প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সম্প্রতি চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি নিয়ে জটিল এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলার রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমি এখানে এই সংকট নিয়ে চাঁদপুরের রাজনীতি এবং এ প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের ভাবনার দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। একটাই উদ্দেশ্য, ঘটনার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি। আগেই বলেছি, চাঁদপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই নানান প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে এসব নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র টানাপোড়েন। ইতোমধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এর জন্য ভূমির ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ সোস্যাল মিডিয়াতে এই বিষয়ে ব্যাপক খবরাখবর প্রচারিত হতে শুরু করে। তারই সূত্র ধরে পরবর্তীতে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে এর প্রতিবাদসহ নানান আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে শুরু করে। যা এখন স্থানীয় রাজনীতিতে বহুমুখী টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে বলা যায়।
এমনিতেই চাঁদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে বিভাজন চলছে। বিগত ২০০৮ সালে ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিয়ে এলে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল তা কিন্তু নয়। তখন দলের অনেকেই বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁরা ডাঃ দীপু মনির পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এখন আর সেই অবস্থা নেই। বরং দলের বিভাজন দিনে দিনে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তা প্রকাশ্য বিভক্তিতে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে সংকট। ফলে এই প্রকল্পের কাজটিও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে। বর্তমানে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম জটিলতা। যা চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির রাজনৈতিক ইমেজে সংকট সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হয়। রাজনীতি যে ষড়যন্ত্রের পায়ে পা মিলিয়ে চলে তাতো ঐতিহাসিক ভাবেই জানা।
মনে আছে, ১৯৯৭ সালে চাঁদপুরের তৎকালের একমাত্র নাট্য মঞ্চ টাইন হলে ডি.এল. রায়ের ‘শাহজাহান’ নাটকটি প্রদর্শিত হয়। বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় জিয়াউল আহসান টিটোর নির্দেশনায় সেই নাটকের একটি বিশেষ মুহূর্তে যখন আওরঙ্গজেব তাঁর পিতা স¤্রাট আকবরকে গৃহবন্দী করে তখন ভগ্নি জাহানারার এক প্রশ্নের জবাবে আওরঙ্গজেব বলেছিল, ‘ভগ্নি, রাজনীতি বড় কূট’। আমরা কি আজও সেই কূট রাজনীতির অন্তর্বাস পরে আছি? না হয় যখন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে এরূপ সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, তখন চাঁদপুরের অপরাপর আসনের সাংসদরা এই সংকট উত্তরণে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়ালেন না কেন? তাঁরা সবাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির কথা বলে চিৎকার করে মঞ্চ ফাটান। উপরন্তু চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান অন্যভাবে মুখ খুললেন। তিনি বললেন, প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি আধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শত শত কোটি টাকার অবাধ বাণিজ্য হচ্ছিল। তিনি আরো বললেন, এর সাথে শিক্ষামন্ত্রী জড়িত। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র জনাব নাসির উদ্দিন আহমেদ একটি অনলাইন পোর্টালে এবং পরবর্তীতে তাঁর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনিও এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানান জাল-জালিয়াতির কথা বললেন। কিন্তু তাঁরা কেউই এর সুষ্ঠু নিষ্পত্তির কোনো দিক-নির্দেশনা দিলেন না। বরং দু’জনেই একই সুর ও ছন্দে তাল মলিয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করে সব দোষ চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর উপর চাপালেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অপপ্রচার ও অভিযোগ খ-ন করে প্রতিপক্ষের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব জেআর ওয়াদুদ এ সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য পরিষ্কার করেন।
প্রকাশিত তথ্যমতে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রীসভায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইনটি অনুমোদন পায়। তারপর এই বৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দিকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিবেদনের কারণে প্রকল্পটি থমকে দাঁড়ায়। সূচনা হয় নতুন বিতর্কের। পত্রিকান্তরে জেনেছি, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের ফেসবুক আইডির স্ট্যাটাসে এ নিয়ে ব্যাখ্যা ও বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত পাঠানো প্রতিবেদনটি সরকারি কাজের একটি অংশ। বিষয়টি আমার কাছে মোটেই সঠিক ও স্বাভাবিক মনে হয়নি। আমার মতে সরকার প্রশাসনের কাজের অংশ এবং এর প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ফেসবুকিং হবে কেন? এতে সরকার প্রশাসনের মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় গোপনীয়তার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এতে জেলা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কিংবা স্থানীয় রাজনীতিতে জেলা প্রশাসনের অহেতুক জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হতে পারে।
এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের একটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। সেটা হলো, চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডে যেখানে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের গণহত্যার স্মারক ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’ স্থাপন করা আছে, তার প্রবেশ দ্বারে লেখা ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’। ভেতরে পাশে একটি শিশু পার্কও করা হয়েছে। কী ভয়াবহ ক্যামিস্ট্রি!! বধ্যভূমিতে বঙ্গবন্ধু পার্ক? ইাতহাসের এই রকমের মিশ্রণ আমার কাছে তেলে আর জলে মেশানোর অপচেষ্টা বলেই মনে হয়েছে। ভাবতে হবে আমরা আসলে কী চাইছি। আমরা এসব করার উদ্যোগ নিলে আমাদের প্রকৃত ইতিহাসটাই বদলে যাচ্ছে কি? তাই বলছি, এভাবে না বুঝে ’৭১-এর বধ্যভূমির সাথে বঙ্গবন্ধু পার্ক বানিয়ে ইতিহাস বদলানোর চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। সে তার প্রতিশোধ নেয় প্রকৃতির নিয়মেই।
যাক প্রসঙ্গে ফিরে আসি। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য কত একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তার মূল্য কত নির্ধারণ করা হয়েছিলো, বর্তমান প্রতিবেদনে তার মূল্য কত দেখানো হয়েছে এসব এখন সবার জানা। এ নিয়ে শহরময়, জেলাময় এমনকি দেশময় আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা আর তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু কেন এমন হলো? যে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল, যা বিগত ১১ মাস ধরে বাস্তবায়নের নানান ধাপ পেরিয়ে এলো, তা হঠাৎ ২০২১-এর নভেম্বরে এসে কেন থমকে দাঁড়ালো? এতোদিন কি এসব কারোই নজরে পড়ে নাই? নাকি সবাই মিলে নাটোরের বনলতা সেনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন?
এসব নিয়ে শহরের রসিকজনদের মনেও অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন নাটোরের বনলতা সেন?’ আর এসব কারণে চাঁদপুরের ভাগ্যের বিড়ম্বনা নিয়েও সাধারণ্যে মর্মস্পর্শী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই লেখার জন্য আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি। এদের কেউই রাজনৈতিক নেতা বা বিশেষ কোন ব্যক্তি নন। এরা সবাই এই চাঁদপুরের সাধারণ মানুষ, আমরা যাদের ‘পাবলিক’ বলি। এদের কেউ সাধারণ দোকানি, কেউ মাঝি, কেউ রিকশাওয়ালা, অটোরিকশার ড্রাইভার, সবজি বিক্রেতা, ভ্যান চালক কিংবা দিনমজুর।
আগেই উল্লেখ করেছি, আমার এই লেখায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষিতে সাধারণের ভাবনাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর পালের বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘ভাবছিলাম, মাইয়াডা সকালে বাসায় চারটা ভাত খাইয়া মেডিকেল পইড়া ডাক্তার হইতে পারবো’। কিন্তু এই সবজি বিক্রেতার স্বপ্ন কি পূরণ হবে? ভ্যান চালক ইদ্রিস মিয়া, ট্রাক রোডে বাসা। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। জানালো, বড় ছেলে ষোলঘরে ভোকেশনালে পড়েছে। তার স্বপ্ন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেটা পড়তে পারতো। তিনি বলেন, ‘নেতাগো গুঁতাগুঁতিতে স্বপ্নটা ভাইঙ্গা গেল’। দিনমজুর নুরুর সরল উক্তি, ‘আমরা আপনাগো মতো পেরাইভেট পড়াইতে পারতাম না। গরীবের পোলাপাইনের পড়ালেখার সুযোগ হইছিল। রাজনীতির নেতারা নিজেগো স্বার্থে দলাদলি আর হিংসা কইরা সব ধংস কইরা দিল’।
তাদের সাথে কথা বলার সময় ভাবছিলাম, কী চরম সত্য কথা শুনছি আমি। এই চাঁদপুর জেলায় অপার সম্ভাবনা আর সৌভাগ্যের দুয়ার নির্মাণ হতে যাচ্ছিল। এই শহরে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েদের উচ্চতর পড়ালেখার অপার ক্ষেত্র উন্মোচিত হতো। বিত্তবানদের কথা নাইবা বলি। তারা চাইলেই দেশে-বিদেশে পড়াতে পারেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সেই সুযোগ-সামর্থ্য কই? পালের বাজারের সবজি বিক্রেতা যখন বলেন ‘বাসায় ভাত খাইয়া মাইয়াডা মেডিকেল পড়তো’, তাঁর এই কথার মধ্যে যে স্বপ্নের বীজ বোনা রয়েছে এবং সেই স্বপ্ন তছনছ করে দেয়ার কারণে তার হৃদয়ে যে ক্রন্দন হাহাকার উঠেছে তা কী দিয়ে ঘোচাবেন রাজনীতির নেতারা? তাদের প্রশ্নের উত্তর কী করে দেবেন?
এদিকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে যে অপপ্রচার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে নেতা-সর্মথকেরা শহরে-প্রান্তরে প্রতিবাদ মিছিল করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরাও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। এরই মধ্যে চাঁদপুরে স্থানীয় প্রায় সবক’টি পত্রিকায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছে। সেখানে এ সকল প্রতিবাদের বিপক্ষে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব কর্মকা-কে তাঁরা দলের বিশৃঙ্খলা হিসেবে যাচাই করছেন বলেই মনে হয়েছে। এতে করে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিভাজনকে কেন্দ্র করে আরো বেশি সংক্ষুব্ধতা প্রকাশের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যা পরবর্তীতে বড় ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় রূপ নিতে পারে বলে মনে হয়।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে দলের অভ্যন্তরে নানান কোন্দল ও বিভাজন চলছে। এসব নিয়ে আমি পূর্বেও একাধিকবার পত্রিকায় কলাম লিখেছি, আজও লিখছি। কারণ সেই বিভাজন এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। বরং তা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এবার চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনী বা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার বা বানচাল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তাতে করে এই বিভাজন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। পাশাপাশি চাঁদপুর-৪ আসন ফরিদগঞ্জ এলাকার এমপি ও সেখানের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে প্রকট রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^¦বিদ্যালয়ের ভূমি নিয়ে চরম সংকট সৃষ্টি হলো। এর পেছনে চাঁদপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। এটা বোঝার জন্য খুব বড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। কিন্তু যা বুঝতে অসুবিধা হয় তা হলো নবীন আর প্রবীণের লড়াই। এ লড়াই যে শাশ^ত তা আমরা না বুঝলেও কিংবা না বুঝতে চাইলেও এটাই সত্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নবীন-প্রবীণের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক রূপান্তর এসেছে। তা দেশের সবক’টি দলেই ঘটেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর হাত ধরে একঝাঁক তারুণ্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দল, সংসদ, প্রশাসন ও রাজনীতির নেতৃত্বে তা ঘটেছে। এরজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ত্যাগ ও বিসর্জন দিতে হয়েছে। প্লাস-মাইনাস ফর্মুলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশ ও জনস্বার্থের প্রয়োজনে অনেক আপন ও প্রবীণকে প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে। আর এভাবেই তিনি সময়ের দাবিকে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। চাঁদপুরের রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও ডাঃ দীপু মনির আগমন জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই তারুণ্যের জোয়ারের একটি অংশ। চাঁদপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে ডাঃ দীপু মনিও সেই তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে তরুণ নেতৃত্বের হাত ধরে এগিয়ে চলেছেন। এতে করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এটাই শাশ^ত ও স্বাভাবিক। এটাই সময়ের দাবি। এই দাবি মেনে নিয়ে তাকে সামনের পথে পা বাড়াতে হবে। এটাই প্রকৃতির অনিবার্য নিয়ম ও শৃঙ্খলা। অনেকে বলেন, প্রবীণদের সাথে নিয়ে বসে আলোচনা করে না এগুলে পথের বিপদ কাটবে না। এগুলো খুবই অবাস্তব ধারণা বলে মনে হয়। আমি বলি ভিন্ন কথা। ভয় পেলে চলবে না। বৃদ্ধ বাঘের গর্জন যতই তীব্র হোক সে তার তরুণ শাবকের হাতেই পরাজিত হয়। এটাই প্রকৃত নিয়ম।