মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চিঠি ও ডাকঘর

রিপন কুমার সাহা
চিঠি ও ডাকঘর

অধীর অপেক্ষা আর প্রিয় ভালবাসার মানুষটির হাতের ছোঁয়ায় লিখা শব্দগুলোর অনুভূতিই চিঠি, আর সেই চিঠির আদান প্রদানের মাধ্যম ডাকঘর।

আমাদের পূর্বপুরুষদের দান করা ভূমিতেই ডাকঘর ছিল এবং আজও রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করার জন্যে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেতাম, কত চেনা ও অচেনা মানুষের ভিড় লেগে রয়েছে ডাকঘরের ফটকের সামনে প্রিয়জনের লিখা একটি চিঠি বা মানি অর্ডারের জন্যে। কারণ তখনকার দিনে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই ছিল ডাকঘর।

এই যোগাযোগের মাধ্যমের কারণেই সেই সময়ে যারা ডাকঘরে কর্মরত ছিলেন, তাদের কদর ছিল অধিক। বিশেষ করে পোস্টম্যানের বা পত্রবাহকের। আমরা দেখেছি, যে কোনো বাড়ির (আঁতুর ঘর থেকে মৃতের শ্রাদ্ধ পর্যন্ত) যে কোনো শুভ ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে সবার আগে ডাকঘরে কর্মরতদের নিমন্ত্রণ জানানো হতো। আর দূরবর্তী আত্মীয়দের পত্রগুলো ডাকঘরের মাধ্যমে প্রেরণ করার জন্যে এনে ‘ডাকবাবু’কে কতোই না সরলতা নিয়ে বলতেন, দেখবেন চিঠিগুলো যেন তাড়াতাড়ি যায়।

ডাকঘরের সাথে জড়িয়ে থাকা অতীতের স্মৃতিগুলো সত্যিই আনন্দদায়ক। আমাদের এলাকাটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে প্রসিদ্ধ হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মোকামীদের আনাগোনা ও দীর্ঘ সময়ের অবস্থান থাকায় দেখেছি, তাদের বেশি সংখ্যক মানুষ অশিক্ষিত তথা অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন ছিলো না। তাই চিঠি লিখা ও পাঠের জন্যে অনেকেরই খুব কদর ছিল। তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। এই চিঠি লিখা ও পাঠের জন্যে পাশের দোকানের কত কত মিষ্টি গলাধঃকরণ করেছি, তা হিসেব করতে পারবো না।

সেই সময়ে চিঠির প্রতি মানুষের এক ধরনের আত্মার টান ছিল এবং প্রেরক ও প্রেরিতদের অগোছালো ভাষায় ছিলো নিখাদ আবেগ ও ভালবাসা। কখনও দেখেছি, কোনো কোনো চিঠিতে প্রেরকের আঘাতের রক্তের দাগ আর বেদনার চোখের নোনা জলের ছাপ। আবার চিঠি পাঠকালে দেখেছি, প্রাপকের আনন্দ ও বেদনার অশ্রু। সেই চিঠি আজ হারিয়ে গেছে, সাথে হারিয়ে গেছে মানুষের আবেগ ও ভালবাসা, আর বাংলার ব্যাকরণগত সুন্দর শব্দ ও ভাষা।

বর্তমান মোবাইলের যুগে চিঠির গুরুত্ব হারিয়ে যাওয়ায় ইনিয়ে বিনিয়ে বলা প্রেয়সীর (প্রেমিকার) লাজুক ভালবাসার অনুভূতি হারিয়ে গিয়ে 'তোমাকে ভালবাসি' সরাসরি বলার কারণে আমাদের ভালবাসাও থার্মক্যালের বস্তুর মত হয়ে গেছে। সকালের ভালবাসা বা ভাললাগার অনুভূতি ম্লান হয়ে পড়েছে বিকেলের সূর্যাস্তের ন্যায়।

পাশের বাড়ির প্রবাসে থাকা দাদার চিঠির জন্যে বৌদির কতোই না তাগিদ দেখেছি। আর মিষ্টি কণ্ঠের বলা " ও ঠাকুর পো দেখ না, তোমার দাদার চিঠি আইছেনি"। আর আসা চিঠি বৌদির হাতে দেবার পর খুশিতে আত্মহারা হয়ে ঠাকুর পোকে জড়িয়ে ধরে চিঠি কেড়ে নিয়ে আগে ঠাকুর-দেবতাকে স্মরণ করতে করতে বলতে শুনেছি "ও ঠাকুর ওনি যেন ভাল কোনো সংবাদ দেন, কোনো মন্দ কিছু যেন না লিখেন" বলেই চিঠিটি নমস্কার দিয়ে খুলে পড়তেন আর মিটি মিটি হাসতেন। আবার কখনও চোখ বড়ো করে বলেই ফেলতেন, দুষ্ট! সেই একই চিঠি পুনঃ পুনঃ পরবর্তী চিঠি না আসা পর্যন্ত পড়তে দেখেছি বৌদিকে। আর সেই চিঠির ভেতরের ভাষা নিয়ে ননদ-বৌদি- দেবরদের কতোই না রসালাপ সেই সময়ে ছিল।

সেই চিঠি ও ডাকঘর আজও আছে। কিন্তু চিঠির জন্যে আগ্রহ নেই, তাই অপেক্ষা করতে হয় না ডাকঘরের ফটকে। হারিয়ে গেছে সেই চিঠির ভেতরে লিখা দুষ্ট-মিষ্ট ভাষা। আর ভাষা হারিয়ে যাওয়ায় আমাদের ভালবাসার অনুভূতিও হারিয়ে গেছে, পাশাপাশি আমাদের বন্ধুত্ব ও বন্ধন হয়ে পড়েছে ক্ষণস্থায়ী, দাম্পত্য জীবনও কচু পাতার পানির ন্যায় নড়বড়ে।

ফিরে আসুক আবার চিঠি ও চিঠির ভাষা, গুরুত্ব বাড়ুক ডাকঘরের-- আন্তর্জাতিক চিঠি দিবসে এটাই প্রত্যাশা।

রিপন কুমার সাহা : উপ-পোস্ট মাস্টার, পুরাণবাজার এসও, চাঁদপুর।

বিঃ দ্রঃ লেখাটি ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস উপলক্ষে রচিত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়