বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে ড্রাগন চাষে শিক্ষিত বেকার যুবক মোজাম্মেলের সফলতা
এমরান হোসেন লিটন ॥

কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো ড্রাগন ফল একটি বিদেশী ফল। এ ফল বাংলাদেশের মাটিতে চাষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আজ এ ফলের চাষ বাংলাদেশে এতোটা বেড়েছে যে, এখন এই ফলটি আমাদের দেশী ফল বলে পরিচিত। বর্তমানে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এই ফল চাষাবাদের বাগান এবং বিভিন্ন কৃষি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ এ ড্রাগন ফল চাষকে ছড়িয়ে দিতে প্রতিনিয়ত তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ড্রাগন ফল চাষীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরাও ধীরে ধীরে ড্রাগন ফল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তেমনই একজন ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের লোহাগড় গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন মিঠু মজুমদার।

তিনি ২০০৩ সালে ঢাকার একটা কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে এসে নিজের অজান্তেই শখের বসে মাছ চাষের সাথে জড়িয়ে যান। এলাকায় তার কয়েক বন্ধুসহ মাছ চাষে জড়ালেও কয়েক বছর পরে বিশাল লোকসানের মধ্যে পড়েন এবং সাথের বন্ধুরা সব এদিক সেদিক চলে গেলে দেনার দায়ে মোজাম্মেল অসহায় হয়ে পড়েন। শিক্ষিত, ভদ্র, কর্মঠ মোজাম্মেল ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকে সাজাতে হাল ছাড়েননি। পার্শ্ববর্তী বাড়ির তার এক চাচার ছাদ বাগানে ড্রাগনের চাষ দেখে তিনি ড্রাগন চাষ করবেন বলে মনস্থির করেন। পরে তার চাচার সাথে ড্রাগন চাষ পদ্ধতির বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা নেন। যে চিন্তা সে কাজ। মোজাম্মেল ২০২১ সালে নিজেদের ৩০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। সে বছর সফলতা দেখে তিনি ২০২২ সালের প্রথম দিকে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে বর্তমানে তার ড্রাগন ফলের চাষ মোট ১০০ শতাংশের মধ্যে করেছেন। তিনি ৬০০ গাছ দিয়ে চাষ শুরু করলেও বর্তমানে তার বাগানে গাছ রয়েছে ১৮শ’। প্রথম তিনি পিলারের ওপর টায়ার পদ্ধতিতে করলেও বর্তমানে করছেন চায়না পদ্ধতিতে। মোজাম্মেল বলেছেন চায়না পদ্ধতিতে খরচ কম এবং গাছ বেশি রোপণ করা যায়।

সম্প্রতি সরাসরি লোহাগড় গ্রামে মোজাম্মেলের ড্রাগন ফলের বাগানে গিয়ে তার সাথে কথা হয়। এ সময় তিনি বলেন, এখন আর তার পেছনে তাকানোর সময় নেই। কারণ, ড্রাগন ফল চাষে তার কপাল ফেরার সময় হয়েছে। তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলেন যে, বর্তমানে তার বাগানে ড্রাগন গাছের নমুনায় বলছে আগামী কয়েক মাস পরে তার গাছে যে ফল দিবে তাতে তার সমস্ত চালান উঠে আসবে। তিনি আরো বলেন, এ গাছের পেছনে তার আর বেশি একটা খরচ করতে হবে না। আগামী ১৫-২০ বছর যাবৎ শুধু এই গাছগুলোকে পরিচর্যা করবেন এবং ফল বিক্রি করবেন। তিনি জানান, এক একটি গাছ থেকে প্রায় ২০ বছর আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, ড্রাগন ফল চাষ করতে তেমন কোনো সারের প্রয়োজন হয় না, শুধু জৈব সার হলেই যথেষ্ট।

দেশের বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে মোজাম্মেল বলেন, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ না গিয়ে নিজস্ব জমিতে অথবা জমি লিজ নিয়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ড্রাগন ফলের চাষ করে অল্প কয়েক বছরে ভালোভাবে স্বাবলম্বী হওয়া একেবারেই সহজ। এছাড়া তিনি বলেন, ড্রাগন ফল চাষ একটি শৌখিন কাজ এবং ঝামেলা মুক্ত। ফলন পেতে ১০-১২ মাস সময় লাগে এবং বাগান হতে ফল বাজারে নিতে হচ্ছে না। পাইকাররা বাগানে এসে ফল নিয়ে যায়। ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয় এবং এক একটি ফল ৩০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি গাছে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল ধরে। সঠিক পরিচর্যা করলে একটি গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, টাকা খরচ করে বিদেশ গেলে সেখানে গিয়ে সফল হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ড্রাগন ফল চাষে কোনো রকমের ঝুঁকি নেই। তিনি বলেন, ড্রাগন চাষে তার সফলতা দেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন লোক এসে ড্রাগন চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। তার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফরিদগঞ্জের আনাচে কানাচে এ ফলের চাষ অনেক অনেক বৃদ্ধি পাবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমি ফরিদগঞ্জে নতুন এসেছি। এ উপজেলার অনেক কিছুই আমি অবগত নই। জানতে পেরেছি বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে উপজেলাটি অনেক এগিয়ে। এখানে অনেকেই ড্রাগন ফল চাষে সফলতা পেয়েছেন শুনেছি, তার মধ্যে মোজাম্মেল নামের একজন ড্রাগন ফল চাষে সফলতা দেখে এখন আরো অনেক বেশি জমি সংগ্রহ করে এ ফলের চাষ করছেন। আমরা মোজাম্মেলকে ড্রাগন চাষে সফলতা পেতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, ড্রাগন ফল একটি সুস্বাদু ফল এবং এর চাহিদা ব্যাপক। তিনি বলেন, ড্রাগন ফল বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার নির্মূলে ব্যাপক অবদান রাখে। এছাড়া ড্রাগন ফল খেলে আরো অনেক ধরনের উপকার হয়। ড্রাগন ফল চাষে কম খরচে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নূরে আলম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাড়ির ছাদে এবং আঙ্গিনায় ড্রাগন ফল চাষ হওয়ার খবর পেয়েছি। আমাদের কাছ থেকে অনেকেই মাঝে মধ্যে পরামর্শ নিচ্ছেন। এছাড়া বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ফরিদগঞ্জে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের লোহাগড়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন মিঠু মজুমদার ড্রাগন ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে আরো অনেক বেশি জমি সংগ্রহ করে এ ফলের চাষ বৃদ্ধি করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস মোজাম্মেলের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন এবং তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়