শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

এই কলেজ প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকার প্রেরণা দিয়েছে
আলআমিন হোসাইন ॥

হাসান আলী প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও লেখক। প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা করেন। তিনি এজিং সাপোর্ট ফোরামের সভাপতি। শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘প্রবীণ কথা’ (২০২০) ও ‘প্রবীণের গল্প’ (২০২১)।

হাসান আলী ১৯৭৯ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি : প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুখোমুখি’ শীর্ষক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ তাঁর কথা তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

হাসান আলী : আমার জন্ম সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৯৬৩ সালে। বাবা ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় চাকরি করতেন। এনজিএফএফ হাইস্কুলে আমার স্কুল জীবনের শুরু। পিতার মৃত্যুর পর ফরিদগঞ্জ উপজেলার হর্ণিদুর্গাপুর গ্রামে নিজেদের বাড়িতে চলে আসি। ১৯৭৯ সালে সাহেবগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?

হাসান আলী : ১৯৭৯ সালে একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?

হাসান আলী : দারুণ একটা পরিবেশ ছিলো। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার মান ও ফলাফল ছিলো ঈর্ষণীয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

হাসান আলী : আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন স্যার এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খলিলুর রহমান (২) স্যার ছিলেন বেশি প্রিয়। আমার লেখক হয়ে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। সহপাঠীদের মধ্যে এম. কে. মজিবুর রহমান (এজিএম অগ্রণী ব্যাংক), ফারুক, নূরুজ্জামান, চয়ন কুমার দাস, কিংশুক রায়, নিতাই চৌধুরী, মনির, আব্দুল হাই, হিরো, অমল, পঙ্কজ, নজরুল ইসলামসহ অনেকের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিলো। কারো কারো সাথে ৩০/৪০ বছর হয়ে গেছে দেখা হয় না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য কোনো সুখের এবং দুঃখের স্মৃতির কথা জানতে চাই, যা আজও আপনার মনে পড়ে।

হাসান আলী : সুখের স্মৃতি হলো, প্রথমদিন অনেক ছাত্রসহ প্রথম ক্লাসে উপস্থিত হওয়া। আমার স্বপ্ন ছিলো চাঁদপুর কলেজে পড়া। সেদিন স্বপ্নপূরণের আনন্দ আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছিলো। দুঃখের স্মৃতি হলো, ১৯৮৩ সালের বি-কম পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ক্লাস এবং আড্ডাবাজির স্মৃতি সম্পর্কে কিছু বলুন।

হাসান আলী : বাংলার ক্লাস ছিলো আমার খুবই প্রিয়। নিজের ক্লাস বাদ দিয়ে অন্য সেকশনের বাংলা ক্লাসের পেছনের দিকে গিয়ে বসে শুনতাম। সৈয়দ আবদুস সাত্তার স্যার, জয়সেন বড়ুয়া স্যার, খলিলুর রহমান স্যারের ক্লাস কখনো মিস করতাম না। আমি বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র, কিন্তু কলাবিভাগে দর্শন, সমাজকল্যাণ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাসের ক্লাসে আমি বেশি সময় ধরে থাকতাম।

ক্লাসের ফাঁকে কলেজ ক্যান্টিনে সিঙ্গারা-চা খেতে খেতে আড্ডা জমতো। কখনো কখনো আড্ডার কারণে ক্লাস মিস করতাম। রাজনৈতিক কর্মী হবার কারণে বন্ধুদের বাইরে অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও আড্ডা দিতে যেতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমানে কলেজে এলে কোন্ স্মৃতি বেশি মনে পড়ে?

হাসান আলী : কলেজের পুরাতন ভবন আর খেলার মাঠ আমার কিশোর বয়সে অহঙ্কার করবার, মাথা উঁচু করে সাহসের সাথে দাঁড়াবার শক্তি জুগিয়েছিলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

হাসান আলী : ৭৫ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমার অনেক আবেগ এবং আনন্দের। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। নতুনদের সাথে যোগাযোগ গড়ে উঠবে। অন্যদের স্মৃতিচারণ শুনবো। সুযোগ পেলে নিজের স্মৃতিচারণ করবো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দৃষ্টিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ কেনো সেরা?

হাসান আলী : চাঁদপুর কলেজ লেখাপড়ায়, খেলাধুলায়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, আন্দোলন-সংগ্রামে, শিল্প-সাহিত্য চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, কবি, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সংগঠক, রাজনীতিবিদ, গায়ক, সাংবাদিক, আমলা তৈরি করেছে এবং সৃজনশীল মানুষ তৈরিতে পালন করেছে প্রধান ভূমিকা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?

হাসান আলী : চাঁদপুর সরকারি কলেজের মূল ভবনটিকে অবিকল রেখে অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। খেলার মাঠে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সহনশীল ও যৌক্তিক মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলমান রাখা জরুরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন কী?

হাসান আলী : এই কলেজ আমাকে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকার প্রেরণা দিয়েছে। সততাণ্ডদক্ষতাণ্ডযোগ্যতাণ্ডমর্যাদার সাথে জীবনযাপনের মানসিক ভীত তৈরি করে দিয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কোন্ কোন্ সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন?

হাসান আলী : আমি জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলাম। ১৯৮০ সালে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সে বছর ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ায় নির্বাচন ভ-ুল হয়ে যায়। ১৯৮০ সালে জাসদ ভেঙ্গে বাসদ হলে আমি বাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। বাসদ ছাত্রলীগের নাম পরিবর্তন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট হলো। আমি ছাত্রফ্রন্টের সাথে যুক্ত ছিলাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : নতুনদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।

হাসান আলী : শুধু চাকুরির আশায় পড়াশোনা করা কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা ভেবে দেখার আহ্বান জানাই। উচ্চশিক্ষিত হওয়া মানে চিন্তা-চেতনায়, রুচি-সংস্কৃতিতে, দায়িত্ব কর্তব্য পালনে, ন্যায়ভিক্তিক সমাজ বিনির্মাণে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। সমষ্টিগত উন্নয়ন করার মধ্যেই রয়েছে ব্যক্তির উন্নয়ন ও মুক্তি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়