প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
অনেক সপ্রাবির চিত্রই এমন
আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সপ্রাবি) গুলোর অধিকাংশেরই এখন রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভবন। কোনোটি একতলা, দোতলা কিংবা তারও অধিক তলা বিশিষ্ট। কোথাও ঠিকাদারের কাজের মান ভালো হওয়ায় ভবন হয়েছে টেকসই, আবার কোথাও খারাপ হওয়ায় স্বল্প সময়ে ভবন হয়ে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি অনেক দপ্তরে নিয়োগ বন্ধ থাকলেও সপ্রাবিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ নেই। সেজন্যে সপ্রাবিগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট পূর্বের চেয়ে অনেক কম। উপ-বৃত্তির কল্যাণে শিক্ষার্থী সঙ্কট নেই বললেই চলে। কিন্তু শতকরা অন্তত ষাটভাগ সপ্রাবিতে শিক্ষার কাক্সিক্ষত/সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। কেননা বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি)-এর প্রায় আশি ভাগই নামকাওয়াস্তে থাকে, পূর্ণ সক্রিয়তায় বাকি ২০ ভাগ থাকে-এমনটি বললেও অত্যুক্তি হয়ে যায়। নিষ্ক্রিয় বা কম সক্রিয় এসএমসির কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। কারণ, প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবকরা চেষ্টা চালিয়ে কেবল বিদ্যালয়কে শিক্ষার পরিপূর্ণ উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। এসএমসির সক্রিয়তাতেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর একটি সপ্রাবির সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যেমন-নূতন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবন সংস্কার, সীমানা দেয়াল নির্মাণ, মাঠ ভরাট, মাঠকে খেলার উপযোগীকরণ ইত্যাদি।
|আরো খবর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘সমস্যার মাঝে এগিয়ে যাচ্ছে ঘাসিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ শীর্ষক সংবাদটি পড়ে জানা যায় যে, এ বিদ্যালয়টির মাঠ ভেঙ্গে পুকুরে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট থাকায় পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। সীমানা দেয়াল না থাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের পুকুরের পানিতে পড়ে যাবার নিত্য শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, বিদ্যালয়টি কাক্সিক্ষত পরিবেশ সঙ্কটে ভুগলেও সাফল্যের সাথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঘাসিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতোই আমাদের দেশের অনেক বিদ্যালয়ের চিত্র। কোনো বিদ্যালয়ে মাঠ আছে তো ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় নেই; কোনো মাঠ ব্যবহার উপযোগী হলেও সীমানা দেয়াল নেই। ব্যস্ত সড়কের পাশে শিক্ষার্থীরা এমন মাঠে খেলে ঝুঁকি নিয়েই। এসএমসি সক্রিয় হলে এবং তাদের আন্তরিক উদ্যোগ থাকলে এমন সমস্যার সমাধান করাটা কঠিন কোনো বিষয় নয়। নানা তদবিরে তারা বিদ্যালয়ের মাঠ, ভবনসহ অন্য সকল সমস্যাই সমাধান করতে পারে।
আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভালো পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ্য করছি। তাদের অনেকে তোষামোদ ও উপহার পেয়ে তেলে মাথায় তেল দেয়াতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এর ফলে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে উন্নয়নের জোয়ার লেগে যায়, আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে উন্নয়নের লাগাতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এমনটি প্রত্যাশিত নয়। তারপরও এমনটি চলতে থাকলে ঘাসিপুর সপ্রাবির মতো বিদ্যালয়গুলো কষ্ট করে এগুতে গিয়ে এক সময় হোঁচট খাবে নিশ্চয়ই।