শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২২, ০০:০০

এক দশক পূর্ণ হলো পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজে সম্মান কোর্সের বয়স
অনলাইন ডেস্ক

৩ জুন। ২০১২ সালের এ দিনটি চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের জন্যে একটি স্মরণীয় দিন। বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে এদিনে শুরু হয় বহু প্রতীক্ষিত সম্মান কোর্স-এর নবযাত্রা। তিনটি বিষয়ে ক্লাস শুরু হলো পরদিন সকাল থেকে অর্থাৎ ৪ জুন থেকে। বিষয় ৩টি হলো : হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ। প্রসঙ্গত, আমি এ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করলাম সম্মান শ্রেণির ক্লাস। প্রথম বছর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা মোটামুটি সন্তোষজনকই ছিলো। হিসাববিজ্ঞানে ৪০ জন, ব্যবস্থাপনায় ২৬ জন আর সমাজকল্যাণ বিভাগে ৫ জন। এঁরা হলো এ কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী। এঁরা সব সময়ে এ কলেজের ইতিহাসে সম্মানের প্রথম স্টুডেন্ট হওয়ার গৌরব বয়ে বেড়াবে। কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ দোয়ানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, অধ্যক্ষ হিসেবে আমি, কলেজ গভর্নিং বডির সম্মানিত সদস্যগণ সবর্জনাব নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজি (এখন প্রয়াত), আলহাজ¦ মোশতাক হায়দার চৌধুরী (এখন প্রয়াত), সুভাষ চন্দ্র রায়, হাবিবুর রহমান, আবুল কালাম পাটোয়ারী (এখন প্রয়াত), ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিন (এখন প্রয়াত), তমাল কুমার ঘোষ, শিক্ষকগণ ও সম্মান শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্য ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রমুখ।

পরবর্তীতে সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও গভর্নিং বডির সদস্যগণের সহযোগিতায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনক্রমে আমি আরো ৪টি বিষয়ে সম্মান কোর্স চালু করি। এগুলো হচ্ছে : অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি ও সবশেষে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। এসব বিষয়ে সম্মান কোর্স খোলার জন্যে কোনো শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী আমাকে অনুরোধ করেনি। তবুও জেলা পর্যায়ের কলেজ হিসেবে নিজ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে এসব বিষয় খোলার জন্যে সচেষ্ট হই এবং সফলও হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। এখন এলাকার ছেলে-মেয়েরা নিজ বাড়িতে থেকেই সম্মান শ্রেণিতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে ।

অনেকে তুচ্ছ করে বলেছিলো যে, এসব কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা ঠিক নয়। আসলে ওনারা ব্যাকডেটেড ধারণা নিয়ে আছেন। মাইন্ডসেটও পুরানো। এখনো এমনটাই ভাবছেন।

সেদিন বাবুরহাট যাবার পথে এক ছাত্র হঠাৎই নেমে গেলো অটোবাইক থেকে। আপনি বসুন স্যার। কী ব্যাপার! বললো, আমিতো আপনার কলেজ থেকে সম্মান ডিগ্রি নিয়ে ভালো ফলাফলসহ পাস করে এখন একটি ডিগ্রি কলেজে কমর্রত আছি, দোয়া করবেন।

আজ এক দশক হলো, এ কলেজে সম্মান কোর্স খোলা হয়েছে । ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে সম্মান শ্রেণিতে বেড়েছে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষকগণও হয়েছেন অনেক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।

আমি থাকতেই এখানে সম্মানের পরীক্ষার কেন্দ্র হয়, যা এখনো আছে। সেজন্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সম্মান শ্রেণির ছ্ত্রা-ছাত্রীদেরও ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এখানে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। যতদিন সম্মান কোর্স চালু থাকবে, পথ হারাবে না পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলায় পুরাণবাজার কয়েক (প্রায় ২৫০ বছর) শতাব্দির পুরানো জনপদ। নদী পথ থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার লাভ করেছে। মেঘনা নদী অনেকটাই খেয়ে ফেলেছে এ বাজার। এখানে শিক্ষাদীক্ষা প্রসারের দিকে নজর তেমন ছিলো না। চাঁদপুর কলেজ সরকারি হওয়ার কল্যাণেই এখানে প্রতিষ্ঠিত হলো এ কলেজ। পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী সমাজ এগিয়ে এলো। মামলা, হামলা ও হুলিয়া মাথায় নিয়ে এগিয়ে গেলেন ব্যবসায়ী নেতারা। এসবের নেতৃত্বে ছিলেন আলহাজ¦ মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম। পাশে ছিলেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান পাটোয়ারী প্রমুখ। সে সময় কলেজের বিরোধিতাও করেছেন অনেকে। কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলোই, বতর্মান স্থানেই। এগিয়ে এলেন চাঁদপুর কলেজের অধ্যক্ষ এ ডব্লিউ এম তোয়াহা মিয়া, পৌর চেয়ারম্যান আঃ করিম পাটোয়ারী, তখনকার মহকুমা প্রশাসক মোয়াজ্জেম হোসেন ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।

কোনো ব্যক্তিগত কাজে পুরাণবাজারে গেলে দূর থেকে দেখতে পাই-এখন কলেজ চত্বর ও তার আশপাশ এলাকা ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের পদচারণায় কলকাকলীতে মুখরিত থাকছে। কলেজ অভ্যন্তরে আছে সুন্দর ফল ও ফুলের বাগানও। আছে জাতির পিতার প্রতিকৃতি সম্বলিত ম্যুরাল, শহীদ মিনার। স্বাধীনতা/মুক্তির সনদ ৬ দফা।

আশপাশের লোকজনও গবর্বোধ করে বৈ কি। সামাজিক পরিবেশও সুন্দর ও আলোকিত হয়েছে। কলেজ তুমি এগিয়ে যাও, সৌরভে গৌরবে। পরিণত হোক জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বিখ্যাত পাদপীঠ এবং সেন্টার অব এক্সেলেন্সে। হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়। আমরা একদিন থাকবো না । কিন্তু কলেজ ইজ বর্ন টু স্টে ।

লেখক : অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, সাবেক অধ্যক্ষ, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর সদর ও সিনিয়র মেম্বার, চাঁদপুর প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়