যেখানে বিষয়গুলো প্রমাণিত। সালিসে তাকে স্বামীর বাড়িতে ফেরার কথা বললে সে পালিয়ে সিলেট চলে যায়।