বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০

অবিবাহিত তরুণ তরুণীর ভবিষ্যৎ প্রবীণ জীবন
হাসান আলী

যেসব তরুণ তরুণী ভবিষ্যতে বিয়ে করে সংসারী হবেন না বলে ভাবছেন তাদের প্রবীণ জীবনের প্রস্তুতি এখন থেকে নিলে সবচেয়ে ভালো হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে বিয়ে না করার সংস্কৃতি জোরদার হচ্ছে। মানুষ অনেক বেশি চাপের মধ্যে থেকে জীবনযাপন করতে রাজি হচ্ছে না। বিয়ে ছাড়া সমাজ কেমন হবে তা নিয়ে নানা রকমের তর্ক বিতর্ক রয়েছে। প্রচলিত বিয়ে নিয়ে সব পক্ষের কম-বেশি অভিযোগ-অনুযোগ আছে। খুব কম মানুষই বিয়ে নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায়। জবাবদিহি করতে পছন্দ করে না বিধায় মানুষ স্বাধীন জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। আবার বিয়ের বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবনাগুলো এখনো প্রকাশ্যে আসছে না।

আগে বিয়ে ভেঙ্গে গেলে দু পক্ষই সামাজিক অমর্যাদার শিকার হতো। সহজেই কেউ বিয়ে ভাঙ্গার ঝুঁকি নিতে চাইতো না। বিশেষ করে নারী তালাক গ্রহণে রাজি হতো না। স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসলে অভিভাবকরা চিন্তায় পড়ে যেতো। স্বামীর সাথে ঝগড়া করে এসেছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে চাইতো। দিন বদলে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, ডিভোর্স এখন মামুলি একটা বিষয়।

বিয়ে ভাঙ্গার শোকে কাতর হবার দিন শেষ হয়ে গেছে। আজ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে ছেলেমেয়ে প্রেম পাকাপোক্ত করতে ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় স্থান ছুঁয়ে শপথ নিতে হতো। এসব শপথ শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যেতো। কেউ কেউ শপথ রক্ষার্থে অবিবাহিত থেকে যেতো। সেই সংখ্যা ছিল খুবই কম। তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেও কেউ কেউ প্রেম করে ছাত্রজীবনে বিয়ে করে ফেলতো। এখন প্রেমের বিয়ে হয় প্রায় সাত-আট বছর পর। আবার একদল ছেলেমেয়ে একে অপরের সাথে দ্রুততম সময়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সময় নিয়ে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করতে চায় না। আবেগের বশবর্তী হয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে ভেঙ্গে দেয়।

ব্রেক-আপ এখন কোনো বিষয় নয়। যার সাথে ব্রেক আপ হয় তার সাথে অনেকেই যোগাযোগ রাখে । আবার অনেক সময় প্রাক্তন আরেকজন জোগাড় নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে। আজকের তরুণ তরুণীরা সম্পর্ক ভাঙ্গা-গড়ায় কালক্ষেপণ নীতি পরিহার করছে।

বাংলাদেশে লিভ টুগেদার করার সুযোগ নেই। কেউ কেউ লিভ টুগেদার করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। সেই লিভ টুগেদারও নানা সঙ্কটে পড়ে ভেঙ্গে যায়। সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে প্রবীণ অভিভাবকদের কপালে চিন্তার বলি রেখা দেখা যায়। প্রবীণরা চায় তাদের সন্তানরা বিয়ে-শাদী করে শান্তিপূর্ণভাবে ঘর-সংসার করুক। ছেলেমেয়েরা বাবা-মা হোক।

সন্তানের প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা কিংবা দাম্পত্যের সঙ্কট প্রবীণদের বড় ধরনের মানসিক পীড়ন তৈরি করে।

সংসার জীবনের নানা ঝক্কি ঝামেলা দেখে এখনকার তরুণ তরুণীদের মধ্যে বিয়ে করার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে।

বিয়ে করার চাইতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের তরুণ তরুণীরা অনেক বেশি ব্যস্ত। কারণ সবাই টাকা পয়সা রোজগার করতে চায়। টাকা পয়সা রোজগার করে ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করবে। মানুষ স্বাধীন-স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক। এই ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে মানবিক সম্পর্কগুলো দিন দিন উপেক্ষিত হয়ে আসছে। একজন নারী সন্তান গর্ভে ধারণ, লালনপালন, খাওয়া দাওয়া, লেখাপড়া, স্কুলে আনা-নেয়া সহ সকল কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে, মানিয়ে নিতে নারী গভীর সঙ্কটে পড়ে। সঙ্কট মোকাবিলা করতে স্বামী সহ পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জরুরি। কিন্তু পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে ডিপ্রেশনে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এসব কঠিন পরিস্থিতি দেখেশুনে আমাদের তরুণীদের মধ্যে সন্তান গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা কমে যাচ্ছে। সন্তানসহ একটা কঠিন পরিস্থিতি একা মোকাবিলা করার শক্তি-সাহস তরুণীদের কম থাকায় বিয়ে করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হতে দেখা যায়। সাহস করে যারা সন্তান নিচ্ছে তারা এক সন্তানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে।

সমাজে একটা সময় ছিল ভাত-কাপড়ের লড়াই আর জীবন ধারণের সংগ্রাম। একটি বড় অংশ সেই লড়াই- সংগ্রামে উত্তীর্ণ হয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক জীবনের প্রতি আগ্রহী হতে দেখা গেলো। সেখান থেকে কিছু সংখ্যক তরুণ তরুণী স্বেচ্ছায় কমফোর্ট জোনে আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারা নির্ঝঞ্ঝাট অনাড়ম্বর শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্যে আকুল হয়ে উঠেছে। পিতামাতার সহায় সম্পদ, ক্ষমতা তাদের আর তেমন আকর্ষণ করে না। বৈচিত্র্যহীন ভোগ বিলাসে হাঁফিয়ে উঠছে কিছু সংখ্যক তরুণ তরুণী। আরেক দল মাদকের কাছে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ করে নিঃস্ব হতে চলছে।

বিয়ে করতে অনিচ্ছুক তরুণ তরুণীরা একদিন প্রবীণ হবেন। সেই প্রবীণ জীবনকে স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ করার জন্যে একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। অবিবাহিত প্রবীণরা ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে থাকতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার একা থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার কেউ সঙ্গ লাভের আশায় প্রবীণ নিবাসে থাকেন।

প্রবীণ জীবন চাইলেই স্বাধীন ভাবে উপভোগ করা যায় না। অনেকের শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা চলে আসে। বয়স যত বেশি হবে নির্ভরতা তত বেশি বাড়বে। বার্ধক্যে ব্যক্তির স্বাধীনতা অনেকখানি সঙ্কুচিত হয়ে আসে। নিজের সেবা-যত্নের দায়িত্ব পেশাদার সেবাকর্মীকে দিতে হয়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেন। পুরনো বন্ধু বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ দুর্বল হয়ে যায়। অতীতে যাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল তারা কেউ কেউ সময় করে যোগাযোগ রাখে না। পারিবারিক ঝগড়াঝাটির কারণে পরিবারের সদস্যদের সাথে শীতল সম্পর্ক টেনে নিতে হয়।

বেশ কিছু সংখ্যক প্রবীণ একাকী জীবন অতিবাহিত করছেন। দিন দিন এই সংখ্যা আরো বাড়বে। ভবিষ্যতে প্রত্যেক প্রবীণকে আলাদা আলাদাভাবে সেবা-যত্ন করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। জনবল সঙ্কটের কারণে সেবা মূল্য অধিক দামে কিনতে হবে। ফলে বিপুল সংখ্যক প্রবীণের এককভাবে সেবা গ্রহণ বাস্তব সম্মত হবে না। যৌথ জীবন যাপনের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচন যেমন হবে, একই সাথে নিঃসঙ্গতা অনেকখানি কাটবে।

অবিবাহিত তরুণ তরুণীদের এখনই ভাবতে হবে বার্ধক্য কীভাবে কাটাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়