প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০
আঞ্চলিক একটা প্রবাদ আছে ‘চেনা বামনের পৈতা লাগে না।’ হরহামেশাই বাঙালিরা কথ্যে দৃষ্টান্ত স্বরূপ বাক্যটির যথার্থ প্রয়োগ করে থাকেন। এখন কেউ যদি ভেবে থাকেন আমার এই কথাটির প্রয়োগ কোন্ অর্থে, তবে ভাবনার শিয়রে বলবো চোখ বুলাতে থাকুন। আর চিন্তার সাটার খুলতে থাকুন। না জেনে যাবেন না। প্রত্যেক আগন্তুক জানে যেমন অন্তিম শেষে।
হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুরের কথা বলছিলাম। উন্নত বিশ্বের নানা দেশে বহু পূর্ব হতে ও ভারতে ক্রমবর্ধমান মানসিক বিকাশের জের ধরে সাবালকত্বের বছর ১৮ থেকে নামিয়ে ১৬ বছর করা হলেও বাংলাদেশে এখনও আঠারো বছরই সাবালকত্বের বছর হিসেবে গণ্য। সেই সূত্র ধরে হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশনের বয়সও আঠারোতে বিকাশমান। বর্ধিত কলেবরে ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠানের সাবালকত্বের অনুপাতে প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে অধিক। অতএব চাঁদপুরের গতানুগতিকের বাইরের বিষয়ভিত্তিক পড়ুয়াদের কাছে ‘চেনা বামনের পৈতা লাগে না’ কথাটির ভরপুর তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করি।
আমি ২০০২ সাল হতে লাইব্রেরী সায়েন্স বিষয়টাকে মনে বসিয়েছিলাম পড়াশোনার তালিকাভুক্তির পরিসরে। কিন্তু চাঁদপুরে সহজপ্রাপ্য না হওয়ায়, অন্যদিকে রাজধানী বা দূরবাস হয়ে এতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য যে আর্থিক বলপ্রয়োগতার প্রয়োজন ছিলো, তা আমার মুঠোয় ছিলো না। এ রকম মনের ঘরে স্বপ্নের মতো বসবাস করতো বিষয়টি। জীবনের নানান আঙ্গিক, অনুষঙ্গের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যখন ২০১৬ সালের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াই, তখন হঠাৎ অনির্বচনীয় সূত্রযোগে খোঁজ পাই চাঁদপুরের গণ্ডি মাড়িয়েছে বিষয়টির পড়াশোনা। আমি যারপরনাই খুশিতে বিহ্বল হই। কিন্তু হলে কী হবে? কপালের বরাদ্দ কে খণ্ডায়? কোর্স ফি পঁচাত্তর হাজার টাকার ভার তখন নিতে পারেনি মন! আরেকবার জীবনের নিত্যবাসের পর্যবসিত ঘোরে যাপনের রেশ কাটিয়ে সাড়ে পঁচিশ হাজারের মেমোয় এসে ভার সামলাই। তখন পৃথিবীর গহ্বরে ২০২২ সালের সূর্যাস্ত এসে দাঁড়ায়। বয়স বিবেচনা করিনি। এ ব্যাপারটি মনে কখনো কোনোরকম চাপের উদ্রেকও করেনি। কারণ উদ্দেশ্যের কাছে বনিবনার ভার বরাবরই শীতল হয়, হয় ক্ষীণ। জানি যে লেখাপড়ার কোনো বায়সিক মার্জিন নেই। তাই হাল চালিয়ে দেই সুযোগ আর সম্ভাবনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে।
এখন আলাপ হচ্ছে গতানুগতিক লেখাপড়ার যে মাধ্যমগুলো চাঁদপুরে বিদ্যমান, তার গণ্ডি ছাড়িয়ে কর্মমুখী ও মানসিক প্রবৃদ্ধি বিকাশ সাধনের যে জীবনাভিধানিক শিক্ষার যে কেন্দ্রস্থল তা হলো হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন। এ কথা আমার মনগড়া কোনো কৌশলভিত্তিক কথা নয়। এড়ড়মষব-এ সার্চ দিলে এই তথ্যই লাঘব হয়। বর্তমানে বিশেষায়িত গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা (ডিপ্লোমা), বি.এড, বি.পি.এড কোর্সসমূহ চালু রয়েছে। আসছে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স প্রফেশনাল কোর্স এবং চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা, ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর মতো যুগোপযোগী ও ব্যতিক্রম বিষয়গুলো। উল্লেখিত বিষয়গুলোয় অধ্যয়ন করতে চাঁদপুরবাসীকে শুধুমাত্র এই প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হবে। ব্যতিক্রম উদ্যোগজনিত চাঁদপুরবাসীর অহংকার-এর কৃতিত্ব যার ঝুলিতে বর্তায় তিনি হচ্ছেন অধ্যক্ষ মোঃ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া। এর মর্মার্থ কেবল বিষয়ভিত্তিক চাহিদার সাথে জড়িত মানুষগুলোই অকপটে বুঝবে। অন্যরা বুঝবে না তার কানাকড়িও।
২০২২ সালের ১২ অক্টোবর হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন-এ গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা (ডিপ্লোমা) বিষয়ে ভর্তির মধ্য দিয়ে আমার জীবনের বিবর্তিত নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তার মধ্য দিয়ে একটি বিকশিত লক্ষ্যের উদ্ভব হয়। কুয়াতে পড়ে গিয়ে যেমন করে কুয়া হতে জীবন ফিরে পায় কেউ, সেরকম উপলব্ধি জমা হয়। নিয়মিতই ক্লাস করছি বলা চলে। ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা ও সুপাঠ্যতা অন্তরে অনুভব করে চলেছি ক্রমশ।
আগামী ১২ মে হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠার গৌরবময় ১৮ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে কলেজ কর্তৃপক্ষ হতে। প্রাক্তন, সাবেক, বর্তমানের ছাত্র, শিক্ষক, স্টাফদের এক ঐতিহাসিক মেলবন্ধনের আয়োজন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্থায়ী ক্যাম্পাস, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও শহীদ মিনার উদ্বোধন এবং শিক্ষক সম্মাননা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলংকৃত করবেন (আয়োজন মতে) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন ও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, কুমিল্লার চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ জামাল নাসের।
আমার যদি অংশগ্রহণ সম্ভব হয়ে উঠে অবলীলায় সৌভাগ্যবান হয়ে উঠবো। পরিশেষে বলা যায়, আয়োজন সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে সাফল্যমণ্ডিত হোক উদ্ভবের ব্যতিক্রম ঘরানায়।
লেখক : মনিরুজ্জামান প্রমউখ, বিভাগ : গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা (ডিপ্লোমা)। রোল নং : ১৪।
হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।