বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

হঠাৎ শিক্ষামন্ত্রীর ‘ইমেজ’ নষ্টের ‘অপতৎপরতা’ কেন?
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগকে ‘মিথ্যাচার’ দাবি করে ফুৎকারে উড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় দলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।

তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক প্রত্যাখানের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিও। তিনি বলেছেন, জমি অধিগ্রহণে আমার পরিবারকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

গণমাধ্যমে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়ে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগের জোরালো প্রতিবাদ করেছেন মন্ত্রীর বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদও, যিনি ডাঃ টিপু নামে পরিচিত।

রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তান একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও। কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা দরপত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে গত এক যুগেও তার কোনো রকম সম্পৃক্ততা না থাকলেও রহস্যময় কারণেই যেন মহল বিশেষের কোপানলেই পড়েছেন। দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ও কর্মীবান্ধব মানসিকতার জেরে তিনি ভেতরের বাইরের চিহিœত মহলের অপরাজনীতির মুখে পড়েছেন।

জমি অধিগ্রহণ নাটকের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দাঁড় করিয়ে প্রকারান্তরে ডাঃ দীপু মনির সাদা জামায় কালো দাগ লাগানোর অপচেষ্টায় মরিয়া মহলটির সব কূটকৌশল কার্যত ভেস্তে গেছে। মন্ত্রী আলোচ্য বিষয়টিকে বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মাসেতুতে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের মতোই মনে করছেন।

শিক্ষামন্ত্রীর সময়োপযোগী সংবাদ সম্মেলনে টু দ্য পয়েন্টে সবকিছু খোলাসা করার মধ্য দিয়ে দলীয় একশ্রেণির বিরুদ্ধবাদীদের লম্ফঝম্ফ থেমে গেছে। মন্ত্রীর বলিষ্ঠ কথন এবং ডাঃ টিপুর যুক্তি ও তথ্যনির্ভর ওপেন চ্যালেঞ্জও ফুটো বেলুনের মতো চুপসে দিয়েছে কুচক্রীদের। দীপু মনি নিজেও বিষয়টির তদন্ত দাবি করেছেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মন্ত্রীর এই দৃঢ়চেতা মনোভাব সোস্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ফখরুলদের কণ্ঠে দলীয় স্থানীয় এক নেতা ও তার অংশের একটি বিশেষ মহলের অঙ্গুলি হেলনে অপপ্রচার রাজনীতিতে মূলত স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী একজন শিক্ষামন্ত্রীর পরিচ্ছন্ন ইমেজ নষ্টের অপতৎপরতা হিসেবেই মনে করছেন কেউ কেউ। এই অপকৌশলে বেশ কিছু প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের অভিযোগও প্রশ্নবোধক হিসেবে দেখা দিয়েছে। মন্ত্রী এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করাকে সমীচীন মনে না করলেও অথেনটিক তথ্যে অভিযোগের বিপরীতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘জেলা প্রশাসন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির প্রথম প্রাক্কলনকৃত মূল্য ৫৫৩ কোটি টাকা, যা জমির মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার কারণে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক দ্বিতীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটির প্রাক্কলনকৃত মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা (যেখানে অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জমি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ইতোপূর্বে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে) যা বাজার মূল্য বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। একই সাথে বলা হচ্ছে, পূর্ববর্তী প্রাক্কলনে বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি দাম ধরা হয়েছিল। ১৯৩ কোটি টাকার ২০ গুণ গণিতের কোন্ নিয়মে ৫৫৩ কোটি টাকা হয়, তাও বোধগম্য নয়।’

শিক্ষামন্ত্রী সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যখনই তিনি চাঁদপুরের জন্য বড় প্রকল্প হাতে নেন তখনই একটি বিশেষ মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন। মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।

জমি নিয়ে পুরো ঘটনার আদ্যোপ্রান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক ডাঃ জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে নদীর পাড়ে হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর বহু আগে থেকেই অল্প অল্প করে জমি কিনছিলেন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা দুটি স্থানের মধ্যে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের স্থানটি চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে আমার ভাই রেজিস্টার্ড দলিলমূলে কেনা সব জমি হস্তান্তর করে দেন। আমি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার কারণেই তিনি জমি হস্তান্তর করে দেন। কারণ তার কেনা জমি সরকার থেকে অধিগ্রহণ করা হলে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, কিন্তু কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘কে বা কারা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানে জমি কিনছেন, তা আমার জানার কথা নয়। শুধুমাত্র আমার বড় ভাইয়ের হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের জন্য আগে থেকেই কেনা জমির বিষয়ে অবহিত ছিলাম এবং অধিগ্রহণের আগেই তিনি দলিলমূলে তা হস্তান্তর করে দেন।’

কাজেই এক্ষেত্রে মন্ত্রী ও তার পরিবারকে ঘিরে অসৎ উদ্দেশ্যেই এসব কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে। মূলত তার সম্মান ও ইমেজ ক্ষুণœ করতেই এই ঘৃণ্য কায়দা-কানুনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পর্দার আড়ালের অপকৌশল মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য চাঁদপুরের মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।

কেউ কেউ মনে করছেন, নানা কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপত্য স্নেহ পেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সরকারের পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও তিনি। সরকার ও সংগঠনে সমানভাবে সক্রিয়। তার নিজ জেলা চাঁদপুরে আরও কয়েক নেতা রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত হয়ে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেদের খাদের কিনারায় নিয়ে গেছেন।

কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও কোনো মেয়াদেই প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে পড়েননি দীপু মনি। সরাসরি বা অপ্রকাশ্য কোনো দুর্নীতির অভিযোগও নেই তার বিপরীতে। জনমত বা গ্রহণযোগ্যতার কারণেই স্থানীয় রাজনীতিতে দীপু মনি বা তার ভাই ডাঃ টিপুর প্রভাব বেড়েছে, অন্যদের কমেছে।

কোন ছকেই শিক্ষামন্ত্রীকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েই এবার তাকে ‘বিতর্কিত’ করতে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। রাজনীতিতে হারিয়ে যাওয়া কুশীলবরা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এসবের ফলেই দলের ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছেন ডাঃ দীপু মনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যার কাজের প্রেরণা তাকে কি গোয়েবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা হাসিল আদৌ সম্ভব-এমন প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।

সূত্র : কালের আলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়