বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি : জনদুর্ভোগ চরমে
প্রফেসর ড. মোহাঃ হাছানাত আলী

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও মহামারী করোনার কারণে গত দুই বছরে দেশে অন্তত ৮ দফায় ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে নি¤œআয়ের মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এতে করে টিসিবির ট্রাকে ভোক্তাদের লাইন আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন যে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লোকসানের সম্ভাবনার কথা বলে কিছুটা কম দামে ভোজ্যতেল আমদানি করছেন। ফলে চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় ভোজ্যতেলের দাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারী এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির এ তথ্য নিশ্চিত করেন, যা ইতোমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুয়ায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৩৬ টাকা বিক্রির কথা বলে ছিলো। তখন পাম তেলের দাম ছিলো লিটার প্রতি ১১৮ টাকা। এদিকে নতুন দাম অনুযায়ী এখন থেকে ভোক্তাকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে লিটার প্রতি অতিরিক্ত ৮টাকা গুণতে হবে। আর খোলা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে লিটার প্রতি অতিরিক্ত ৭ টাকা ব্যয় করতে হবে। পাম তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ১৫ টাকা। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পাম তেলের জন্য পূর্বের ১১৮ টাকার স্থলে ১৩৩ টাকা খরচ করতে হবে। ভোজ্যতেলের লাফিয়ে লাফিয়ে দামবৃদ্ধির ফলে চরম বিপাকে পড়েছে নি¤œআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কিছু দিন আগেই জ্বালানি তেলের দাম একলাফে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে করে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে বাজারে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিজ পণ্যের উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী। মানুষের ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়েনি। তাই তো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসেব মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে। গত দুবছরে বহু মানুষ কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকেই ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। বহু মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। চাপ পড়েছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানের ওপর।

২০১৫ সালের পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি এক টাকা বৃদ্ধি না পেলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। জীবন মানের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেতন বৃদ্ধি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

দেশের ইতিহাসে ভোজ্যতেলের দাম এখন সর্বোচ্চ। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকায়। ২০১৯ সালে যা ছিলো প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। তিন বছরে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মণ প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা। অন্যদিকে গত তিন বছরে পাম তেলের দাম মণ প্রতি ৩০০০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাম তেলের বর্তমান বাজার মূল্য ৫৪০০ টাকা, যা ২০১৯ সালে ছিলো ২ হাজার ৮০০ টাকা। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত দুই বছরে ভোজ্যতেলের বাজার মোটেই স্থিতিশীল ছিলো না। এছাড়া মহামারী করোনার কারণে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এমনতর অস্থিরতার কারণে গত দুবছরে অন্তত ৮ দফায় ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারের তথ্য মতে, গত বছরের জুন মাসে পাইকারী বাজারে মণপ্রতি সয়াবিনের দাম ছিল ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০০ টাকায়। নভেম্বরে পৌঁছায় ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। অথচ ২০১৯ সালে এ দাম ছিলো মণপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তিন বছরে দাম বেড়েছে শতাংশের হিসেবে প্রায় ৬৬.৬৬ শতাংশ। মূলত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়ে থাকে। তুলনামূলক কম দামের কারণে দেশে সোয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে পাম অয়েল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভোজ্যতেল ছাড়াও খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে পাম অয়েল। এর মূল উৎপাদক দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। সেখান থেকেই এই তেল আমদানি করা হয়। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। ফলে প্রতি বছর আমাদেরকে ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ কয়েক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় মিটাতে হয়। অথচ সরিষার তেল হতে পারতো অন্যতম বিকল্প ভোজ্যতেলের উৎস। দেশে সরিষার চাষাবাদ জনপ্রিয় করার জন্যে কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা গেলে কৃষকরা একদিকে যেমন লাভবান হতো অন্যদিকে সরিষা চাষে কৃষকেরা উৎসাহিত বোধ করতো। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরশীলতা কমানো যেত। এছাড়া আমাদের দেশে বহু অটোরাইস মিল রয়েছে। অটো রাইস বার্ন ব্যবহার করেও এক ধরনের স্বাস্থ্য সম্মত ভোজ্যতেল (রাইস বার্ন অয়েল) উৎপাদন করা যায়। আমরা আমদানি তেলের বিকল্প হিসেবে এ ধরনের তেল উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন। এছাড়া আমরা দেশে প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী চাষাবাদ করে তা থেকেও তেল উৎপাদন করতে পারি। যেভাবেই হোক আমাদেরকে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

লেখক : প্রফেসর ড. মোহাঃ হাছানাত আলী, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ফৎযধংহধঃ৭৭@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়