প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৬
ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে'র স্থবিরতায় কৃষি ও পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়েছে। ফলে ধান ও মাছসহ অন্যান্য আবাদ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ধান আবাদের মৌসুমে খালে পানি স্বল্পতা, আবার ভারী বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সংকট উত্তরণে কৃষি, কৃষক ও পরিবেশ রক্ষায় সিআইপির অভ্যন্তরে জলবাদ্ধতা দূরীকরণে ডাকাতিয়া নদী ও বোরোপিটসহ সকল খাল খননে ৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংকট দূরীকরণে ৪ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে। রোববার (১ ডিসেম্বর ২০২৪) সকালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এই উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলাল। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ৬ উপজেলার ৫৮ হাজার হেক্টর (গ্রস) জমি ও ২৮ হাজার হেক্টর আবাদী জমি নিয়ে একশত কিলোমিটার পরিধির এই বাঁধ দ্বারা ১৯৭৮ সাল থেকে প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হয়। বাঁধের উদ্দেশ্য ছিলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে সেচের মাধ্যমে এক ফসলী জমিকে দু-তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করে এই অঞ্চলের খাদ্য ঘাটতি দূর করা। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং সেচের মাধ্যমে বোরো (ইরি) আমন উৎপাদন বেড়ে খাদ্য ঘাটতি আপেক্ষিক অর্থে দূর হলেও সি.আই.পি. বাঁধ আশীর্বাদের পরিবর্তে এখন অভিশাপে পরিণত হতে চলেছে। এর কারণ নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অপর্যাপ্ত স্লুইস গেট, ইনলেট-আউটলেটে বড় ধরনের ত্রুটির কারণে ও অনিয়ম দুর্নীতির ফলে সিআইপি বাঁধ প্রায় অকার্যকর। বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ সি.আই.পি'র অভ্যন্তরে পানি প্রবাহের প্রধান ক্যানেল ডাকাতিয়া নদী গত প্রায় ১০০ বছর এবং বোরোপিট খালসহ শত খাল গত ২৫-৩০ বছরেও খনন বা সংস্কার না করায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলা। বৃষ্টি হলেই পানি ধারণ ক্ষমতা না থাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ বছর টানা বর্ষণে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণের জন্যে প্রস্তুত করা বীজতলা ও রোপণ করা আমন ধান সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারও কৃষক, বর্গা ও ইজারা চাষী এবং মৎস্য চাষীরা। সিআইপি প্রজেক্টের অভ্যন্তরে প্রায় সিংহভাগই ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। এই প্রজেক্টের অফিস, বাসা থাকা সত্ত্বেও নেই কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারী। এসডিই, এসও সহ কর্মকর্তারা অফিস ও বসবাস করেন চাঁদপুর শহরে। তারা প্রজেক্ট এলাকায় যান না, না রাখেন কৃষকদের খোঁজ খবর। এমতাবস্থায় কৃষক তাদের সংকটের কথা কার কাছে বলবে? কৃষক তাদের পরিচয়ও জানে না। কৃষক যেন নিজ এলাকায় পরবাসী। বোরো মৌসুমে কৃষক পানি সংকটের কারণে সঠিক সময়ে বোরো আবাদ করতে পারে না। অন্যদিকে আমন মৌসুমে জলাবদ্ধতায় বীজতলা সহ রোপণকৃত ধানও পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়। তাই অবিলম্বে ডাকাতিয়া নদী ও সকল খাল খনন (সংস্কার) করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, আমন ধান, জলাশয়, পুকুরে মাছ চাষীদের ও মৎসজীবীদের রক্ষা করা, বোরো (ইরি) মৌসুমে পানি সংকট নিরসন, ডাকাতিয়া নদী ও বোরোপিট খাল ইজারা বন্ধ ও দখলমুক্ত করে কচুরিপানা পরিষ্কার, মাছ, পানি পরিবেশ রক্ষা, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত সি.আই.পি.বাসীদের চালসহ নিত্য পণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, কৃষি ঋণ মওকুফ করা, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যে আমাদের এই ৫ দফা দাবি। দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে সি.আই.পি. আশীর্বাদে পরিণত হবে ও ডাকাতিয়া নদী তার হারানো যৌবন ফিরে পেলে দেশীয় মাছ উৎপাাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার প্রত্যাশা করা হয়েছে। সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মন্তাজ সরকারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে রহিমা আক্তার পলি, রিয়াজ উদ্দিন ফরিদী, প্রেসক্লাবের সভাপতি মামনুর রশিদ পাঠান, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ফরহাদসহ অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সংম্মেলন ছাড়াও এই দাবিগুলোর বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ফরিদগঞ্জসহ সিআইপি এলাকার বিভিন্ন বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হবে বলে সংগ্রাম কমিটি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।