ফরিদগঞ্জে কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে গণিত ও বিজ্ঞান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র বৈরী (শীত) আবহাওয়া উপক্ষো করে ৭ জানুয়ারি শনিবার বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচা মেলার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ফরিদগঞ্জ নবীন কচি-কাঁচার মেলার সম্মেলন উপলক্ষে এই গণিত ও বিজ্ঞান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদগঞ্জ নবীন কচি-কাঁচা ভবনে উপজেলার ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আয়োজিত উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ নূরুল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলার সমন্বয়কারী শিশু সংগঠক ফরিদ আহমেদ রিপন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সর্বক্ষেত্রে গণিতের পদচারণা রয়েছে। গণিত চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটায়। এমনকি কবিতার মধ্যেও গণিতের প্রয়োগ রয়েছে। গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণিত ও বিজ্ঞানকে ভয় নয়, নিয়মিত চর্চা করে ভয়কে জয় করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের জ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই। তিনি বিজয়ী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং গণিতচর্চার পাশাপাশি বই পড়ার বিশেষ করে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও মনীষীদের গ্রন্থ পড়ার আহ্বান জানান। তিনি নিজের জীবনের গল্প উপস্থাপন করে বলেন, লক্ষ্য ও স্বপ্নছাড়া কোনো কিছুই অর্জিত হয় না।

কচি কাঁচার মেলার শিশু সংগঠক সানজিদা নবী আদ্রিতার সভাপ্রধানে এবং নবগঠিত কমিটির সভাপতি নুরুন্নবী নোমান ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমুননেছা, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নহাটা বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের প্রদীপ সরকার ও বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাজিশিয়ান রাই হরণ বিশ্বাস।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো করে দেশটাকে ভালোবাসতে হবে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা জীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানলে নিজেকে গড়ে তোলার কাজ সহজ হবে। গণিত ও বিজ্ঞান সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। আমাদের সবার হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার যেনো হয় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। আমাদের স্মার্ট হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের নুতন প্রজন্মকে স্মার্ট হয়ে উঠতে হবে। শুধু লেখাপড়ায় নয়, সর্বক্ষেত্রেই নিজেদের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হবে। তবেই ফরিদগঞ্জ নবীন কচি কাঁচার মেলার আজকের আয়োজন সার্থক হবে।

বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রতিবছর গড়ে ২২ লক্ষ তরুণ লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার লোক সরকারি চাকরি করার সুযোগ পায়। এছাড়া বেসরকারিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু এরপরও অনেক লোক বেকার থেকে যায়। তাই আমাদের কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধুলাসহ নানাভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। তাই নিজেদেরকে আগামী কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিশেষ অতিথি পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাঙালিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ ও লালন করতে হবে। আদর্শবান নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে বই পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং জাতির পিতা সম্পর্কে জানতে হবে।

আলোচনা শেষে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে সেরা দশজনকে সম্মাননা সনদ ও পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া উৎসবের অংশ হিসেবে বিজ্ঞান প্রজেক্ট উপস্থাপনকারীদেরও সনদপত্র দেয়া হয়। এর আগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই উৎসবে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী মেধা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কয়েকটি বিদ্যালয় বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রজেক্ট উপস্থাপন করে। দুপুরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।