মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অপবাদ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের কথা একটু ভাবুন

মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল
অপবাদ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের কথা একটু ভাবুন

আমার প্রিয় সংবাদকর্মীদের কিছু আবেগঘন লেখালেখি দেখে বিস্মিত হয়ে যাই। যে কেউ এ সাংবাদিকদের নিয়ে কটুক্তি করতে দ্বিধা করছে না। সাংবাদিকদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে একবারও কি ভেবে দেখেছেন, এ পেশাকে যারা কলঙ্কৃত করেছেন তাদের কথা। কোন্ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের হাত ও মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল? সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, গুম, খুন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আমি একজন মফস্বলের সাংবাদিক। আমাদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কতটুকু ছিলো ভেবে দেখেছিলেন কি কখনো? দিনবদল হয়, ক্ষমতার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়, কিন্তু এ পেশার মানুষের স্বাধীনতার কি কখনো পরিবর্তন হয়েছে? ক্ষমতার দাপট কিংবা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রথমেই সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করা হয়। এটা যুগের পর যুগ চলে আসছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন শুরু করে। আমি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার একজন প্রতিনিধি হিসেবে কোণঠাসা হয়ে পড়ি। নির্ভীক কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমান সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেছিলেন " সততায় পারবেন না প্রধানমন্ত্রী"। এরপর তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রেসে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় তাকে। পত্রিকা অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। কোনো অন্যায় না করেও বছরের পর বছর জেলখানায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তাকে দেশত্যাগ করতে হয়। এটা তো শুধু মাহমুদুর রহমানের কথা। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে বন্ধ করে দেয়া হয় চ্যানেল ওয়ান ও দিগন্ত টিভি। এছাড়াও পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু কি তাই, একের পর এক গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি-ধমকি ও গুম- খুনের পথ বেছে নেয় সাবেক পলাতক সরকার। জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাংবাদিক ইলিয়াস, খালিদ মাহমুদ, ওয়ালি উল্লাহ, পিনাকী ভট্টাচার্য সহ অগণিত সাংবাদিক নেতাকে। কারাভোগ করতে হয় রুহুল আমিন গাজী সহ খ্যাতনামা সাংবাদিকদের।

কখনো কি হিসেব করেছেন আওয়ামীলীগ সরকারের থাবায় দেশের জাতীয় দৈনিক সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কতেটি পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে? কতজন সংবাদকর্মী ভয়ে এ পেশা ছেড়ে পালিয়েছেন? যে দেশের রাষ্ট্র প্রধান প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হুমকি দিতেন 'বেশি বাড়াবাড়ি করলে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো', সেই দেশের সংবাদকর্মীগণ কতটা শঙ্কার মধ্য দিয়ে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন, তাকি একবারও ভেবে দেখেছেন? জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ দেশত্যাগ করে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও মফস্বলের সাংবাদিকদের দেশত্যাগ করার কি কোনো উপায় ছিল? জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব নেয়ার মতো দেশ বিদেশে অনেকেই রয়েছেন, কিন্তু মফস্বলের সাংবাদিকগণ নির্যাতিত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলেও কোনো কর্তাব্যক্তি কি কখনো এগিয়ে এসেছেন? যারা সাংবাদিকদের অপবাদ দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বিগত সরকার তার মতের বাইরে কাউকেই সহ্য করতে পারেনি। প্রধান বিরোধী দলগুলোর ওপর সীমাহীন নির্যাতন ও নিপীড়ন করেছে। স্বাধীন দেশে বসবাস করেও লুকোচুরি করে সভা সমাবেশ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের এতোটা জনবল নেই, হাতে লাঠি কিংবা অস্ত্র নেই। আজ যারা বড়ো বড়ো কথা বলছেন, তাদেরকে পাশে পাইনি আমরা। অনেক বড়ো বড়ো নেতা পত্রিকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন। ভয় পেতেন এ নাম দিয়ে যদি মামলা করা হয়। সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করতে যখন সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়, তখন তো আপনাদের প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আপনাদের স্বার্থে সাংবাদিক ব্যবহার করবেন, আইন করে কলমের গতি নিয়ন্ত্রণ করবেন, দিন শেষে সাংবাদিকদের গালি দিবেন--এর নাম কি স্বাধীন গণমাধ্যম? মফস্বল সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে একটি স্থানীয় দৈনিকের প্রকাশনা অব্যাহত রাখা কতোটা কষ্টকর তা বোঝার ক্ষমতা অনেকের নেই। তার ওপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি, রাজনৈতিক তদবির ও হুমকি তো রয়েছে। কিছু হলেই পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি, জেল খাটানোর হুমকি, এছাড়া অপমান অপদস্তের কথা তো নাই বললাম। একবারের জন্যে একটু ভাবুন তো, বিগত সরকার বিরোধী দলের কোনো দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে একক আধিপত্য বিস্তার করে কীভাবে একের পর এক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করেছে। প্রতিটা স্তরে নিজেদের পছন্দের লোকদের দায়িত্বে বসিয়ে একক রাজত্ব কায়েম করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের রক্তে রাজপথ অলঙ্কৃত হয়েছে, বারবার আন্দোলন করেও বিনিময়ে শুধু বিরোধী দলগুলো অর্জন করেছে শত শত গায়েবি মামলা ও নেতা-কর্মীদের আর্তনাদ। এতো কিছুর পরেও কি হাসিনা সরকারের কোনো টনক নড়েছে? গুম ও খুনের ভয়ে পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে কেটেছে, ভেবে দেখেছেন কি? কিন্তু আমরা পালিয়ে যাইনি, কারণ আমাদের পেশা সাংবাদিকতা। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছি। আমাদেরও পরিবার রয়েছে, আমাদের সন্তানেরা দিন শেষে আমাদের বাসায় ফেরার অপেক্ষায় থাকতো। আমরা জেলে গিয়ে পচে মরলেও আমাদের উপকারের জন্যে হয়তোবা কেউ এগিয়ে আসতো না। দেশত্যাগ করে পালিয়ে থাকার সেই অবস্থানটুকুও আমাদের অনেকেরই নেই।

আমাদেরকে অপবাদ দেয়ার আগে একটু ভেবে নিন, হাসিনা সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ব্যবসা-বাণিজ্য কি পরিচালিত হয়নি? এমন অনেকেই আছেন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যথারীতি চালিয়ে গিয়েছেন। তাদের অনেকেই আজকাল বড়ো বড়ো কথা বলতে দেখা যায়। বিরোধী দলগুলো কি হাসিনা সরকারের পতনে সফল হয়েছেন?

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমি সবসময়ই তাদের পাশে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমাদের সন্তান ও প্রিয় ভাইয়েরা যদি সফল না হতেন, তাহলে আজ তারা কোথায় থাকতেন? নির্মম নির্যাতনের কালো থাবা তাদের ওপরে পড়তো। মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে সফল করেছেন, আমরা তাদের নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারছি। শুধু কোটা সংস্কার নয়, গোটা দেশের সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করে পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই, সুশাসনের সুফল পেতে চাই, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই, রক্তপাত মুক্ত রাষ্ট্র চাই, প্রাণ খুলে কথা বলতে চাই, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাই, সকল কালো আইন বাতিল চাই, শোষণমুক্ত গণমাধ্যম চাই, বেঁচে থাকার অধিকার চাই।

লেখক : সভাপতি, শাহরাস্তি প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়