‘কেনো এতো মিথ্যাচার, প্রপাগান্ডা! পাঠ্যপুস্তকের কোথাও নেই বানর থেকে মানুষ সৃষ্টি। আছে এর উল্টোটা। লেখা আছে বানর বা শিম্পাঞ্জী মানুষের পূর্বপুরুষ নয়। ছবি আছে আদিম যুগের মানুষের ছবি। অথচ সেখানে এডিট করে বানরের ছবি দেয়া হয়েছে। পর্দা বিরোধী কোনো কথা লেখা নেই। লেখা আছে- একশ’ বছর আগে নারীদের যে গৃহবন্দী করে রাখা হতো, তারা সূর্যের আলো দেখতে পেতো না সে সব কথা। অথচ এসবকে বিকৃতি করে নতুন পাঠ্যক্রমের বিরুদ্ধে চরমভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এ ধরনের মিথ্যাচার তো কোনো ঈমানদার মুসলমানদের কাজ হতে পারে না। অবশ্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়। একসময় বলা হয়েছিলো নৌকায় ভোট দিলে ফেণী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি হবে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে, আওয়ামী লীগ একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে, এসবের কিছুই হয়নি। ফেণী পর্যন্ত ভারত হয়ে যায় নি, মসজিদে আজানও হচ্ছে নিয়মিত। শুধু আজানই নয়, শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যেক উপজেলায় মডেল মসজিদ করে দিচ্ছে। সেই পুরোনো ষড়যন্ত্রকারীরা এখন নতুন করে নতুন পাঠক্রম নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, সোচ্চার হতে হবে।’ এভাবেই নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে যে প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে তার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি গতকাল শনিবার চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের এমএম নূরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫ বছরপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গুণীজন সংবর্ধনাও ছিলো। সংবর্ধিত অতিথিরা প্রধান অতিথি থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেয়া অনেক কষ্টসাধ্য। যারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তারা এটি বুঝতে পারেন। এ বিদ্যালয়টি মানসম্পন্ন বিদ্যালয় হিসেবে ইতিমধ্যেই নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের ও জনগণের সেবা করবে এ মনোভাব নিয়ে সকলকে কাজ করতে হবে। সীমিত সম্পদের দেশে, দেশের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানব সম্পদে পরিণত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরো বলেন, মুখস্থ করে পড়ার দিন শেষ, এখন যুগ পাল্টে গেছে। শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। পরীক্ষাভীতি দূর করে আনন্দের সাথে পড়ালেখা করবে। গণিত ও বিজ্ঞানের রহস্য উন্মোচন করতে হবে। যখন যা শিখবে তা প্রয়োগ করলে সারাজীবন মনে থাকবে। তিনি বলেন, শুধু গণিত, বিজ্ঞান আর আইসিটি শিখলে হবে না, মূল্যবোধও শিখতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তিনি এই বিদ্যালয়ের সাফল্য কামনা করেন এবং উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

‘স্মৃতির টানে প্রিয় প্রাঙ্গণে, এসো মিলি প্রাণের বন্ধনে’ -এ শ্লোগানে এমএম নূরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি তথা রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী-২০২৩ শনিবার দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানস্থল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পত্নী আলহাজ্ব মনজুরা বেগম। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মনজুরুল হক শোয়েবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী এরশ্বাদ মিয়াজী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুলসহ অতিথিবৃন্দ।

সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের চীফ ইঞ্জিঃ জহিরুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান, মেসার্স ফারুক এন্ড মৃধা ব্রাদার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারুক আহমেদ মৃধা ও সৌদী প্রবাসী মোঃ কাউসার খান। প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদ এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করে।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন পাটওয়ারী, জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টা জেসমিন মুন্নী। আরো উপস্থিত ছিলেন আশিকাটি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ।

অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর জারি গান পরিবেশন।

এদিন সকালে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উৎসব অনুষ্ঠান। এরপর আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, গুণিজন সংবর্ধনা, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবশেষে র‌্যাফেল ড্রয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এমএম নূরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফয়জুল হক ও গীতা পাঠ করেন স্কাউট সদস্য রবিন্দ্র সরকার।