বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

প্রজা নির্যাতন
অনলাইন ডেস্ক

সুচতুর ইংরেজরা ১৬০৮ সালে মোঘল স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ভারতের সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। পরে থর মুরু থেকে লাদাখ পর্যন্ত এর প্রসার ঘটে। পরে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে ভারত শাসনেরও দুটি মৌলিক সূত্র খুঁজে পায়। প্রথমটি হলো বিভাজনে শাসন, আরেকটি হলো ধর্মানুভূতি কাজে লাগিয়ে শাসন। অতঃপর ১৭৫৭ সালের কোনো এক সময় থেকে ইংরেজরা এদেশ শাসন শুরু করে। সেই থেকেই এই দেশের প্রজা, চাষীর ভালো-মন্দ, সুখণ্ডদুঃখ এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার কেউই তোয়াক্কা করেনি। ফলে কৃষকরা দিন দিন চাষাবাদের প্রতি অনীহা পোষণ করতে থাকে। এতে নানা কৃষক আন্দোলন দেখা দেয়। ১৮৫৭ সালে ইংরেজ সরকার কৃষকের স্বার্থে বঙ্গীয় সার্ভে আইন পাস করে। এতেও কৃষকরা উপকৃত না হওয়ায় এ বছরেই প্রজা-স্বত্ব আইন পাস হয়। যার অধীনে জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর চালু হয়। তা ‘রেকর্ড অব রেভিনিউ’ নামক দপ্তরের অধীনে চলে যায়। ১৮৮৮ সালে কৃষি একটি স্বতন্ত্র দপ্তর হিসেবে চালু হয়। তখন ‘জরিপ কাজ ও ভূমি রেকর্ড’ নামক একটি সংস্থা এটিকে পরিচালনা করে। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত এভাবেই চালতে থাকে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এই বিভাগটি ঢাকাতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় এই বিভাগের নামান্তর হয় ‘ডিপার্টমেন্ট অব ল্যান্ডস এন্ড সার্ভে’, যা বিভিন্ন নামে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে তথাকথিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যে সেবা ‘বিনিময়’ ছাড়া পাওয়া যায় না। এর ফলে বিভিন্ন আমলে সৃষ্ট CS-SA-RS-PS-BS এই পাঁচটি রেকর্ডেই মালিকানা ধারাবাহিকভাবে লিখিত আছে। এতদ্সত্ত্বেও দুরাচার পাকিস্তান সরকার ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়-সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ফেলে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিতাড়নের জন্য এমন কিছু অপকৌশল প্রয়োগ করে, যা পাশবিক নিকৃষ্টতম অসৌজন্যমূলক আচরণ। সামাজিক তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা নিয়েও সংখ্যালঘুদেরকে অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। ফলস্বরূপ অনেক সংখ্যালঘু বেঘোরে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে এসে গেল ১৯৭১-এর ভয়ানক নরহত্যার দিনটি। দলে দলে মানুষ ভারতমুখী হতে থাকে, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল সংখ্যালঘু। তদানীন্তন ভারত সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসামান্য পৃষ্ঠপোষকতায় এবং মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা কার্যকলাপে দেশ স্বাধীনতা পেয়ে গেল মাত্র সাত মাসে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে চির অমলিন হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পাক হানাদার বাহিনীর সব কিছুই মেরামত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে নতুন করে সজ্জিত করা হলো। কিন্তু হলো না শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতনের ‘কালাকানুনটি’। যা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শুধুই নামান্তরিত হতে থাকলো অনিবাসী সম্পত্তি-পরিত্যক্ত সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি ইত্যাদি নামে। তহশীল অফিসের বালামের পাতার কর্নারে কাঠ পেন্সিলে লেখা থাকতো (E-P)। সংশ্লিষ্ট তহশীল কর্মকর্তা তৃপ্ত হলেই (E-P) মুছে গিয়ে খাজনার দাখিলা কাটা হতো।

এরশাদ সরকারের শাসনামল পর্যন্ত ভি.পি. তালিকাভুক্তির আয়তন বেপরোয়াভাবে বাড়ন্ত অবস্থায় আইন করে তা রহিত করা হয়। যা সংখ্যালঘুদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। ক্রমে প্রাকৃতিক নিয়মেই এসে গেল মহামতি শেখ হাসিনার আমল। তিনি মাননীয় জেলা জজ মহোদয়গণের নেতৃত্বে প্রকৃত স্বত্বাধিকারী, স্বার্থাধিকারী, দখলাধিকারী এবং খাজনা প্রদানকারী ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে সম্পত্তির মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে বাংলার সংখ্যালঘুদেরকে সম্পত্তির নিষ্ঠুর দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কাজটি একটি ট্রাইব্যুনাল দ্বারা পরিচালিত হতো। মাননীয় জেলা জজ অথবা মাননীয় যুগ্ম জেলা জজগণের পুঙ্খানুপুঙ্খ কাগজপত্র বিশ্লেষণের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে। এই বিচার কার্যাদি পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট সকল ভূমি অফিসের প্রেরিত প্রতিনিধিগণ। রূঢ় হলেও সত্য যে, বিজ্ঞ বিচারকগণের সুবিবেচিত ‘রায় ও ডিক্রির’ কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে রায় অনুযায়ী হারানো মালিকানা স¦ত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে পরিমাণ শারীরিক, মানসিক, আর্থিক কসরত ব্যয় করতে হয় তা নিশ্চয়ই অনভিপ্রেত আর্থিক দণ্ড মাত্র। মহাপরিতাপের বিষয় যে, পাকি সরকারের অপশাসনের দুর্বৃত্তায়ন রোধে বাংলাদেশীরা দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ক্ষুব্ধ হয়ে যে মহারণ ঘটায়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো, সে পাকি কালা কানুনটি মূলোৎপাটিত না হয়ে রূপান্তরে টিকিয়ে রাখার আমলাতান্ত্রিক চেষ্টা নিশ্চয়ই শহিদদের রক্তের প্রতি ভ্রুকুটি আর মাননীয় জজগণের দেয়া বিজ্ঞজনোচিত রায়ের প্রতি ভ্রুকুঞ্চন স্বরূপ।

মধ্যযুগীয় কবি আব্দুল হাকিমের খেদোক্তি : যে জন বঙ্গে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী/সেজন কাহার জন্ম নির্নয় ন জানি। এদেশে প্রজা নির্যাতন মূলক ঘটনাগুলোর উদ্রেক হয়েছিল ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সৃষ্টির ফলে। ১৭৭৬ সালের মন্বন্তরে প্রায় এক কোটি ভারতবাসীর মৃত্যু হয়েছিলো। ১৭৭৭ সালে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে নীল চাষের বাধ্যতামূলক ইংরেজ অত্যাচার, ১৩৫০ বঙ্গাব্দের জঘন্যতম দুর্ভিক্ষ এবং সর্বশেষ ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বাংলার মারাত্মক দুর্ভিক্ষ।

হে চির মহান! বাংলাকে ফিরায়ে দাও সৌভ্রাতৃত্ব বোধ আর তুলে নিয়ে যাও হানাহানির দুর্বৃত্তায়ন বোধ।

লেখক : বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়