বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০

শতবর্ষী অগ্নিবীণায় প্রাসঙ্গিক নজরুল
অনলাইন ডেস্ক

আঠারোশ শতক হতে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। সেই এক যাতনা-যাপিত সময় ছিল বৃটিশ-শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে! নিজভূমে পরবাসী মানুষেরা শোষণ-নিপীড়ন আর নির্যাতনের ভয়াবহতায় চোখে দেখত অন্ধকার। এই বেদনাদীর্ণ সময়েই আবির্ভূত হলেন যুগমানসের যুগরবি কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি সৃষ্টির আলোয় চেতনার বাণীতে দূর করতে চেয়েছিলেন শৃঙ্খলিত কালের অন্ধকার। তাঁর অগ্নিবীণা হতে বেজে উঠে প্রলয়ের সুর, শেকল ভাঙার গান আর শৃঙ্খলমুক্তির দৃঢ় প্রত্যয়। বাঙালির ভাগ্যের যুগান্তরের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন নিজ কলমের ডগায়। সদ্য শতবর্ষ পার হওয়া অগ্নিবীণার সেই দ্রোহ আজও সমান প্রাসঙ্গিক, আজও সেই তীক্ষèতা ও তীব্রতায় ঝলকে উঠে প্রলয়োল্লাসের সমকালীন বাণী,

"আস্ল এবার অনাগত প্রলয়-নেশায় নৃত্য-পাগল,

সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!

মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে, মহাকালের চণ্ড-রূপে ধূম্র-ধূপে

বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!

ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!

তারা সব জয়ধ্বনি কর!!"

অত্যাচারী বৃটিশ রাজশক্তিকে তাড়িয়ে যে স্বপ্নদ্রষ্টা শোষিতের মুখে হাসি ফোটাবে কোথায় সেই কাঙ্ক্ষিত বীর? কে আনবে তপ্ত ও তৃষিত দেশ-মায়ের বুকে শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা? মসনদে আসীন অত্যাচারীর ভিত নাড়িয়ে যে ফোটাবে মুক্তির স্বপ্ন-কুসুম, কোথায় সেই যুবক, কোথায় সে রুদ্রবাণীর ক্রুদ্ধ তরুণ যার অরুণরাঙা দীপ্তিতে উদিত হবে নতুন ভোর? পরাধীনতার শৃঙ্খল না টুটালে যে শোষিতের মুক্তি নেই, মুক্তি নেই মৃত্তিকা মায়ের। এই মুক্তিকে ছিনিয়ে আনতে হলে চাই সেই ত্যাগী বীর যাঁর তর্জনী ধারণ করে বজ্র। কোথায় সেই নতুন যুগের অভিমন্যু, যে একাকী ভেদ করে এগিয়ে এসে ভেঙে দিবে অত্যাচারীর ব্যুহ, ভ্রষ্টাচারীর মনোবল। সেই বিদ্রোহী বীর এগিয়ে এসেছে বৈজয়ন্তী তোরণ হতে বিশ্বজয়ী অগ্নিবীণা হাতে। সহসাই সে বজ্রনাদিত হয়ে উঠেছে মহাকালের প্রাসঙ্গিকতায়। এ যেন ঊনিশশো একাত্তরের মহানায়কের চিত্রনাট্য রচনা করে কবি ঊনিশশো বাইশ সালেই তার ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন,

"মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না-

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-"।

দেশ হলো জননীসমা। সেই জননীর পায়ে যখন বেড়ি পরানো হয় তখন তা সন্তানের জন্যে হয়ে দাঁড়ায় দুর্বহ কষ্টের। দেশমাতার পায়ে যখন বৃটিশরাজের শেকল তখন এই শেকলকে বিকল করতে হলে মাকে যে জেগে উঠতেই হবে। দেশমাতা যদি তাঁর আড়মোড়া ভেঙে না জেগে উঠে তবে আঁধার চিরে ভোরের আলো ফুটবে কেমনে! সন্তানের কষ্টে মা কখনো ঈশ্বরী পাটনী, মা কখনো রক্তাম্বরধারিণী। যে হাতে মায়ের উপচে পড়ে মমতার অমৃতধারা, সে হাতেই সন্তানের প্রয়োজনে মা ধারণ করে খড়গ-কৃপাণ। শিষ্টের পালনে দুষ্টের দমনে আদ্যাশক্তির আবির্ভাব সে তো যুগে যুগে। অগ্নিবীণার সাধক-কবি যুগের এই মর্মবেদনা অনুভব করতে পেরেই দেশমাতাকে অনুনয় করে বলেছেন,

"দেখা মা আবার দনুজ-দলনী

অশিব-নাশিনী চণ্ডি রূপ;

দেখাও মা ঐ কল্যাণ-করই

আনিতে পারে কি বিনাশ-স্তূপ।

শ্বেত শতদল-বাসিনী নয় আজ

রক্তাম্বরধারিণী মা,

ধ্বংসের বুকে হাসুক মা তোর

সৃষ্টির নব পূর্ণিমা। "

"নাই দানব

নাই অসুর,

চাইনে সুর,

চাই মানব!’

অগ্নিবীণার কবি দেব কিংবা দানবের কাছে স্বদেশকে বিকিয়ে দিতে চাননি কখনো। তিনি চেয়েছেন, তাঁর প্রিয় জন্মভূমিতে কেবল মানুষের আবাস হবে। বিদেশি বেনিয়াদের তিনি নিপাত চেয়েছেন 'আগমনী' কবিতায়। বৃটিশ বণিকেরা বাণিজ্যের অনুমতি পেয়ে মসনদের দখল নেয়ায় গুমরে কেঁদে মরেছে এই মৃত্তিকা। নবাব সিরাজকে উৎখাত করে আমাদের স্বাধীনতার সূর্যকে সেই যে তারা পাঠিয়ে দিল অস্তাচলে তাকে পুনরুদিত করতে বাঙালির লেগে গেছে পৌনে দুশো বছর। এর মধ্যেই তারা লুটে নিয়ে গেছে বাংলা মায়ের সবুজ-শ্যামল ঐশ্বর্যের প্রায় সবটুুকুই। অগ্নিবীণার কবি নজরুল তাই আত্মপ্রশমনে বলে উঠেন,

"বরাভয়-বাণী ঐ রে কার

শুনি, নহে হৈ রৈ এবার!

ধরব পা’য় কার্সে আর,

বিশ্ব-মা’ই পার্শ্বে যার?"

কবি নজরুল এক মহাধূমকেতু। তিনি প্রলয়ের নটরাজ। কালোবোশেখীর ঝড়ের মতো চরাচর কাঁপিয়ে এলেন আর বাঙালির আকাশকে মাতিয়ে লুকিয়ে গেলেন মহাকালে। পরাধীন বাঙালির মুক্তিতে তিনি এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। গলায় গামছা বেঁধে হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে তিনি নেমে পড়েছেন রাস্তায় বৃটিশ রাজকে ঘৃণা জানাতে। এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর অন্য হাতে রণতূর্য নিয়ে তিনি রচনা করেছেন কালজয়ী মুক্তিবাণী। তাঁর সেই মুক্তিবাণীতে জগতের লাঞ্ছিত-বঞ্চিতের স্বাধীনতার পথ হয়েছে আলোকিত। বৃটিশ রাজশক্তির কাছ থেকে এ ভূ-খণ্ডের যে মুক্তি অবধারিত ছিল তা যেন তাঁর হাত দিয়ে আসবে বলেই নজরুল বলে গেছেন,

"আমি জানি জানি ঐ ভুয়ো ঈশ্বর দিয়ে যা হয়নি হবে তা-ও!

তাই বিপ্লব আনি বিদ্রোহ করি, নেচে নেচে দিই গোঁফে তাও!

তোর নিযুত নরকে ফুঁ দিয়ে নিবাই, মৃত্যুর মুখে থুথু দি!

আর যে যত রাগে রে তারে তত কাল্-আগুনের কাতুকুতু দি।

মম তূরীয় লোকের তির্যক, গতি তূর্য গাজন বাজায়

মম বিষ নিঃশ্বাসে মারীভয় হানে অরাজক যত রাজায়!"

অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুল হিন্দু-মুসলিমের গালাগালিকে গলাগলিতে মেলবন্ধন ঘটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। দাড়ি-টিকিতে বিভেদের দেয়াল তিনি চুরমার করে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর চার ছেলের নামকরণে যেমন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি জাত-শেয়ালের হুক্কা হুয়াকেও তিনি চোখ রাঙিয়েছেন মনুষ্যত্বের মর্যাদাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। সেক্যুলার কামাল পাশা তুরস্ককে যখন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই খুশি হয়ে উঠেন জাতপাতের বিভেদ না মানা নজরুল। তাঁরই চেতনাকে সফলভাবে বাস্তবায়নকারী তুর্কীবীর কামাল পাশার বীরত্বে নজরুল অগ্নিবীণার ঝংকারে উদাত্ত কণ্ঠে বলেন, "ঐ খেপেছে পাগ্লি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,

অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্সে সামাল সামাল তাই!

এই তো চাই! এই তো চাই!

থাকলে স্বাধীন সবাই আছি, নেই তো নাই, নেই তো নাই!

এই তো চাই!!

তারুণ্যের কবি নজরুল। ঝঞ্ঝা জয়েরও তিনি কবি। বৈরি আবহাওয়ায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কূলে ভিড়ানোর আহ্বান কেবল তিনিই দিতে পারেন। দিশাহীন জাতিকে আলোর দিশা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কাণ্ডারী তিনি। শোণিত প্রবাহে যে দ্রোহ, তার প্রতিটি স্পন্দনে নাচে দুর্গম জয়ের কুঞ্জর। সাত-সমুদ্র-তের নদীর ওপার থেকে আসা অসুর শক্তিকে তাড়িয়ে আত্মজয়ের প্রেরণা তিনিই দিতে পারেন তরুণদের। তিনিই পরাধীন জাতিকে শোনাতে পারেন যৌবনের গান। ভাবীকালের সাহসী খেয়াপারের তরণীকে আহ্বান করে তিনি বলেন,

"লঙ্ঘি এ সিন্ধুরে প্রলয়ের নৃত্যে

ওগো কার তরী ধায় নির্ভীক চিত্তে

অবহেলি জলধির ভৈরব গর্জন

প্রলয়ের ডঙ্কার ওঙ্কার তর্জন!

যাত্রীরা রাত্তিরে হতে এল খেয়া পার,

বজ্রেরি তূর্যে এ গর্জেছে কে আবার?

প্রলয়েরি আহ্বান ধ্বনিল কে বিষাণে!

ঝঞ্ঝা ও ঘন দেয়া স্বনিল রে ঈশানে!"

সাম্যের কবি নজরুল কেবল স্বদেশ মুক্তির স্বপ্নেই বিভোর নন। মানবতার বৃহত্তর অর্জনের জন্যে ক্ষুদ্র ত্যাগের দীক্ষাও তিনি দিয়ে গেছেন তাঁর পাঠককে। ভৃত্যকে উটের পিঠে চড়িয়ে খলিফা উমর নিজে তপ্ত মরুভূমির বালুকারাশিতে হেঁটে যাওয়ার মহান ঘটনাকে তিনি কবিতায় রূপ দিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের মনের দ্বারে। মনুষ্যত্বের মুক্তির জন্যে জীবনের সত্যকে আয়ত্ত করতে তিনি বিসর্জনের ডাক দিয়ে গেছেন। মানব-হৃদয়ের মধ্যেই তিনি মন্দির-কাবাকে লালন করার প্রগাঢ় আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্মকে অন্তরে চর্চার মাধ্যমে বৃহত্তর সমাজে মনুষ্যত্বের জয়গানকেই তিনি প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন,

"ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্!

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ', শক্তির উদ্বোধন।"

'অগ্নিবীণা' কাব্যের এক মর্মন্তুদ কবিতা 'মোহররম'। কাজী নজরুল মোহররমের বেদনাকে পংক্তির পরতে পরতে নির্মাণ করে জীবন্ত করে তুলেছেন ফোরাতের তীরে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাসকে। নজরুলের চেতনায় নির্মম এজিদ আর সীমারের কারণে মোহররমের যে বিয়োগ-ব্যথা জীবন্ত হয়ে আছে তারই ধারাবাহিকতা বুঝি আমরা ফিরে পাই পঁচাত্তরের রক্তাক্ত আগস্টের ঘটনায়। সেদিন কারবালা ময়দানে ফোরাতের তীরে ইমাম হোসেন যে নৃশংসভাবে মৃত্যুকে বরণ করতে বাধ্য হয়েছেন, তারই কালান্তরের মঞ্চায়ন ঘটে শেষ শ্রাবণের কান্নায়। শোক হতে শক্তি সঞ্চয় করে কবির মত আজ আমাদেরও বলতে হয়,

'দাউ দাউ জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর

কাঁদে বানু পানি দেও মরে যাদু আসগর

পেল না তো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন

ডাকে মাতা ‘পানি দেব ফিরে আয় বাছা শোন। '

বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী স্লোগান হলো 'জয় বাংলা'। এই শব্দব্রহ্মের শক্তিতে আমরা কাঁপন ধরিয়ে দিতে পেরেছিলাম পশ্চিমা হানাদারদের উদ্ধত বুকে।

দক্ষিণ বাংলার অগ্নি বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাশ স্মরণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত এই জয় বাংলাই হয়ে উঠেছে আমাদের মুক্তির মহামন্ত্র। বঙ্গবন্ধু তাঁর মহাভাষণে জয় বাংলা উচ্চারণ করে তা সঞ্চারিত করেছেন আমণ্ডবাঙালির বুকের চেতনায়। সেই জয় বাংলাই আজ রাষ্ট্রের স্লোগান হয়ে পেয়েছে উপযুক্ত মর্যাদা। অগ্নিবীণার কবি হতে আমরা জয় বাংলাকে আমাদের কণ্ঠে নিয়ে বলি,

"জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!

জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!"

ঊনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টন ফেরৎ হাবিলদার নজরুলের বুকে আঁকা ছিল বাংলার মানচিত্র। অগ্নিবীণা কাব্যে তিনি বিদ্রোহীর মহানাদকে মুক্তক মাত্রাবৃত্তে ঝংকৃত করে তুললেও তাঁর কোমল হৃদয়ে সতত বেজে উঠে বাংলাদেশের গান। তিনি নিজেকে মুক্ত জীবনানন্দ বলে যে আনন্দ পান তার সুর মিশে আছে সবুজ বাংলার মৃত্তিকাণ্ডকণায়। চুরুলিয়ার লাল মাটির নজর আলী ত্রিশালের সবুজ-শ্যামল মমতায় বেড়ে উঠেন নজরুল ইসলামরূপে। ষড়ঋতুর বাংলার বুকে এসে গেয়ে উঠেন,

"এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী

ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবণী

রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল

আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল

ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি

হেরিনু পল্লী-জননী

এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।"

ঊনিশশো বাইশ সালের অক্টোবরে দ্রোহ আর সাম্যের শোণিতধারায় নজরুলের অগ্নিবীণা অবলোকন করে পৃথিবীর আলোর প্রথম ঝলকানি। তারপর বীরদর্পে আজ শতবর্ষ পেরিয়ে সদ্য সে গৌরবে অভিষিক্ত হয়েছে। অগ্নিবীণার অগ্নিচেতনাকে নিজের সোনার বাংলার স্বপ্নের সাথে একাত্ম করে নিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পৃথিবীর মহাভাষণের মহাকবি বিদ্রোহী কবির অগ্নিবীণার সুরে শাণিত করে তুলেছেন তাঁর আদর্শের সংগ্রামকে। শোষিতের মুখে হাসি ফোটানোর মন্ত্রে দীক্ষা নেয়া জাতির পিতা জাতীয় কবির কবিতাতেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পান,

"নম নম নমো বাংলাদেশ মম

চির-মনোরম চির মধুর।

বুকে নিরবধি বহে শত নদী

চরণে জলধির বাজে নূপুর॥

শিয়রে গিরি-রাজ হিমালয় প্রহরী,

আশিস-মেঘ বারি সদা তার পড়ে ঝরি,

যেন উমার চেয়ে এ আদরিণী মেয়ে,

ওড়ে আকাশ ছেয়ে মেঘ-চিকুর॥"

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়