প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
একটি অভিযান যেতে না যেতেই আরেকটি অভিযান
এইতো গেলো ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের কারণে ২২দিন জেলেদের কোনো মাছ ধরতে দেয়া হয়নি। বিনিময়ে সরকার মাথাপিছু ২০ কেজি চাল দেয়ার কথা বলেও শতভাগ নিবন্ধিত জেলেকে কোনো অজ্ঞাত সীমাবদ্ধতার কারণে দিতে পারেনি। আবার স্থানীয় প্রশাসন এবং দাতা ব্যক্তিরাও কিছু জেলেকে নদীতে না নামার প্রণোদনাস্বরূপ খাদ্য সহায়তা দিলেও তা হয়েছে নিতান্তই প্রতীকী, সামগ্রিকভাবে নয়। এতে অধিকাংশ জেলে খাদ্য ও অর্থকষ্টে ভুগেছে।
|আরো খবর
২৫ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার পর জেলেরা নদীতে সোৎসাহে সদলবলে নেমেছে। কম-বেশি ইলিশসহ বড় বড় পাঙ্গাশ পেয়েছে। জেলে পরিবারে স্বস্তি ও সুখের হাতছানি লক্ষ্য করা গেলেও ৬ দিনের মাথায় জেলেরা জানতে পারলো, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ ৮মাস ধরে ইলিশের বিচরণস্থল হিসেবে চিহ্নিত নদীগুলোতে চলবে জাটকা রক্ষা অভিযান। এ সময়কালে ১০ ইঞ্চির ছোট সকল জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ বিনিময় ও মজুত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। জাটকা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে চালানো হবে সমন্বিত অভিযান। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ১ থেকে ২ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। ১ নভেম্বর সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করে চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগ। দুপুর পর্যন্ত জেলা টাস্কফোর্সের উদ্যোগ চাঁদপুর সদর উপজেলার পদ্মা-মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন জেলে অধ্যুষিত জনপদে মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা ও জেলেদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
আমাদের পর্যবেক্ষণে মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের অভিযানে সংশ্লিষ্ট জেলা টাস্কফোর্স এতোটাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে যে, তারা ৮ মাসের জাটকা রক্ষা অভিযানের অন্তত একদিন আগেও জেলেদের মাঝে প্রচারণার কাজটি করতে পারেননি। আর স্বতন্ত্রভাবে আভিযানিক তৎপরতা কিংবা প্রচার-প্রচারণা চালানোর মতো জনবল ও উপকরণ তো জেলা-উপজেলা মৎস্য বিভাগের নেই-ই। তাদেরকে কিছু আইন দিয়ে সরকার সন্তুষ্ট করতে পারলেও প্রয়োগের সামগ্রিকতায় পুষ্ট করতে পারেনি। সেজন্যে মৎস্য বিভাগকে বলা হয় ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’।
কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের প্রধান কর্মক্ষেত্র নদী হলেও মৎস্য সম্পদ রক্ষাই শুধু তাদের প্রধান কাজ নয়, নৌপথের নিরাপত্তাসহ তাদের আনুষঙ্গিক আরো কাজ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সরকারের সকল নীতি ও নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে এবং উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদয়াস্ত, এমনকি ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিসি, ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, এসপিসহ সকল পুলিশ কর্মকর্তা বহুমাত্রিক কাজে ব্যস্ত থাকেন নিত্যদিন। এঁদেরকে ৮ মাসের জাটকা রক্ষা অভিযানে যথার্থভাবে কাজে লাগানো অসম্ভব। এজন্যে মৎস্য বিভাগকে সকল জনবল, সশস্ত্র আনসার, স্পীড বোট, নৌকা ইত্যাদি দিয়ে সমৃদ্ধ করা অতীব জরুরি। তাহলে এ বিভাগটি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নির্দিষ্ট সময়ে একটির পর একটি অভিযান চলাকালে শুধু সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে পারবে না, সারা বছরই সেটি পারবে বলে বিজ্ঞজনের অভিমত। এ অভিমতটি সুবিবেচনার জন্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।