প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ২১:৫০
চাঁদপুরে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগে ৪ গ্রুপ!
পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত চাঁদপুরের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ইলিশ আহরণসহ অন্য মাছ শিকার ও ব্যবসার সাথে জড়িত। সরকারি তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধলাখ জেলে পরিবার শুধুমাত্র ইলিশের অভয়াশ্রমে নিষিদ্ধ সময় খাদ্য সহায়তা পেয়ে আসছেন। জেলেদের সমস্যা, বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসহ অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে এখানে জেলেদের নিয়ে গড়ে ওঠেছে নানা ছোট-বড় সংগঠনও। তেমনি চাঁদপুরে চার গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জেলা মৎস্যজীবী লীগ। এই দলের নেতা-কর্মীরা এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন।
|আরো খবর
দশ বছর ধরে দুইজন চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চলছেন। তাদের দুইজনের নেতৃত্বে দুটি আলাদা গ্রুপ এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহআলম মল্লিক ও সাধারন সম্পাদক মানিক দেওয়ানের নেতৃত্বে আলাদা অপর দুটি গ্রুপ চলমান রয়েছে। তবে আলাদা গ্রুপের বিষয়টি কেউ স্বীকার করেন না।
২০১৪ সাল থেকে চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হিসেবে রেদওয়ান খান বোরহান ও মালেক দেওয়ানের নেতৃত্বে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলে। এই কমিটিকে কেন্দ্রীয় কমিটি তখন অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ মালেক দেওয়ানকে সভাপতি ও মানিক দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক এবং শাহআলম মল্লিককে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়।
এদিকে রেদওয়ান খান বোরহান নিজেকে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন এবং সভা করছেন। প্রতি বছর ঈদের সময় সদর হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মনোয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো ও বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন। চাঁদপুর সদর, হাইমচরসহ কয়েকটি উপজেলা কমিটিও গঠন করেছেন তিনি।
অপরদিকে আঃ মালেক দেওয়ান জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করে আসছেন। তিনি কখনো সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ানকে নিয়ে আবার কখনো তাকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক কমিটি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সভাপতি মালেক দেওয়ানের সাথে সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ানের প্রায়ই বিরোধ দেখা দেয়। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও ঢাকায় মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক দেওয়ানের সাথে। তিনি বলেন, চাঁদপুরে মৎস্যজীবী লীগে কোনো গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। রেদওয়ান খান বোরহান বর্তমানে কমিটির কিছুই না। অন্যদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি থেকে এসে নব্য আওয়ামী লীগ সেজে কেউ কেউ এখন আমাদের মৎস্যজীবী লীগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তাদের সে আশা কখনো সফল হবে না। বড় কথা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ মত দল চলছে। চলতি মাসে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের সভা হবে। এরপর দ্রুত চাঁদপুর জেলা কমিটির বর্ধিত সভা করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ আলম মল্লিকের নেতৃত্বে ও তার উদ্যোগে দীর্ঘদিন পর গত বছরর এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জেলা মৎস্যজীবী লীগের বর্ধিত সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেই বর্ধিত সভায় জেলা মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে তিনি জানান।
এই দলের অন্য আরেক গ্রুপের নেতা রেদওয়ান খান বোরহানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর জানান, চাঁদপুরে তাদের সংগঠনে কোনো গ্রুপিং আছে বলে তার জানা নেই। সামনে সম্মেলন হবে তাই হয়তো নিজেদের যার যার শক্তির অবস্থান জানান দিচ্ছে। সম্মেলন করার লক্ষ্যে আমাদের সাংগঠনিক টিম চাঁদপুর সফর করে এসেছে।