বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মাহবুবুর রহমান

“ঘোড়াকে জোর করে পানিতে নামানো সম্ভব। কিন্তু পানি পান করানো অসম্ভব।” জোর করে যদি ইতর প্রাণির উপর প্রভুত্ব করা না যায়, তাহলে আশরাফুল মাখলুকাতকে প্রলুব্ধ করা বা কোনো কার্য সাধনে বাধ্য করা অলীক কল্পনার সামিল। আধুনিক মানব সভ্যতার অন্যতম শ্লোগান মানসম্মত বা যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়ামক বা কেন্দ্রবিন্দু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হলে তাদের বিদ্যালয়মুখী, শিক্ষা কেন্দ্রিক এবং তাদের দৈনিক কর্মকাণ্ডের শতভাগই বিদ্যার্জন সংশ্লিষ্ট করতে হলে অভিভাবক বিশেষ করে মায়েদের ওতোপ্রোত ভূমিকা একান্ত প্রয়োজন। সম্রাট নেপোলিয়ানের মতে, ‘Give me a good mother. I will give you a good nation.’ এখানে নেপোলিয়ান শিক্ষিত মায়ের কথা বলেছেন। কিন্তু সার্টিফিকেটধারী বা পাস করা মায়ের কথা বলেননি। পাস করলে মানুষ শিক্ষিত হয়না। নারী জাগরণের অগ্রদূত ও মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার মতে পাস করা বিদ্যাকে শিক্ষা বলা যায় না। শিক্ষার বহুল আলোচিত সংজ্ঞা হলো-‘Desirable change in human behavior is education’ সে মতে শিক্ষিত মা বলতে- যিনি তার সন্তানের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সদা সচেতন এবং সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত এবং বিদ্যা শিক্ষার অগ্রগতিতে নিজেকে নিবিড়ভাবে পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত করে ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকগণ কর্তৃক প্রদত্ত বাড়ির কাজ বা ‘Directed Study’ সম্পাদনে সহযোগিতা, প্রেরণা প্রদান, লজিস্টিক সাপোর্টসহ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সু-সঙ্গত রাখতে আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত থাকা আবশ্যক। মা নির্লিপ্ত থাকলে শিশুরা নিছক প্রাণীর মত শুধু বেড়ে উঠবে কিন্তু মানুষ হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। মায়েরা শুধু জন্ম দিয়ে বা সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করলে হবে না। তার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ‘English proverb goes, æ The hand that rocks the cradles, rules the world.’ যে হাত দোলনা দোলায়, সে হাত বিশ্ব শাসন করে। এ ধরাতে যে মনীষীকূল সদাপটে চরে বেড়ায় তারা মাতৃগর্ভ থেকে আসা। মায়ের সন্তানই বিশ্ব শাসন করে। সে মতে মায়েরাই বিশ্ব শাসন করে। সে সম্মানীয় মাকে যদি নিয়মিত সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আলোকময় ভবিষ্যৎ, উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুুদ্ধ করা হয়, তাহলে সে মায়েরাই তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সর্বোতোভাবে প্রয়াস চালাবে। ব্যবস্থাপনার মূলনীতি ‘Minimizing cost, maximizing production.’ -অর্থাৎ কম খরচে বেশি উৎপাদন। একজন প্রধান শিক্ষক মানসম্মত শিক্ষার্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে বিদ্যালয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিবিড় অংশবিশেষ তিনি ‘Optimum Interval G Mother’s and Gurdians Assembly call’ করতে বা পরিচালনা করতে পারেন। সামাজিক স্টেকহোল্ডারদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব। সরকার আর্থিক বরাদ্দ দিলে কেবল মানসম্মত শিক্ষার্জন সম্ভব নয়। এজন্য মা/ অভিভাবক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং স্টেকহোল্ডারদের ‘Reinforcement’ বা বলবর্ধনের মাধ্যমে কম খরচ বা ন্যূনতম ব্যয়ে বা কম আড়ম্বরতায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। “মা-অভিভাবক সমাবেশের উপকারিতা” ১। অভিভাবক ও শিক্ষকগণের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে উম্মুক্ত আলোচনার সুযোগ থাকে। ২। শিক্ষার্থীগণ বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। এতে করে লাজুক স্বভাব বিলুপ্ত হয়ে সংকোচমুক্তভাবে শিখনে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয়। ৩। শিক্ষকগণ উন্মুক্তভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন উন্নয়ন বিষয়ে ফিডব্যাক দিতে পারেন। ৪। সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি পায়। এক অভিভাবক অন্য অভিভাবকদের সাথে ধারণা বিনিময়ের অপার সম্ভাবনা থাকে। ৫। মা সমাবেশে এলাকার বরেণ্য ব্যক্তি, শিক্ষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদ্যান ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর সফল ব্যক্তিত্বের জীবন কাহিনী আলোচনা করে মা-অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। ৬। অভিভাবকরা জানেন তাদের সন্তানের আচার-প্রকৃতি ও বুদ্ধিমত্তা কেমন। তাই অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া বজায় থাকলে শিক্ষকবৃন্দ বিদ্যালয়ে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বৈচিত্র্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে। এতে শিখনের বহুমূখী তত্ত্বের সফলতা ত্বরান্বিত হবে। “ফলপ্রসূ মা-অভিভাবক সমাবেশ বাস্তবায়নে করণীয়” ১। শিক্ষকগণ কর্তৃক মা ও অভিভাবকদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ স্থাপন। ২। অভিভাবকদের মধ্য থেকে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক সেরা মায়ের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা। ৩। “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকে” শ্রেষ্ঠ মা ও শ্রেষ্ঠ বাবার অপশন রাখা এবং তাদেরকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করে “Reinforcement’। ৪। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে তাদের মা-বাবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলে শিক্ষার্থীগণ নিজেদের ধন্য মনে করে অনুপ্রাণিত হয়ে সফল নাগরিক হতে ব্রতী হবে। ৫। উপজেলা-ভিত্তিক ম্যাগাজিন এবং সাময়িকীতে প্রকাশ করতঃ ম্যাগাজিনে সেরা মা-বাবার সফল কাহিনী সংকলিত করা। ৬। নিয়মিত উঠোন বৈঠক, হোমভিজিট এবং মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা। সাদামাঠা ভাষায় বলতে-গেলে শিশুদের সুন্দর, সুনির্মল, পূতপবিত্র ও উজ্জ্বল সোনালী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে হলে সচেতন, যত্নশীল ধিসম্পন্ন, দূরদর্শী মা ও অভিভাবক আবিষ্কারে নিয়মিত মা ও অভিভাবক সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

লেখক ও গবেষক : মাহবুবুর রহমান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

মোবাইল : ০১৭৬৮৯৬৯৬২০ ইমেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়