বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

মা তুমি করোনি বিলাসিতা, দেখে যাওনি সন্তানের সুখ
মোঃ আবদুর রহমান গাজী

‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া-মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে দ্বিতীয়টি আর নেই। নদীর তলদেশে তো যাওয়া যায় কিন্তু মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। ‘মা’ যেনো সীমার মাঝে অসীম।

২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আমার মা চিরনিদ্রায় চলে গেছেন। মহান আরশের অধিপতির নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেনো পৃথিবীর সব মৃত মাকে জান্নাত নসিব করেন। আমিন।

মায়ের স্পর্শেই সন্তান ধীরে ধীরে পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠে। পৃথিবীর সব ধর্মই মায়ের মর্যাদাকে উচ্চাসীন করেছে। ৩৬৫ দিনের প্রতিটি সেকেন্ডেই মনে করতে চাই ‘মা’ শব্দটিকে। মা, আম্মা, আম্মি, মাম্মি সন্তানেরা যে যেভাবে ডাকুক, এই শান্তির ডাক শতকিছুর বিনিময়েও অন্য কোনো শব্দের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বিভিন্ন ভাষাভাষীর সন্তানের কাছে ‘মা’ ডাক শব্দটি কতই না আপন। প্রথম দিন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয় না। মা তাই আমাদের কাছে অতুলনীয়, তিনি অনন্য। কিন্তু সেই অতুলনীয় মানুষটিকে অনেক সময় তাদের সন্তানেরা উপযুক্ত প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়। তখনো মা আগের মতোই তাঁর সন্তানের জন্যে মঙ্গল কামনা করেন।

‘মা’ তোমার কথা মনে হলেই মনে পড়ে তোমার কষ্টের কথা। ছোট থেকে বড় হয়েছি, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, দেখেছি কোনো না কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে আছো তুমি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসকাবারি গোণা টাকায় সংসার চালানোর মতো চিরন্তন সব ঝামেলা। ছোট বেলাতে তোমার এসব ঝামেলা মনে তেমন প্রভাব ফেলত না, অবুঝের মতো এটা সেটা আবদার করে ফেলতাম। অনেক ছোট ছিলাম মা, অনেক অবুঝ ছিলাম। তাই বিনা কারণেই অনেকভাবে কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। পড়াশোনা করতাম না, মাদ্রাসায় যেতে চাইতাম না, গরুর ঘাস কাটার নাম নিয়ে সারাদিন রোদে রোদে ঘুরতাম। আরও অনেক কিছু করেছি, যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না।

শুনেছি মা আর সন্তানের মাঝে অজানা একটা বাঁধন থাকে। যে বাঁধনের কারণে মা তাঁর ছেলের কথা কোনো মাধ্যম ছাড়াই শুনতে পায়। তুমিও কি আমার হৃদয় থেকে বলা কথাগুলো শুনতে পারছ মা?

‘মা’ তোমাকে খুব মনে পড়ে। বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে যেমনটি করে পাঁচটি সন্তানকে লালন পালন করেছ, সেটি আমার দৃষ্টিতে খুবই নজিরবিহীন। আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। প্রতিদিন ফজর নামাজ শেষে পুরো বাড়ির আঙ্গিনা নিজের মতো পরিষ্কার-পরিছন্ন করে গাভীর দুধ দোহন করে দিতে। আর সে দুধ বাজারে গিয়ে বিক্রি করতাম। এভাবেই পড়ালেখার মাঝে পরিবারের কাজ নিয়ে তোমার নেতৃত্বে আমাদের সংসার চলছিল। আর সাথে ছিলো বাবার চাকুরির পেনশনের টাকা। এ সামান্য আয়ের টাকা দিয়েই চলতো আমাদের সংসার। মা তুমি করোনি বিলাসিতা, দেখে যাও নি সন্তানের সুখ। মা, তোমার সন্তানরা যখন টাকা রোজগার করতে শিখছে, ঠিক তখনই দয়াময় প্রভু তোমাকে নিয়ে গেলো চির নিদ্রায়। মা তুমি হঠাৎ ১৩ জানুয়ারি (২০২০) অসুস্থ হয়ে পড়লে। মা চিকিৎসা করাতে কার্পণ্য করেনি তোমার সন্তানরা। চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছো। তাতেও তোমার সন্তানরা তুষ্ট হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিএমএইচ। সেখানেও তোমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রিয়জনদের দোয়া আর চিকিৎসকের আন্তরিকতায় আল্লাহর মেহেরবানিতে ২৮ জানুয়ারি সুস্থ হয়ে আবারও বাড়ি ফিরলে। কিছুদিন ভালো থাকার পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে রফিকে আলার ডাকে চলে গেছো (ইন্নালিল্লাহি...রাজেউন)।

মায়ের শেষ বেলার শেষ কথাগুলো ছিল আমাদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক। তিনি ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে এনে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে গেছেন। তার মধ্যে কিছু কথা ছিলো আমাদের সবার অজানা। মায়ের মৃত্যুর পর আমার বড় বোন (মনোয়ারা বেগম) কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন। সত্যতা যাচাই করতে আলমারি খোলা হলো। বোনের কথা মতো সব মিলে গেলো। এতে সবাই চমকে উঠলাম। মায়ের আলমারিতে ছিলো ৫৪ হাজার ২শ’ ৮৩ টাকা। আর ব্যাংকে ছিলো ২ লাখ টাকা। সে বিষয়েও মা বলে গেছেন। ব্যাংকের টাকাটা ছিলো আমার বড় ভাইয়ের (আনিসুর রহমান) নামে নমিনি। কিন্তু মা বড় বোনকে বলে গেছেন সে টাকার ১ ভাগ ছোট ভাই আতাউর রহমান মামুুনকে ও ছোট বোন নাজলী আক্তার মুক্তাকে দেওয়ার জন্যে। ইচ্ছে করলে বড় ভাই ২ লক্ষ টাকা কাউকে না দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মা সাংসারিক সব বিষয়ে তদারকি করতেন। বাবার মৃত্যুর ২৫ বছর পর মায়ের এ মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। আজ আমরা মা হারা। মায়ের আদর-¯েœহ থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত হয়নি মায়ের রুহানি দোয়া থেকে। আর সে সুযোগ পেতে হলে যেতে হয় কবরের নিকট। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও পবিত্র কোরআনে বলেন, তোমরা কবরের নিকট যাও (সূরা-তাকাসূর)। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতালে কালেমা পড়তে পড়তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন আমার মা। পাঠক, শুভাকাক্সক্ষী, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলের কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেনো আমার বাবা ও মাকে জান্নাত নসিব করেন। আমিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়