বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

অ্যাডঃ মোখলেছুর রহমান স্মরণীয় হয়ে থাকবেন
হাসান আলী

প্রায় চল্লিশ বছর আগে কোনো এক সকালে হাইমচর বাজারে মোখলেছ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে হলদর বাঙালীর রেস্টুরেন্টে বসলেন। নাস্তা শেষে বড় দুটো রসগোল্লা আর এক গ্লাস দই দেখে আমি খানিকটা লজ্জায় পড়লাম। আমাকে সাহস দিয়ে বললেন, আরে মিয়া খান। এখনই তো খাওয়ার বয়স। আমার আবদুল মামুর এক বসায় বিশটা কই মাছ খাওয়ার গল্প শুনেন নাই? আমি বুঝতে পারলাম, মোখলেছ ভাই একজন ভোজন রসিক!

সরকারি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে হাইমচর-চাঁদপুরে ওকালতি শুরু করেন। ওকালতিতে খ্যাতি না পেলেও বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ভালো ভূমিকা পালন করেছেন। হাইমচরে সরকার বাড়ি ছিল তাঁর মামা বাড়ি। আবদুল্লাহ সরকার সম্পর্কে ওনার মামা। আমি হাইমচরে আবদুল্লাহ সরকারের দল করতাম, সে জন্যে একটু বাড়তি খাতির পেতাম। আবদুল্লাহ সরকার হাইমচর আসলে মোখলেছ ভাইয়ের বাড়িতে একবেলা খাবারের নিমন্ত্রণ পেতেন। আমারও নিমন্ত্রণ থাকতো। খাওয়া শেষে আসার সময় মামার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিতেন। মাঝে মধ্যে মামা ভাগ্নের রাজনৈতিক বিতর্ক খুবই উপভোগ্য হয়ে উঠতো।

আমার সাথে মোখলেছ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা বাসদ নেতৃবৃন্দ পছন্দ করতো না। তারা মনে করতেন, দলের কাজ বাদ দিয়ে অহেতুক আড্ডা দিচ্ছি। আমি মোখলেছ ভাইয়ের সান্নিধ্য দারুণভাবে উপভোগ করতাম। তাঁর হাসি মুখ, যৌক্তিক আলোচনা, ঠাট্টা মশকরা, আন্তরিকতা, সাদর সম্ভাষণ আমাকে মুগ্ধ করে রাখতো। আমার খাওয়া-দাওয়ার ঠিক ঠিকানা ছিল না, তাই দেখা হলেই প্রথম প্রশ্ন ছিল, খাওয়া দাওয়া করছেন? বাড়িতে ভালো কোনো খাবারের আয়োজন হলে তিনি আমাকে খবর পাঠাতেন।

১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে হাইমচরের বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে শুরু করলে গড়ে উঠে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন। হাইমচরের সর্বস্তরের জনগণ এই আন্দোলনে শরিক হন। মোখলেছ ভাই ছিলেন এই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।

আমরা একসাথে মিছিল-মিটিং-সভা-সমাবেশে যোগ দিতাম। ফলে তাঁর সাথে সম্পর্ক আরো বেশি গভীর হয়ে গেল। চরভৈরবীতে একটা প্রোগ্রাম শেষে শুনতে পেলাম মোখলেছ ভাইয়ের ছেলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। মোখলেছ ভাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি গেলাম। পুত্রের শোকে কাতর পিতার আহাজারিতে আমাদের চোখের পানিতে বুক ভেসে গেল। এটাই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট। এই কষ্ট বুকে নিয়ে আমাদের সাথে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

মোখলেছ ভাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জিততে পারেন নি। একবার শুনলাম জিতে যাচ্ছেন আবার শুনলাম অল্প ভোটে হেরে গেছেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে হতাশ হয়েছেন।

সকল সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল ঈর্ষণীয়। হাইমচরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অনেক দিন থেকেই চলছিলো। শেষ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে হাইমচর কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি হাইমচর সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এই কলেজের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে ততদিন মোখলেছ ভাইয়ের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হবে। তিনি জীবনে কতটা সফল হয়েছেন সেটা বিচার বিশ্লেষণের বিষয়। কিন্তু তিনি যে একজন সার্থক মানুষ সেটার জন্যে বিচার বিশ্লেষণ দরকার নেই। তাঁর জন্ম সার্থক বলে মনে করি। একবার এক কঠিন অসুখে গ্রীন লাইফ হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর শয্যা পাশে আমাকে দেখে হেসে বললেন, এখনো মরি নাই!

তিনি জীবনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হারজিত নিয়ে তাঁর কাতরতা ছিলো না। মোখলেছ ভাই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধাও পেয়েছেন।

তিনি ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। হাইমচরে আরো অনেক বছর ধরে তাঁর শূন্যতা অনুভব হবে।

বিদায় প্রিয় মোখলেছ ভাই। আপনাকে ভুলতে পারবো না।

হাসান আলী : প্রবীণ বিশেষজ্ঞ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়