প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
মানুষের শেষ ঠিকানা কবর/শ্মশান। এক লোক সরকারি চাকুরি থেকে অবসরগ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচ্যুইয়িটির টাকা পেয়ে প্রয়োজনীয় খরচাদি সম্পন্নের পর লক্ষ্য করলেন, তিনি মারা গেলে যে কবরস্থানে চিরশায়িত হবেন, তার রাস্তা ভালো নেই, আর সীমানা দেয়ালও নেই। সেজন্যে হাতে থাকা অবশিষ্ট টাকার একটা ভালো অংশ ব্যয় করে তিনি সীমানা দেয়াল নির্মাণ করলেন এব পুকুর পাড়ে মজবুত গাইড ওয়াল দিয়ে সিসি ঢালাইয়ে সুন্দর রাস্তা বানালেন। এ কাজটুকু সম্পাদনের কয়েক বছরের মধ্যে তিনি মারা গেলেন এবং ওই কবরস্থানে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে সমাধিস্থ করা হলো মা-বাবার কবরের পাশে। লোকটির মৃত্যুর পূর্বে অথবা পরে বাড়ির লোকজন কবরস্থানের পাশ^বর্তী পুকুরটি মাছ চাষের জন্যে বার্ষিক ৫ হাজার টাকায় ইজারা দিলেন এক ব্যক্তির কাছে। ওই ব্যক্তি তেলাপিয়াসহ এমন কিছু মাছের চাষ করলেন, যে মাছগুলো মাটিখোর হওয়ায় পুকুরের পাড় ভাঙ্গা শুরু হলো, ছোট-বড় গাছপালা উপড়ে পড়তে লাগলো এবং উপরোক্ত ব্যক্তির কবর স্থান অভিমুখী লাখ লাখ টাকার সিসি রাস্তায় ফাটল ধরলো। হাজার হাজার টাকার গাছের হিসেব বাদ দিলেও ভেঙ্গে যাওয়া পুকুর পাড় বাঁধাইয়ে লাখ লাখ টাকার প্রশ্ন এসে দাঁড়ালো।
গত ২ নভেম্বর চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় কিস্তির শিরোনাম হয়েছে ‘মাছের ঘের নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে চান্দ্রা-সেকদী সড়ক ॥ ৩ ওয়ার্ডের ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ’। এ প্রতিবেদনে লিখা হয়, এই রাস্তার সেকদী-মদনেরগাঁও ব্রিজের পশ্চিম অংশ ২০০৪ সালে কার্পেটিং করা হয়। রাস্তাটি যখন ভালো ছিলো, তখন এটি ব্যবহার করতো হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে রাস্তাটির অধিকাংশ অংশ মাছের ঘেরে হেলে পড়েছে। ফলে একটি রিকশাও যাতায়াত করতে পারছে না। চান্দ্রা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি এখন আইলে পরিণত হয়েছে। এখানে অতীতে রাস্তা ছিলো বলে মনে হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত, রাস্তাটির দু পাশে অপরিকল্পিতভাবে ২০টি মাছের ঘের তৈরি করার কারণে রাস্তাটি ভেঙ্গে গেছে। যদি গাইডওয়াল দেওয়া হতো, তাহলে রাস্তাটি ঠিক থাকতো। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা এবং নজরদারি না থাকার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। ফরিদগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবরার আহম্মদ বলেছেন, পুকুর এবং মাছের ঘের রাস্তাটি নষ্ট হবার প্রধান কারণ। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমাদেরকে বলেছে। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।
প্রশ্ন হলো, মাছ চাষীদের কতো টাকার মাছে কতো টাকার রাস্তা খায়। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করা দরকার। যে মাছচাষীর যে ঘেরের কারণে একটি সরকারি রাস্তার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, সে পরিমাণ ক্ষতি ওই মাছচাষীর নিকট থেকে আদায়ের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার কিংবা কেউ রাস্তার পাশে মাছের ঘের করতে চাইলে তাকে গাইডওয়াল নির্মাণের পূর্বশর্ত জুড়ে দেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।