বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:১০

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ কার্যক্রম নিয়ে মতবিরোধে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ কার্যক্রম নিয়ে মতবিরোধে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে সেচ-খালভর্তি পানি।

মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে মেঘনা-ধনাগোদা পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন, পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশন, দশগ্রাম পানি ব্যবস্থাপনা দল নামে তিনটি সংগঠন রয়েছে। এসব দলের নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে উক্ত সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে পানি সরবরাহ হয়ে আসছে। বর্তমানে নানা মতবিরোধে নিজেদের মধ্যে সেচ চালু নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক।

পুটিয়ার পাড়ের পুবাইকা পানি ব্যবস্থাপনা দলের সেক্রেটারী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে পানি দেয়া শুরু করা হয়। কিন্তু এবার প্রায় ১০ দিন আগে থেকে সেচ খালে পানি সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। আমাদের এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ জমি এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। অনেক জমিতে সরিষাসহ অন্য রবিশস্য রয়েছে।

এদিকে ২০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সেচ উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে উদমদী ও কালীপুর পাম্প হাউসে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ (শাহীন) চৌধুরী।

উক্ত সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ঘুরে দেখা যায়, কালীপুর পাম্প হাউজ ও উদমদী পাম্প হাউজের মাধ্যমে সেচ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে । কিন্তু কোনো জমিতে পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে না। জানতে চাইলে কৃষকরা জানান, জমি রেডি করা হয়নি। তাই খালের মুখে চেক গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ শাহিন চৌধুরী জানান, প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান থাকায় আর কিছুদিন পর সেচ পাম্প পুরোদমে চালু হবে। অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি সেচ কার্যক্রম চালু করলে সমস্যা হবে না। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ সেচ পাম্প চালু করা হয় বলে তিনি জানান। হঠাৎ এমন কী হয়ে গেলো যে, সেচ নিয়ে জটিলতা হচ্ছে। স্থানীয়দের অনেকে জানান, এখানে স্থানীয়দের রাজনীতির কারণে এবার পানি-সেচ চালু নিয়ে নানা বিতর্ক করা হচ্ছে।

কালীপুরের রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখনো মাঠে ধানের চারা ছোট, জমিও রেডি নেই। আসলে অনেক পুকুরে পানি কমে গেছে, মাছ মরে যাচ্ছে। আবার অনেকে খালের ওপর পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য নিয়ে বিপাকে আছেন। তাই পানি সরবরাহ হলে মাছ চাষী ও পুকুর মালিক এবং পোল্ট্রি মালিকদের সুবিধায় তারা দ্রুত পানি সরবরাহের জন্যে এসব রাজনীতি করাচ্ছেন।

ফাইভ স্টার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি সালাহউদ্দিন জানান, আসলে কৃষি বিভাগের সেচ প্রকল্পের অর্থাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সমন্বয় না থাকায় এবার জমিতে পানি সরবরাহ নিয়ে কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজনের মধ্যে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, এবার বোরো মৌসুমে পুরো মতলব উত্তরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক আমরা এ কথা বলে থাকি। কৃষকদের জমি প্রস্তুত করতে সময় লাগে না। পানি সরবরাহ শুরু হলে কৃষক দুদিনের মধ্যেই জমি তৈরি করে ফেলে। নিয়মমাফিক পানি সরবরাহ করলে কৃষকদের সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ধানের চারার বয়স ৩০ দিনের বেশি হলে ফলন কম হয়। এবার অনেক কৃষকের ধানের চারার বয়স বেশি হয়ে গেছে বলে অনেক কৃষক তাকে জানিয়েছেন ।

কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলার সভাপতি ও উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য মো. আতাউর রহমান সরকার বলেন, আমরা উপজেলা সেচ কমিটি বৈঠক করে ১০ তারিখে সেচ উদ্বোধন করার সুপারিশ করি। কিন্তু ২০ তারিখে সেচ উদ্বোধন করা হয়।

সেচ সুবিধাভোগী উদমদী এলাকার কৃষক রহিম প্রধান বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে না এসে বাস্তবতা না দেখে কীভাবে ধানের চারা রোপণের কথা বলেন তা জানি না। এখনো জমি রেডি হয়নি বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে উক্ত সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বলেন, আমি অল্প ক'দিন হলো এখানে যোগদান করেছি। আমার জানা মতে গত দুই বছরও বর্তমান সময়ে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে আমাদের সমন্বয় ঠিকমত সেভাবে হয়নি বলে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।

রোববার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) দুপুরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায, বর্তমানে এ সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প চালু রয়েছে। খালভর্তি পানি। তবে কৃষিজমি কিছু তৈরি করা আছে, আবার অধিকাংশ জমি তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়