বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

বিতর্কের উর্বরতায় ঋদ্ধ চাঁদপুর
অনলাইন ডেস্ক

সকল জায়গায় সকল প্রয়াস বা উদ্যোগ সমানভাবে সফল হয় না। কোনোটি পুরো সফল হয়, কোনোটি কম সফল হয়, আবার কোনোটি কমণ্ডবেশি বিফল হয়। কোনোটির সাফল্য দফ করে জ্বলে ওঠা আগুনের মতো মনে হলেও স্বল্প সময়ে তা নিভে যায়। এমন সাফল্যকে টেকসই সাফল্য বলা যায় না। কোনো সাফল্যকে টেকসই হিসেবে পেতে হলে উদ্যোক্তার নির্দিষ্ট কাজকে ব্রত হিসেবে নিতে হয়। এজন্যে ধৈর্য, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার আবশ্যকতা তো থাকতেই হয়। পাশাপাশি নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলার সাহসিকতাও লাগে।

স্থিতধী ও দৃঢ়চেতা উদ্যোক্তা তার মহৎ উদ্যোগকে সাফল্যে উদ্ভাসিত করতে নানান আনুকূল্য প্রত্যাশা করে। কিন্তু সব সময় সবখানে সেটা পাওয়া যায় না। বরং অপ্রত্যাশিত প্রতিকূলতায় আনুকূল্য প্রাপ্তিটা বিলম্বিত হয়। যেখানে প্রতিকূলতার চেয়ে আনুকূল্য প্রাপ্তিটা বেশি, যেখানে আনুকূল্যের জোয়ারে প্রতিকূলতা ভেসে যায়, সেখানে উদ্যোক্তা স্বস্তি বোধ করেন এবং কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। সর্বোৎকৃষ্ট বাচিক শিল্প বিতর্কের চর্চা এবং এর প্রসারে, বিশেষত একে ঘিরে আন্দোলন সৃষ্টিতে চাঁদপুরের এক দৃঢ়চেতা উদ্যোক্তা সাব্বির আজম। তিনি প্রায় দেড় দশক আগে বিতর্ক নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এবং আশাব্যঞ্জকভাবে প্রতিকূলতার চেয়ে আনুকূল্য বেশি পেয়ে সহজ-সাফল্য করায়ত্ত করেন। কিন্তু এ সাফল্যকে টেকসই করতে তিনি সকল করণীয় সম্পাদনে ছিলেন সচেতন ও আন্তরিক। বলা যায়, নিবেদিতপ্রাণ এক বিতর্ক-ব্রতী। ২০০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলন (Chandpur Debate Movement-CDM) নামক সংগঠনকে সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি তার যাত্রা শুরু করেন। এ যাত্রাকালে অর্থাৎ সিডিএম-এর প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটিতে যারা সাব্বিরের সাথে ছিলেন, তারা হলেন : সহ-সভাপতি ইবরাহীম খান ইবু, সাধারণ সম্পাদক : মুহাম্মদ ওমর ফারুক ফাহিম (জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত বিতার্কিক), সহ-সাধারণ সম্পাদক : রাজন চন্দ্র দে, সাংগঠনিক সম্পাদক : আশিক-বিন-ইকবাল আনন্দ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক : জহিরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক : হাফিজ আল আসাদ বাবর, কোষাধ্যক্ষ : মাহিনুর আক্তার সুমি, দপ্তর সম্পাদক : ফাতেমা আক্তার শিমু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক : ফয়সাল আলম তারেক, শিল্প, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক : এহেছান ফারুক ছন্দ। উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন : চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোহর আলী, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন ভূগোল বিভাগের শিক্ষক (বর্তমানে বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ) মোশারেফ হোসেন। (তথ্যসূত্র : দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদে বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহিদুর রহমান চৌধুরী ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খানকে এবং কার্যকরী পরিষদে সহ-সভাপতি হিসেবে উজ্জ্বল হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সাইফুল ইসলামকে সহ আরো অনেককে বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর মাসুদুর রহমান শিপু, শাহেদুল হক মোর্শেদ, মোঃ ইউনুছ উল্লাহ ও নাজিমুল ইসলাম এমিলকে নিয়ে এলিট পরিষদ গঠন করা হয়।

নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নেতৃত্বের পালাবদলে নানা কর্মসূচিতে সিডিএমকে প্রাণবন্ত ও টেকসই করার ক্ষেত্রে সাব্বির আজম খুবই সচেতন ও আন্তরিক থাকেন। এর সুফল স্বরূপ কাঙ্ক্ষিত বিতর্ক সংগঠক ও কর্মী এবং অসংখ্য বিতার্কিক তৈরিতে তিনি সফল হন। এ সাফল্যের সুদূর প্রসারী পরিণতিতে তিনি অনেক বড় কাজ হিসেবে আগামী ১৩-১৫ অক্টোবর ২০২২ চাঁদপুর সরকারি কলেজে আয়োজন করতে যাচ্ছেন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ স্মারক স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসব।

একটু পেছনে ফিরা যাক।

সাব্বির আজম চাঁদপুর সরকারি কলেজে অর্থনীতিতে অনার্স পড়তেন। তিনি তখন টিআইবি’র সংগঠন ‘সনাকে’র ‘ইয়েস’ গ্রুপের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নানা উদ্ভাবনী কাজে তার দক্ষতার প্রমাণ রাখেন। আমি সনাক সদস্য হিসেবে তার এই কাজ পর্যবেক্ষণ করে ইতিবাচক অভিমত প্রকাশ করি চাঁদপুর কণ্ঠে। তিনি ফোন করে ও সাক্ষাৎ করে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সাথেও যুক্ত ছিলেন। এ ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি পলাশ মজুমদার তার সম্পর্কে ভালো ধারণা দিয়ে আমাকে অনুরোধ জানালেন, আমি যেনো তাকে বিভিন্ন কাজে সম্ভাব্য সহযোগিতা করি। এরই মধ্যে সাব্বির আজমের সাথে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের একমাত্র পুত্র আশিক-বিন-ইকবাল (আনন্দ)-এর পরিচয় ঘটে ও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আনন্দের কারণে সাব্বির আমার কাছ থেকে সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সফল হন। সে সুবাদে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ২৪ ঘন্টায় লিখে দিলাম সিডিএমের গঠনতন্ত্র। চাঁদপুর রোটারী ভবনে তারা আয়োজন করেন বিতর্ক বিষয়ক উৎসব ও প্রশিক্ষণ। এতে দেশের নামকরা ক’জন বিতার্কিক প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী চাঁদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিতর্ক বিষয়ে ভীষণ উজ্জীবিত হয়। এমতাবস্থায় আমি চাঁদপুর কণ্ঠ সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের সাথে পরামর্শ করে দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার চাঁদপুরের কৃতী সন্তান কামরুল হাসান শায়কের নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করে ২০০৯ সালে সিডিএমের ব্যবস্থাপনায় জেলাব্যাপী শুরু করলাম প্রথম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বস্তুত এ প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই চাঁদপুর যে বিতর্কের জন্যে অত্যন্ত উর্বর সেটি প্রমাণিত হওয়া শুরু হয়।

প্রতি বছরের ১৭ জুন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুণীজন ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ছিলো একটি রুটিন কর্মসূচি। সংবর্ধনা-ক্রেস্টগুলো স্পন্সর করতেন পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কামরুল হাসান শায়ক। এ ক্রেস্টের সংখ্যা বছরের পর বছর বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে শায়কের সাথে ঢাকাস্থ তাঁর অফিসে দেখা হলে তিনি বলেন, শাহাদাত ভাই! এতো লোককে সংবর্ধনার মধ্যে আমি কোনো সৃজনশীলতা দেখছি না। বরং আপনারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এর ফলে তাদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও বাচিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আমি বললাম, এটি অনেক বড় ঝামেলার কাজ। ২০০৭ সালে সেটি করে আমি বাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তিনি বললেন, আমি আপনাকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবো। আমি তার কথা শুনে চাঁদপুর চলে আসি এবং সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করি।

২০০৭ সালের চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত বহুমাত্রিক কর্মসূচির অন্যতম ছিলো ৪টি দল নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। ভেন্যু ছিলো চাঁদপুর রোটারী ভবন। এ প্রতিযোগিতা আয়োজনে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তৎকালীন বার্তা সম্পাদক শহীদ পাটোয়ারী। কিন্তু একটি দল প্রতিযোগিতায় না আসায় আমি ভীষণ হতাশ হয়েছিলাম। সেজন্যে পাঞ্জেরীর কর্ণধার শায়ক সাহেবের প্রস্তাবে নেতিবাচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করি।

২০০৮ সালের শেষ দিকে সিডিএমের প্রতিষ্ঠা এবং বিতর্ক নিয়ে একের পর এক কর্মসূচিতে আমি ভীষণ আশাবাদী হয়ে উঠলাম। কামরুল হাসান শায়কের প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। এ স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে সিডিএমই যে হবে মূল অবলম্বন সেটা আমার ভাবনায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। এ ভাবনা আমি সাব্বির আজমের সাথে শেয়ার করতেই তিনি সিডিএমের সকলকে নিয়ে বেশ উজ্জীবিত বোধ করলেন। ২০০৯ সালের ১৭ জুন চাঁদপুর কণ্ঠের পঞ্চদশ (১৫ তম) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলাব্যাপী বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্যে চলতে থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি। সাব্বির নিজেই এ প্রতিযোগিতার জন্যে একটি স্লোগান ঠিক করেন, সেটি ছিলো : ‘চক্ষে জ্বলে জ্ঞানের মশাল, বক্ষে ভরা বাঁক, মুখরিত যুক্তি-কথায় সত্য প্রকাশ পাক’।

প্রতিযোগিতাটিকে জেলাব্যাপী বলা হলেও পাঁচটি উপজেলায় এর আয়োজন সম্ভব হয়। সে উপজেলাগুলো হলো : শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, মতলব, ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর। এতে ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিতর্ক দল অংশ নেয়। ১১ এপ্রিল ২০০৯ তারিখ শনিবার শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রথম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রতিযোগিতার ছয়টি পর্বের নাম দেয়া হয় : প্রান্তিক (প্রাথমিক বাছাই পর্ব), অগ্রযাত্রা, অভিযাত্রা, জয়যাত্রা (কোয়ার্টার ফাইনাল), জয়ধ্বনি (সেমি-ফাইনাল) ও উল্লাস (ফাইনাল)। উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক পর্ব শেষে ৩০ মে ২০০৯ তারিখে চাঁদপুর রোটারী ভবনে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, যাতে অংশ নেয় অগ্রযাত্রা পর্বে উত্তীর্ণ বিতার্কিকরা। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থেকে বিতার্কিকদের ঋদ্ধ করেন চট্টগ্রামস্থ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির লেকচারার আব্দুল্লাহ আল মাস্উদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাম্পিয়ন বিতার্কিক আসাদুজ্জামান রাংগা, বাংলাদেশ স্কুল অব ডিবেটের সহ-সভাপতি মোকাররামুছ সাকলান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাম্পিয়ন বিতার্কিক তন্ময় চৌধুরী, রেডিও ফুর্তির আউটার ব্রডকাস্টার জিনিয়া আক্তার সুপ্তা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির নুসরাত জামান ও ঢাকার ইমরান উল ইসলাম। এ প্রশিক্ষণের আলোকে বিতর্ক প্রতিযোগিতার অগ্রযাত্রা থেকে উল্লাস পর্যন্ত পাঁচটি পর্ব মানসম্পন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। একই সাথে প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্বের দিন চাঁদপুর কণ্ঠে বিতর্ক বিষয়ক বিশেষ পাতা প্রকাশিত হওয়ায় এ প্রতিযোগিতা নিয়ে জেলায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১৫ জুন ২০০৯ এ প্রতিযোগিতার উল্লাস পর্বে স্কুল পর্যায়ে শাহরাস্তির সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন ও হাজীগঞ্জের বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয় রানার্স আপ এবং কলেজ পর্যায়ে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ চ্যাম্পিয়ন ও চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত সপ্তসুর সংগীত একাডেমী রানার্স আপ হয়। এ দলগুলোকে একদিন পর ১৭ জুন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুরস্কৃত করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন দলের দলপ্রধান ও শ্রেষ্ঠ বক্তা হাওয়া আক্তার, রানার্স আপ দলের দলপ্রধান নাজিয়া আহমেদ পিকসী, স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন দলের দলপ্রধান খাদিজা আক্তার এবং রানার্স আপ দলের দলপ্রধান ও শ্রেষ্ঠ বক্তা নাফিজা আরবীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরো পাঁচজনকে সিডিএমণ্ডচাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিশ্রুতিশীল বিতার্কিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরা হচ্ছেন : হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দলপ্রধান জুবায়েদুল আলম, ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দলপ্রধান চৈতী কুরী, পুরাণবাজারস্থ নির্ঝর খেলাঘর আসরের দলপ্রধান আফরোজা ইয়াছমিন চাঁদনী ও আরো দুজন।

চাঁদপুর জেলায় স্মরণকালে নয়, স্মরণাতীতকালে প্রথম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিলো বিতর্ক বিষয়ক সবচে’ বড় আয়োজন। এই আয়োজনটি আশাব্যঞ্জক সাফল্যে সম্পন্ন হওয়ায় সিডিএম সভাপতি সাব্বির আজম বিতর্ক-নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তার এ নেশায় যেনো আগুন ধরিয়ে দেন ২০০৯ সালের ১১-১৩ জুলাই চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম ইলিশ উৎসবের রূপকার, চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশীদ। তিনি সিডিএমের ব্যবস্থাপনায় ইলিশ উৎসবে প্রীতি বিতর্কের আয়োজন করার দায়িত্ব দেন সাব্বির আজমকে। তিনদিনে জেলার সেরা বিতর্ক দলগুলো এ আয়োজনে অংশ নেয়, যাদের বিতর্ক-পর্ব ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চাঁদপুর শহর ও শহরতলীতে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ্যে বিতর্ক নিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগে। বাংলাদেশ বিতর্ক ফেডারেশনের সভাপতি ডাঃ আব্দুন নূর তুষার ক্যাবল টিভিতে সরাসরি বিতর্ক সম্প্রচারের কথা শুনে বিস্মিত হন এবং বাংলাদেশে প্রথম চাঁদপুরেই এমনটি হয়েছে বলে স্বীকৃতি দেন।

বিতর্ক নিয়ে পরবর্তী আয়োজন কী করা যায় সেটা নিয়ে বুঁদ হয়ে যান সাব্বির আজম। তিনি তার কমিটির সদস্যগণসহ ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ চাঁদপুর রোটারী ভবনে উপদেষ্টা পরিষদের সাথে এক সভায় মিলিত হন। এ সভায় ২০ অক্টোবর ২০০৯ চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দ্বিতীয় সিডিএম চাঁদপুর বিতর্ক উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার স্লোগান নির্ধারণ করা হয় ‘যুক্তির ছোঁয়ায় সংগ্রামী কন্ঠস্বর বদলে দেবে বাংলাদেশ’। এ উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতকে মনোনীত করা হয়। (তথ্যসূত্র : দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯)

অনিবার্য কারণে বিতর্ক উৎসবটি ২০ অক্টোবর ২০০৯-এর পরিবর্তে ২৩ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি, জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডাঃ আব্দুন নূর তুষার। এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫০ জন অতিথি বিতার্কিক, চাঁদপুর জেলার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩২০ জন বিতার্কিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণ করেন। যে উৎসবটি বিতার্কিকদের ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। (তথ্য সূত্র : দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ২৮/১১/২০০৯)

সাব্বির আজমের বিতর্ক-নেশার পাশাপাশি আমার মাঝে বিতর্ক-জ্বর দেখা দিলো। বিতর্ক ছাড়া অন্য কিছুকেই আর প্রধান ভাবনায় স্থান দিতে পারলাম না। বিতর্ক নিয়ে কিছু করতে পারলেই যেনো জ্বরের উপশম হবে। এ সময় জ্বরের ঔষধ নিয়ে নয়, পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে পাশে দাঁড়ালেন একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক, যাঁর নাম ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী (যিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এবং ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত)। তিনি ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে স্মারক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসলেন। ১২ জানুয়ারি ২০১০ শুরু হওয়া এবং ২১ জানুয়ারি ২০১০ সমাপ্ত হওয়া এ প্রতিযোগিতার নাম দেয়া হয় চাঁদপুর কণ্ঠ-সিডিএম নসু চৌধুরী স্মারক বিতর্ক প্রতিযোগিতাণ্ড২০১০। এতে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২টি দল অংশ নেয়। এ কার্যক্রমে কর্মশালাসহ ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী প্রায় লক্ষ টাকা ব্যয় করেন।

দ্বিতীয় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০ শুরু করবো, কিন্ত অর্থের সংস্থান হবে কোত্থেকে, এটা নিয়ে চিহ্নিত হয়ে পড়লাম। দ্বারস্থ হলাম বিশ্বখ্যাত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু অরুণ নন্দী স্মৃতিরক্ষা তহবিলের কাছে। এ তহবিলের অর্থায়নে চাঁদপুর সদর উপজেলা পর্ব সম্পন্ন করতে এর নাম দিলাম ‘চাঁদপুর কণ্ঠ-সিডিএম অরুণ নন্দী স্মারক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০’। ২১ মার্চ এ প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়ে শেষ হয় ৪ এপ্রিল।

২০০৯ সালে আমরা চাঁদপুরের যে তিনটি উপজেলায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা করতে পারিনি, সে তিনটি উপজেলায় ২০১০ সালে বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেই। ৭ এপ্রিল ২০১০ মতলব উত্তরে, ৮ এপ্রিল মতলব দক্ষিণে, ১০ এপ্রিল শাহরাস্তিতে, ১১ এপ্রিল কচুয়ায় ও পরে হাইমচরে প্রতিযোগিতার প্রান্তিক (বাছাই) পর্ব শেষ করে ৪২টি দলকে নিয়ে চাঁদপুর রোটারী ভবনে ৮ থেকে ১৬ মে অগ্রযাত্রা (আন্তঃউপজেলা) পর্ব সম্পন্ন করতে দেড়শ’ বিতার্কিক নিয়ে ১মে ২০১০ একই স্থানে আয়োজন করি বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এতে ১৯তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্তা জিনিয়া আক্তার সুপ্তাসহ বেশ ক’জন নামকরা বিতার্কিক প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন। এ কর্মশালাটির পুরো ব্যয়ভার বহন করেন সিডিএমণ্ডএর উপদেষ্টা, চাঁদপুর ক্লাবের তৎকালীন সম্পাদক ও মৎস্য রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সী-ফুড কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদুর রহমান চৌধুরী। তারপর ১৯-২০ মে ২৪টি স্কুল-কলেজ দলের মধ্যে অভিযাত্রা পর্ব শেষে ১ জুন জয়যাত্রা (কোয়ার্টার ফাইনাল) ও ১০ জুন জয়ধ্বনি (সেমি-ফাইনাল) এবং ১৪ জুন উল্লাস (ফাইনাল) পর্ব সফলভাব সম্পন্ন করি। কলেজ পর্যায়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগ নাজিয়া আহমেদ পিকসীর নেতৃত্বে এবং হাইস্কুল পর্যায়ে জান্নাতুল রাফেয়ার নেতৃত্বে রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়।

দ্বিতীয় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০ সর্বাত্মক সাফল্যে শেষ হওয়ায় আমি ও সাব্বির আজম অসম্ভব উজ্জীবিত হই। ১৭ জুন ২০১০ তারিখে এ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার কামরুল হাসান শায়ক বলেন, যতদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে ততদিন পাঞ্জেরী চাঁদপুর কণ্ঠের পাশে থাকবে। আর চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার বলেন, আমার ও চাঁদপুর কণ্ঠের জীবদ্দশায় তো বটেই, আমার মৃত্যুর পরও এ প্রতিযোগিতা ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে।

এমন সব বক্তব্যে আমার চেয়ে সিডিএম সভাপতি সাব্বির আজম অশেষ প্রেরণা বোধ করেন। সিডিএমের ব্যবস্থাপনায় জুলাই ২০১০ মাসে দ্বিতীয় ইলিশ উৎসবে জেলার সেরা দলগুলো নিয়ে বিতর্কে অংশ গ্রহণ করে এবং ক্যাবল টিভিতে বিতর্কের সরাসরি সম্প্রচার দেখে সাব্বির আজমের মধ্যে বিতর্ক নিয়ে রীতিমত উন্মাদনা তৈরি হয়। তিনি এবার বিতর্ক বিষয়ে বড় ধরনের এমন কিছু করা যায় কিনা সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, যে স্বপ্নে তিনি যে কতোটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন, সেটা কেবল তিনিই জানেন।

একের পর এক সভা এবং প্রয়োজনীয় সকল স্থানে যোগাযোগের পর অবশেষে নির্ধারিত হলো ২৯ ও ৩০ অক্টোবর ২০১০ (শুক্র ও শনিবার) বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সহযোগিতায় চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হবে ২ দিনব্যাপী সিডিএম জাতীয় বিতর্ক উৎসব। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারকে প্রধান উপদেষ্টা, জিএম শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান সমন্বয়কারী, সিডিএম সভাপতি সাব্বির আজমকে চেয়ারম্যান ও মুহাম্মদ এহেসান ফারুক ছন্দকে সদস্য সচিব করে এই জাতীয় বিতর্ক উৎসব বাস্তবায়নের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ‘যুক্তির তরী এবার মেঘনায়, পৌঁছবোই বিজয়ের মোহনায়’ এই স্লোগানে উৎসবটির পৃষ্ঠপোষক ছিলো অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং মিডিয়া পার্টনার ছিলো বাংলাভিশন টিভি ও এবিসি রেডিও ঢাকা। উৎসবটি দেশের ২৬টি জেলা থেকে আগত ১২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমান তারকা বিতার্কিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। উৎসবটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডাঃ আব্দুন নূর তুষার। মোবাইল ফোনে এ উৎসবের সফলতা কামনা করে বক্তব্য রাখেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। এ উৎসবে আমাকে আজীবন সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। এ উৎসবটিকে সফল করতে প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের নিরলস শ্রম ছিলো দেখার মতো। তিনি এ উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট সিডিএমের কর্মকর্তাসহ অন্য সকলকে উৎসব-পরবর্তীতে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে ভীষণ উদ্দীপ্ত করেন।

২০১১ সালে সিডিএম চাঁদপুর জেলার স্কুল, কলেজ ও সমমানের মাদ্রাসা থেকে তিন শতাধিক বিতর্ক দলকে তৃতীয় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানোর বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। এর পাশাপাশি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারি কলেজ ডিবেট ফোরাম (সিসিডিএফ)-এর সভাপতি হিসেবে সাব্বির আজম ও সেক্রেটারী হিসেবে নাজিয়া আহমেদ পিকসী বিতর্ক চর্চা ও এর উন্নয়নে বহুবিধ কর্মকাণ্ডে ব্যস্ততম সময় কাটান। ২০১২ সালে সাব্বির আজম ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে মোটিভেট করে এক ব্যতিক্রম কাজ করে বসেন। সেটি ছিলো টিআইবির সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চাঁদপুর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘প্রথম চাঁদপুর প্রাথমিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১২’-এর আয়োজন। এ প্রতিযোগিতার সাফল্যে ২৫ মে ২০১২ চাঁদপুর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে চাঁদপুর রোটারী ভবনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুর কণ্ঠ ও সিডিএমের যৌথ আয়োজনে সম্পন্ন করা হয় দিনব্যাপী বিতর্ক কর্মশালা। এতে প্রথম যে বিষয়টি উপস্থাপিত হয় সেটির শিরোনাম ছিলো ‘বিতর্কের শ্রেণিকক্ষ’। রিসোর্স পার্সন হিসেবে এটি উপস্থাপন করেন সিডিএমের উপদেষ্টা, এককালের তুখোড় বিতার্কিক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের নিকট সহজবোধ্য এবং বিতার্কিক তৈরির ক্ষেত্রে ভীষণ কার্যকর বলে প্রতীয়মান হওয়ায় ‘বিতর্ক বিধান’ নামে পুস্তিকা আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এটি সম্পাদনা করেন সাব্বির আজম। ডিসেম্বর ২০১২ এটি সনাক কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং বহুল প্রশংসিত হয়।

২০১৩ সালে চাঁদপুর কণ্ঠের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজী শাহাদাতকে সভাপতি ও নজরুল ইসলাম স্বপনকে সাধারণ সম্পাদক করে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ) প্রতিষ্ঠিত হলে পঞ্চম থেকে একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা সিকেডিএফের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়। ডাঃ পীযূষ কান্তির রচনায় সিকেডিএফ প্রকাশ করে বিতর্ক বীক্ষণ নামে একটি পুস্তিকা, বিতর্কায়ন নামে পাঁচটি গ্রন্থিক প্রকাশনা এবং চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশ করে শতাধিক বিতর্ক বিষয়ক পাতা।

চাঁদপুর জেলার বিতর্কের অগ্রযাত্রা দেখে মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান মনজুর আহমেদ মনজু বিতর্কে বার্ষিক বৃত্তি প্রবর্তন করেন। এটি বিতার্কিকদের মধ্যে অশেষ প্রেরণা সৃষ্টি করে। ২০১৪ সালে ৬ষ্ঠ পাঞ্জেরী চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালে বিতর্কে প্রণোদনা বৃত্তি প্রবর্তন করেন চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি, এককালের তুখোড় বিতার্কিক, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এছাড়া সিকেডিএফ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার রচনায় ‘বিতর্ক সমগ্র’ নামে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের মাধ্যমে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রচনার উদ্যোগ নেয়।

২০১৮ সালের ১০ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় হাই স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্কের পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়েও বিতর্ক অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমতাবস্থায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমী নামে ডিবেটিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত হই, চাঁদপুর শহরের বকুলতলায় রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি যার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও উপাধ্যক্ষ হিসেবে রাসেল হাসান এবং সিকেডিএফের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজন চন্দ্র দে এই একাডেমী পরিচালনায় নিরলস শ্রম প্রদান করেন। একই বছর (২০১৯) আমরা একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ইংরেজি মাধ্যমে বিতর্ক অন্তর্ভুক্ত করি। ২০২০ সালে সংসদীয় ধারার বিতর্ক অন্তর্ভুক্ত করে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার যুগপূর্তি আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও করোনার কারণে আর শুরু করা যায় নি, যে প্রতিযোগিতা এখনও বন্ধই আছে।

করোনাকালে সিডিএম ও সিসিডিএফ কমণ্ডবেশি বিতর্ক বিষয়ক নানা আয়োজন সম্পন্ন করতে পারলেও এবং বিভিন্ন স্থানে অংশ নিলেও সিকেডিএফ সেটি পারেনি। ২০২২ সালে সিডিএম বিতর্ক বিষয়ক নানা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১৩-১৫ অক্টোবর চাঁদপুর সরকারি কলেজে আয়োজন করতে যাচ্ছে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০২২। যেখানে দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেবে ২ হাজার বিতার্কিক ও বিতর্ক অনুরাগী। এক্ষেত্রে তাদের অনুপ্রেরণা চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। আর বরাবরের মতো বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ)-এর সহযোগিতা তো থাকছেই। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে রয়েছে চাঁদপুর পৌরসভা ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

চাঁদপুরে বিতর্ক আন্দোলন সৃষ্টিতে শেকড়ের সন্ধান করতে গেলে সিডিএম ও এর প্রতিষ্ঠাতা সাব্বির আজমের কথা আসবেই। আর তাঁকে এক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পেছনে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের অবদানের পাশাপাশি বিডিএফসহ আরো অনেকের সহযোগিতার প্রসঙ্গ অনস্বীকার্যভাবে উত্থাপিত হবেই।

সাব্বির আজম তার প্রতিষ্ঠিত সিডিএমের আয়োজনে ২০১০ সালে চাঁদপুরে যে জাতীয় বিতর্ক উৎসব সম্পন্ন করেছেন, নানা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় সেটি এখনও অনতিক্রম্য। তার এক যুগ পর ২০২২ সালে যে উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছেন, প্রস্তুতির ব্যাপকতায় ধারণা করা যায় এটি ভবিষ্যতের যে কোনো আয়োজকের জন্যে হবে দুরতিক্রম্য। সিডিএমের কার্যক্রমের দীর্ঘ ফিরিস্তি এ দুটি উৎসবের কাছে ক্ষুদ্রই। তবে সাব্বির আজমের প্রতিষ্ঠিত আরেক বিতর্ক সংগঠন সিসিডিএফের গত ১৩ বছরের কার্যক্রমের ফিরিস্তি সত্যিই ঈর্ষণীয়। চাঁদপুর সরকারি কলেজের বর্তমান সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে কর্মরত থাকাকালীন সিসিডিএফের প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহার আনুকূল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত সিসিডিএফ ৮০টির বেশি বিতর্ক কর্মশালা, ৩টি আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ প্রায় ৩০টি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিতর্কে ৪বার, নিউজ ২৪-এ একবারসহ ১৫টি জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

চাঁদপুর বিতর্কের জন্যে কতোটা উর্বর সেটি চাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল হাইমচরে ২০১৮ সালে বিতর্ক একাডেমী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়। চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর কার্যক্রম আপাতত চালানো সম্ভব না হলেও প্রশিক্ষণসহ এই একাডেমীর নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি ২০২২ সালে তারা উপজেলাব্যাপী আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আয়োজন করে রীতিমত চমক দেখিয়েছে।

বিঃ দ্রঃ অনিবার্য কারণে এ নিবন্ধটি সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে চাঁদপুরের বিতর্ক আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে এটির কলেবর বৃদ্ধি করা হবে।

কাজী শাহাদাত : উপদেষ্টা, চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলন (সিডিএম); প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ) ও প্রতিষ্ঠাতা, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমী এবং প্রধান সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়