প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার প্রেক্ষাপট জানুন
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর দেশে বিভিন্ন ধাপে ইউপি ও পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপ ১১ নভেম্বর ও তৃতীয় ধাপ ২৮ নভেম্বর সম্পন্ন হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার চেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার ঘটনাই পর্যবেক্ষকসহ বিভিন্ন মহলে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এতে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকে ইউপি চেয়ারম্যানরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার বিষয়টি ভাববার কোনো অবকাশ তৈরি হয়নি। বরং এ সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং প্রতিপক্ষকে নানাভাবে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কৌশল নিয়ে মুখরোচক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
|আরো খবর
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে মতলব উত্তর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদে তিনজনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার বিষয়টি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু শোনা না গেলেও চাঁদপুর সদর উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দুটি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যানদ্বয়ের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে নিয়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা উঠেছে। আমাদের পাশর্^বর্তী জেলা কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় অর্থাৎ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এলাকায় পাঁচ ইউপির চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সকলেই বিনা ভোটে পাস করেছেন। একই ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউপিতে। লাকসামের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেছেন নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে কখনোই একটি উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেনি। প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে উক্ত পাঁচটি ইউপিতে একটি পক্ষের বাইরে কাউকে প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি-এটি স্পষ্ট। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ নভেম্বর ২০২১)।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ইউপি নির্বাচনে কেউ ছলে-বলে-কৌশলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার বিষয়টিকে ‘শৃঙ্খলা বিরোধী অপকর্ম’ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। কিন্তু এই হুঁশিয়ারির আলোকে তিনি সরকারি-বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী কিংবা দলীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্তত ২-৪ জনকে দলীয় শাস্তির আওতায় আনেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউপি/পৌরসভাসহ যে কোনো নির্বাচনে সারাদেশে ২-৪ জন তথা স্বল্পসংখ্যক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার ঘটনা ঘটতে পারে-এটা স্বাভাবিক। তবে জেলায় জেলায় উপজেলায় উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক, যেমনটি চলমান ইউপি/পৌরসভা নির্বাচনে ঘটে চলছে। সেজন্যে এর প্রেক্ষাপট জানার জন্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে, প্রয়োজনে দলীয় বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হুঁশিয়ারির আলোকে ন্যায্য ব্যবস্থাগ্রহণ করা দরকার। অন্যথায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং বিরোধী পক্ষ নির্বাচন নিয়ে কথা বলার অবারিত সুযোগ পাবে বলে আমাদের ধারণা।