সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৫২

ভয়াবহ সেই ২৫ অক্টোবর : ফরিদগঞ্জে যা ঘটেছিল সেদিন

পর্ব-২

স্টাফ রিপোর্টার
ভয়াবহ সেই ২৫ অক্টোবর :  ফরিদগঞ্জে যা ঘটেছিল সেদিন
আহত আরিফ হোসেন, জাহাঙ্গীর বেপারী ও বাবুল ভূঁইয়া

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার বিএনপি তথা ওই সময়ের ১৮ দলীয় জোট ঢাকায় মহাসমাবেশের পাশাপাশি সারাদেশের জেলায় উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। সে অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী তথা ১৮ দলীয় জোট বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করতে কাজ শুরু করে। জুমার নামাজের পরপরই দুপুর ২টা থেকে ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের আল-মদিনা হাসপাতালের সামনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা আস্তে আস্তে জড়ো হতে থাকে। অন্যদিকে বেলা ৩টার পর ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। ফরিদগঞ্জের ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সেখানে ছুটে আসেন। ওই সময় পুলিশের ভাষ্য ছিল এ রকম, ‘তাদের সাথে বিএনপি নেতাদের কথা হয়েছে, তারা আল-মদিনা হাসপাতাল থেকে মিছিল শুরু করে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে থেকে মোড় ঘুরে পুনরায় আল-মদিনা হাসপাতালের সামনে চলে যাবে'। 'তাহলে কেনো এতো রণসজ্জা' এই প্রশ্নের উত্তরে এক পুলিশ কর্মকর্তা ওই সময়ে জানান, ইতিপূর্বে বিএনপির একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে বাজারে দোকানপাট ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আজ কথা থাকলেও যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে তার জন্যে এতো আয়োজন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! সেই দুর্যোগ ঘটেই গেলো। ভাংচুর না হলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে খুব দ্রুত ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। ক্রমেই শ্লোগানে শ্লোগানে ওই এলাকা প্রকম্পিত হতে লাগলো। নেতা-কর্মীদের রাস্তার একপাশে নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে যুবদল ও ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতাকে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রায় দুই/তিন সহস্রাধিক লোকের সমাবেশ ফরিদগঞ্জ টিএন্ডটি চত্বর পেরিয়ে যায়। এরপর নেতৃবৃন্দ দ্রুত মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মোড়ে এলে বাজারের দিকে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় মিছিলের সামনের নেতাদের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কথা বলার এক পর্যায়ে তারা টিএন্ডটির দিকে চলে যেতে উদ্ধত হলেও হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ অ্যাকশনে যায়, শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা যোগ দিলে সেটি ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে একের পর টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। ছবি তুলতে গিয়ে ১৮ দলীয় জোটের কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন ওই সময়ের ইল্শেপাড়ের সাংবাদিক ও বর্তমানে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ রবি দাস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সাংবাদিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এই সময়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তেই সুনসান নীরবতা চলে আসে সংঘর্ষ চলা এলাকায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। পরবর্তীতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে একটু আগে বা পরে দুটি মানুষকে (বাবুল ও জাহাঙ্গীর)কে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় ওই এলাকায় থাকা কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ আহত ওই দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার জন্যে পাশেই পড়ে থাকা ভ্যানগাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। পরে সংবাদকর্মীদের অনুরোধে সেই চেষ্টা বাদ দিয়ে তারা দ্রুত গুলিবিদ্ধদের হাতে ও পায়ে ধরেই চিকিৎসার জন্যে পাশে থাকা ফরিদগঞ্জ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। আরেক গুলিবিদ্ধ আরিফকে মিছিলকারীরাই ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আরিফ ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জাহাঙ্গীর চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং বাবুল ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান। ফরিদগঞ্জ উপজেলার দীর্ঘদিনের শান্ত রাজনৈতিক ইতিহাসে লেগে যায় রক্তের দাগ। হঠাৎ ঘটে যাওয়া তিনটি মৃত্যু তিনটি পরিবারের মধ্যে প্রলয় বইয়ে দেয়। সাজানো গোছানো তিনটি সংসার মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায়। বাবা-মা হারায় ছেলেকে, স্ত্রী হারায় স্বামীকে এবং তিনটি পরিবারের ছোট ছোট ৫টি শিশু তাদের পিতাকে হারিয়ে ফেলে। ওই সব পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। তারপর মাস গড়িয়ে বছর চলে যায়। চোখের পানি শুকিয়ে একসময়ে পরিবারের সদস্যরা ভাগ্যকে মেনে নিয়ে শুরু করেন নূতন জীবন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়