বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৫০

"লেগুনা আপেল ছিল এক আতঙ্কের নাম"

সাভারে ‘লেগুনা আপেল’ গ্রেফতার: আওয়ামী নেতার ছায়ায় উত্থান, সাতটি হত্যা মামলার আসামি এখন র‍্যাবের জালে!

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : মো. জাকির হোসেন
ছবি : প্রতীকী

রাজনৈতিক প্রভাব, অস্ত্রের দাপট আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড—এই তিনে ভর করে ‘লেগুনা আপেল’ হয়ে উঠেছিলেন সাভারের এক অপ্রতিরোধ্য আতঙ্ক। গত রবিবার র‍্যাবের একটি গোপন অভিযানে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হন এই আলোচিত-সমালোচিত সন্ত্রাসী। অথচ এক দশক আগেও তিনি ছিলেন এক সাধারণ লেগুনা চালক। পেছনে ছিল ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার ছায়া—সেখান থেকেই তার উত্থান।

কার ছায়ায় বেড়ে উঠলেন আপেল?

আপেল মাহমুদ ওরফে ‘লেগুনা আপেল’ (৪৩), সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাড়ী-ভাটপাড়া এলাকার মৃত শুকুর মুন্সির ছেলে। সাভারের স্থানীয় রাজনীতিতে যিনি এখন কুখ্যাত নাম, তিনি এক সময় ছিলেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের ঘনিষ্ঠজন।

রাজীবের ‘বিশ্বস্ত ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আপেল ধীরে ধীরে চালকের সিট থেকে নেমে নামে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির জগতে। স্থানীয়রা বলেন, “লেগুনা আপেল আগে গাড়ি চালাত, এখন সে চালায় অস্ত্র আর আতঙ্ক।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রক্তাক্ত সন্ত্রাস

২০২৫ সালের শুরুতে সাভারে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আপেল মাহমুদ—তবে একেবারেই নেতিবাচকভাবে। আন্দোলনের সময় সশস্ত্র ক্যাডারদল নিয়ে তিনি হামলা চালান বিক্ষোভকারীদের ওপর। পুলিশের ছত্রছায়ায় রাতের অন্ধকারে ঘরবাড়িতে চলে তার নেতৃত্বে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট।

বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে চলে টার্গেট অপারেশন। এ ঘটনায় দায়ের হয় একের পর এক মামলা। সাতটি হত্যা মামলা ছাড়াও রয়েছে একাধিক হত্যা চেষ্টা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ।

সাংবাদিকদের শত্রু বানানো 'গণমাধ্যম শিকারি' আপেল

স্থানীয় সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, তারা যখন আপেলের অপকর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় হেনস্তা ও জীবননাশের হুমকি। এমনকি একাধিক স্থানীয় সাংবাদিককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করা হয়। এক পর্যায়ে দেশের একটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল (মাই টিভি) তাকে তাদের প্রতিনিধির পদ থেকে বরখাস্ত করে।

র‍্যাবের অভিযান: দেড় মাসের গোয়েন্দা তৎপরতার ফলাফল

র‍্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম জানান, “দীর্ঘ দেড় মাস আমরা তাকে অনুসরণ করেছি। একাধিকবার অবস্থান পরিবর্তনের পর রবিবার রাতে মুন্সীগঞ্জের কেওয়ার এলাকায় অবশেষে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।”

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের গাবতলা মসজিদ সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীসহ আত্মগোপনে ছিলেন আপেল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আত্মগোপনের কাহিনী: আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গা ঢাকা

গত বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পটপরিবর্তনের পরই গা ঢাকা দেন আপেল। ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক ‘আশ্রয়দাতা’র প্রভাব কমে যাওয়ায় আতঙ্কে ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই নানান ছদ্মবেশে পালিয়ে বেড়াতেন।

ওসি’র বক্তব্য: ‘সে এক আতঙ্কের নাম ছিল’

সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, “আপেল মাহমুদ শুধু একজন আসামিই নন, সাভারে সে এক আতঙ্কের নাম ছিল। দীর্ঘদিন তার হাতে সাধারণ মানুষ, রাজনীতিক, এমনকি সাংবাদিকরাও নিরাপদ ছিলেন না। আমরা আশা করছি, আইনের মাধ্যমে তার বিচার হবে।”

রাজনৈতিক মদদ না থাকলে কী এমন উত্থান সম্ভব?

সাবেক জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন, আপেল মাহমুদের মতো দুর্বৃত্তদের উত্থান হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের ছত্রছায়া ছাড়া তার এতদূর আসা সম্ভব হতো না।

শেষ কথা: বিচারের মুখোমুখি কি হবে আপেল?

সাভারবাসীর দীর্ঘদিনের এক দাবি ছিল আপেল মাহমুদের গ্রেফতার ও বিচার। এখন দেখা যাক, এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আদৌ তার বিচার হয় কিনা, নাকি রাজনৈতিক চাপে আবারও ন্যায়বিচারকে হার মানতে হয়।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়