বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

আবিল পরিবেশ
অনলাইন ডেস্ক

প্রাচীন যুগের আবেগ তাড়িত অমৃতের সন্তান প্রস্তর যুগে এসে অনুভূতি প্রবণ মানব সন্তান হয়ে গেলো। এর পরবর্তী সভ্যতার সূচনার যুগে মানুষ হয়ে গেলো আবেগতাড়িত এবং অনুভূতি বিজড়িত মানব সন্তান। এই ডিজিটাল যুগ যেনো আবেগ আর অনুভূতিকে শূন্যে মিশিয়ে দিয়ে জগৎটাকে ভরে দিয়েছে এক বিবেকহীনতার নিষ্ঠুরতায়।

এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার তারা শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের রচিত ‘খাজাঞ্জি বাবু’ নামক গল্পে একজন সরকার (হিসাবরক্ষক) হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি কারখানায় চাকুরি করার পর যথারীতি অবসর গ্রহণ করেন। শেষ বিদায়ের দিনে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলেন আর কারখানার চিমনির নির্গত কালো ধোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিনের স্মৃতি হাসি-কান্না-উল্লাস বিজড়িত স্মৃতির রোমন্থনে পথ যেনো আর ফুরাচ্ছিল না- নিকুত ডিজিটাল যুগের খাজাঞ্চি বাবুদের আন্তরিকতা শুধুই দেনা-পাওনার মধ্যে সীমিত, কোথাও অনুভূতিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুই অবাঞ্ছিত বকশিশের আবেগ।

আবার যে আবেগ নিয়ে ‘মহেশ’ শরৎ বাবুর কাছে একখানা খোলা চিঠি দিয়েছিলেন, সে আবেগ ও অনুভূতিমুক্ত হয়ে ডিজিটাল ফেসবুকে ব্যস্ত জীবনযাপন করছে এবং বুকটা পাটা সদৃশ কঠিন। মহেশ তার স্বাভাবিক জীবনে আর নেই। কারণ তার চারপাশের সবকিছুতেই ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা। যা ডিজিটাল দুনিয়ার স্বাভাবিকত্ব।

মার্কসীয় ক্ষুধার জগতের সার্থক কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য খাদ্য এবং খাদকের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করতে গিয়েছিলেন তা আজ ছন্দহীন গদ্য কবিতায় পরিণত হয়ে জঠরের ক্ষুধার নিবৃত্তি হয়ে গিয়েছে।

সেই ক্ষুধা আজ চরম অমানবিকতার নগ্নতায় পরকীয়ায় সামাজিক পরিবেশ ভয়ঙ্করভাবে দূষিত করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার গণমাধ্যমণ্ডমিডিয়া। এর অভাবনীয় অপব্যবহারে আজ পোস্ট অফিসের ব্যবহার একেবারে সীমিত হয়ে গেছে। শিশুদের খেলাধুলা আর বিনোদনের গণ্ডি একেবারে ছোট হয়ে গেছে। এতে সুচিন্তার বুনন এবং মানসিক গড়নের ক্ষেত্রে মন্দন ঘটে। এ কারণেই বাংলায় আজি বুদ্ধিমত্তার অনাকাঙ্ক্ষিত মন্বন্তর চলছে।

বাংলাদেশে মানবসৃষ্ট দূষণের সংখ্যা অগণিত। তাদের মধ্যে কতগুলো হলো : মিডিয়া দূষণ, পরিবেশ দূষণ, চারিত্রিক দূষণ, সরকারি-বেসরকারি সকল স্তরের অমানবিক ঘুষ দূষণ উল্লেখযোগ্য। তবে ইদানীং আরেকটি মারাত্মক সামাজিক দূষণ এসেছে, যার নাম গুজব দূষণ। এই দূষণে মানবিকতা মারাত্মকভাবে লুণ্ঠিত হচ্ছে। জামা-কাপড় কিংবা অন্যান্য দূষণ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা যায়, কিন্তু মানবসৃষ্ট দূষণ নিবারণ করতে বিবেকের মধ্যেও সুবোধের প্রয়োজন হয়। যা প্রশাসনিক সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হলেই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল কর হবে। তবে আমলাতান্ত্রিক শাসনের নির্মূল ঘটায়ে ঘুষ দূষণের নামান্তর বকশিস অথবা অফিস খরচের দূষণ পরিশোধন করা সম্ভব।

বিজ্ঞানের এই ডিজিটাল যুগে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের ওপর এক অশনি সংকেত ‘প্লাস্টিক দূষণ’। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০-২০৬০ সালের দিকে দেশের নদী-সমুদ্র-জলাশয়গুলোতে মাছের পরিমাণের তুলনায় প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থের স্তূপীকৃত পরিমাণ বেশি হয়ে যাবে। মানবকূলের অসাবধনতার কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মানবকুলকেই মোকাবেলা করতে হবে?

প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো হলো : চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল, প্লেট, কাপ, মগ ইত্যাদি। এগুলো বড় বড় শহর থেকে পানির ¯্রােতে নদী-নালা বয়ে সাগর-মহাসাগরে পতিত হয়। এগুলো একটু ভালো বোধ শক্তির বৈগুণ্যে মানুষই রোধ করতে পারে।

একদা কোনো এক সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা গভীর আগ্রহের সাথে মাটি খুঁড়ে পেয়েছিলেন প্রাচীন মেসোপটমিয়া ও ক্রিটের সভ্যতার নিদর্শন। আরো পেয়েছিলেন অতি প্রাচীন মহেঞ্জেদারো সভ্যতার নিদর্শন। ভূ-তত্ত্ববিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের যৌথ উদ্যোগে কুমিল্লায় মাটি স্তরে স্তরে খুঁড়ে পেয়েছিলেন মধ্যযুগীয় শালবন বৌদ্ধ বিহার সভ্যতার সুস্পষ্ট নিদর্শন। যা বারো শত প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসাবে আজও মানব সমাজে অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থানে আছে।

কিন্তু আজকের এই ডিজিটাল যুগে মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাবে শুধুই অপচনশীল বর্জ্য প্লাস্টিক সামগ্রী। যা স্বাভাবিক ভূ-প্রকৃতির আদিরূপের প্রতি ভ্রুকুটি মাত্র।

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আজ জগজ্জননীর সকল সন্তানই ডিজিটাল এবং স্মার্ট যুগের সদস্য। এ যুগেও যদি আমরা পরিবেশ দূষণের মূল ভূষণ দাহ্য প্লাস্টিক বিনষ্ট করতে না পারি, তবে এটি একজন সুনাগরিকের দায়িত্বের প্রতি চরম অবমাননার নিকৃষ্ট ইঙ্গিত মাত্র।

সর্বোপরি মানুষ অমৃতের সন্তান। অমৃত কিন্তু দূষণমুক্ত মানব সমাজের পবিত্র অবদান। যেহেতু মানুষই এই অনাকাঙ্ক্ষিত দূষণের জন্যে দায়ী, মানুষকেই এর প্রতিকারের জন্যে হতে হবে দৃঢ় প্রত্যয়ী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়