শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

স্মৃতি হারানো রোগ আলঝাইমার্স
অনলাইন ডেস্ক

আমরা দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতে গিয়ে প্রায়শই অনেক কিছু ভুলে যাই। বাজার করতে গিয়ে দোকানে জিনিস পত্র রেখে আসা কিংবা টাকা কম বেশি দিয়ে আসা। বাজারে গিয়ে ঠিকমতো সদাই পাতি কিনতে না পারা। চেনা জানা লোক দেখে নাম মনে করতে না পারা। চাবি, মোবাইল ফোন, ঘড়ি, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড, মানিব্যাগ, পার্টস, সেপটেপিন, টাকাণ্ডপয়সা, গয়না, জরুরি কাগজ পত্র খুঁজে না নিত্য দিনের ঘটনা। টাকাণ্ডপয়সার হিসাব মাঝে মধ্যে মিলানো যায় না। মোবাইল হাতে ফোন করতে গিয়ে খেই হারিয়ে যায়। কাকে যেন ফোন করলেন মনে করতে পারছেন না। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিশ্চিত হতে হয় কাকে কল করেছেন। দীর্ঘ চেনা জানা মানুষের কন্ঠ ফোনে শুনে চিনতে না পারার কষ্ট মাঝে মধ্যে পাই। সহপাঠী ও সহকর্মীদের নাম ভুলে যাবার বিড়ম্বনা কমবেশি আমাদের জীবনে ঘটে।

বাসায় গ্যাসের চুলা, পানির কল, ফ্যান, লাইট,এসি, দরজা, জানালা বন্ধ করেছেন কি-না নিশ্চিত হতে কারো কারো পুনরায় বাসায় ফিরতে হয়। বিশেষ করে মনযোগের ঘাটতি হলে এমন ঘটনা মাঝে মধ্যে হতে পারে। মানসিক চাপ, নিকটতম আত্মীয়স্বজনের হঠাৎ মৃত্যু, ডিপ্রেশন, মস্তিষ্কের রোগ, স্লিপ এপনিয়া, হাইপোথায়েরিডিজম, ভিটামিন ১২, মাথায় আঘাত ইত্যাদি কারণে একজন মানুষ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে।

উপরোক্ত কারণে স্মৃতি শক্তি লোপ পেলে তা উদ্ধার করা সম্ভব। অন্যদিকে আলঝাইমার্স রোগের কারণে স্মৃতি হারালে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না বরং দিন দিন খারাপের দিকে যাবে। আলঝাইমার্স যে কোন বয়সেই হতে পারে তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। আবার পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

এ রোগের লক্ষণগুলো হলো, উদাসীন হয়ে যাওয়া, সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, স্থান কাল পাত্র বিবেচনা করতে না পারা, সময় আন্দাজ করতে না পারা, চেনা জানা পথ অচেনা হয়ে যাওয়া, চেনা পথে হারিয়ে যাওয়া, একই কথা বার বার বলা, একই কাজ বার বার করা, স্বামী স্ত্রী-ভাই বোন-ছেলে মেয়েকে চিনতে না পারা, টাকাণ্ডপয়সা হারিয়ে ফেলা, দুর্বল সিদ্ধান্ত নেয়া, অস্থিরতা, উদাসীনতা, যোগাযোগ দক্ষতা কমে যাওয়া, ভাষা ব্যবহারে শব্দ খুঁজে না পাওয়া, আচরণের পরিবর্তন, দুর্বল বিচার বিবেচনা।

উপরের লক্ষণগুলো কারো মধ্যে দেখা দিলে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে।

এ রোগের চিকিৎসা নেই বিধায় রোগীর সেবা যত্ন কেমন হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই জরুরি। রোগী দিন দিন খারাপের দিকে যায়, রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পরিবারের সদস্যদের এই রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে রোগী সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আলঝাইমার্স রোগটি দ্রুত সনাক্ত করা হয়না। যখন রোগটি সনাক্ত করা হয় তখন রোগী মোটামুটি খারাপের দিকে যেত শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে পারলে রোগী সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে অনেকদিন কাটাতে পারেন। আমাদের মধ্যে আলঝাইমার্স রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। একে অপরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। সামাজিকভাবে রোগী সমব্যাথী লোকজনের কাছ থেকে পরামর্শ সমর্থন সহযোগিতা পাবে।

হারিয়ে যাওয়া এই ধরনের রোগীকে উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর অথবা পরিবার পরিজনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রোগীর আচার আচরণ নিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে ধৈর্য্য এবং সহনশীল মনোভাব তৈরি করতে হবে।

আলঝাইমার্স আক্রান্ত রোগীকে অনেকই মানসিক রোগী কিংবা পাগল মনে করে। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গোপন করে। সামাজিক ভাবে নিগৃহীত হবার সম্ভাবনা থাকায় এসব মানুষের পক্ষে প্রকাশ্যে চলাচল সীমিত হয়ে যায়। কেউ কেউ রোগীকে একটি রুমে আটকে রাখে। একজন রোগীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একটা সময়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা বিরক্তিকর, কষ্টকর, পরিশ্রমের সেবা যত্নের কাজটি চালিয়ে যেতে চায় না। নানান অজুহাতে আপনজনরা অসুস্থ প্রবীণকে ছেড়ে চলে যান। অনিচ্ছা সত্ত্বে পরিবারের সবচেয়ে দুর্বল সদস্যটি রোগীর সেবাযত্নের দায়িত্ব পালন করেন। অনেক সময় কাজের লোকের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ সঠিক সেবা যত্নের অভাবে তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করেন।

সময় এসেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ কে আলঝাইমার্স রোগীর সেবা যত্ন সম্পর্কে সচেতন করা। জীবনের এরকম একটি পরিস্থিতিতে রোগীর সেবা যত্ন পাওয়া অধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। রোগীকে সেবা যত্ন করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেবা কর্মী গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই সেবা কিনে নিতে হবে। যাদের সামর্থ্য আছে তাঁরা কিনে নিবেন। আর যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তাঁদেরটা, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান ব্যক্তি, স্থানীয় সরকার, এনজিও, সরকার বহন করতে হবে।

লেখক : সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়